আমরা যারা বই পড়তে ভালোবাসি,প্রত্যেকেরই গল্পের কাহিনী নির্মাণ ,চরিত্র গঠন,লেখার প্রকৃতি বিভিন্ন বিষয়ের নিরিখে এক একজন লেখকের লেখার প্রতি বিশেষ আকৃষ্ট হয়ে পড়ি।সেই লেখকের লেখা সমস্ত বই পড়তেই আমাদের ভীষণ ভালোলাগে।আমার কাছে আমার সেই প্রিয় লেখক দানবিক প্রতিভার অধিকারী কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাই আজ ওনাকে স্মরণ করে আজকের প্রবন্ধ রচনা আমার প্রিয় লেখক।
সূচি তালিকা
ভূমিকা:
বই হল আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সঙ্গী। মানবজীবনের সমস্ত অভিজ্ঞতা , আকাঙ্ক্ষা ও মননশীলতার সাক্ষ্য বহন করে চলেছে লেখকদের রচিত অগণিত গ্রন্থরাজি।আর এই সমস্ত লেখকদের মধ্যে যদি একজন লেখককে প্রিয় হিসেবে বেছে নিতে হয় তাহলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে এড়িয়ে যাওয়ার অবকাশ থাকেনা।রবী ঠাকুরের রচনায় আমি আমার স্বপ্ন,আনন্দ,কল্পনা,বেদনার প্রতিভাস খুঁজে পাই।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত বই গুলি আমি যতবার পড়ি প্রতিবার খুঁজে পাই এক নতুন আস্বাদ।
রবীন্দ্র পরিচয়:
১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখ কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জন্ম গ্রহণ করেন।পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মাতা সারদাদেবী। তাঁর পাঠ্য জীবনের শুরু হয় বাড়িতেই।পরে আর্ধায়ন করেন নর্মাল স্কুল ও ওরিয়েন্টাল সেমিনারিতে।
বিদ্যালয়ের নীরস শিক্ষা ,বাড়ির চার দেওয়ালের কৃত্রিম বন্ধন তাকে বেঁধে রাখতে পারেনি।সতেরো বছর বয়সে বিলাতে ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য পাড়ি দিয়েছিলেন,কিন্তু সে প্রয়াস সার্থক হয়নি। তা সত্ত্বেও বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর শিক্ষা ও জ্ঞানের পরিধি ছিল বিশাল।
রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর সমকাল:
মহৎ সাহিত্য সর্বদা চিরন্তন।কিন্তু সাহিত্য যিনি রচনা করেন তাঁর কাল তাঁর জীবন ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ।বর্তমান সময় ও সমাজ লেখকের রচনায় নানাভাবে প্রতিফলিত হয়।কিন্তু এই বর্তমান সময়ের ঘটনার মধ্যে যিনি চিরন্তন কালের চিত্র অঙ্কন সক্ষম হন তিনিই মহৎ সাহিত্যিক।সেই সময়ের সাথে চিরন্তন এর চিত্র অঙ্কনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন নিপুণ।রবী ঠাকুরের রচনায় আমি এই চিরন্তন এর স্বাদ পাই।
রবীন্দ্র সাহিত্যের স্বরূপ:
আমার প্রিয় লেখক হিসেবে আমি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বেছে নেওয়ার একটা যথার্থ কারণ থাকা দরকার।ভালবাসা জিনিসটা অনেকাংশেই আবেগ প্রসূত।কিন্তু কোনো লেখক বা সাহিত্যিক খুব প্রিয় হয়ে ওঠার কারণ শুধু আবেগ হতে পারে না।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমার চিন্তা ভাবনা ও জীবনবোধ কে আমার ভালোলাগা আর ভালোবাসার সঙ্গে মিলিয়ে আরও উদ্বেজিত করে তুলতে পারেন তাই তিনি আমার কাছে মহৎ স্রষ্ঠা।
ইনি মূলত কবি – বিশ্বকবি,কবিগুরু নানান নামে অভিহিত।কবিতা ছাড়াও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমার কাছে এক মহৎ ঔপন্যাসিক।নানান বিষ্ময়কর ছোট গল্পের রচয়িতা ইনি।সাহিত্য পাঠের জন্য প্রয়োজন একাগ্রতা।একাগ্র মনোযোগের সঙ্গে রবী ঠাকুরের কয়েকটি উপন্যাস ও ছোট গল্প পড়লে তা যেকোনো মুহূর্তে পাঠকের মনকে উদ্ভাসিত করে তুলতে পারে।
উপন্যাস:
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাধারে কবি,ঔপন্যাসিক, নাট্যকার,ছোট গল্পকার ও প্রবন্ধকার।ইনি প্রথম উপন্যাস “করুণা” লিখেছিলেন মাত্র ষোলো বছর বয়সে।বাইশ বছর বয়সে লেখেন “বউ ঠাকুরাণীর হাট”।এই উপন্যাসটি প্রতাপাদিত্যের কাহিনি অবলম্বনে রচিত।সামাজিক উপন্যাস গুলি হল – “যোগাযোগ”, “চোখের বালি”, “নৌকো ডুবি” ইত্যাদি।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শুধু গল্পই বলেন না , চরিত্র গঠনে জড়িয়ে থাকে এক গভীর জীবন দর্শন।জীবনে আমাকে মানসিক ভাবে পরিণত হতে বেশ সাহায্য করেছে এনার রচিত বেশ কয়েকটি ক্ষুদ্র উপন্যাস ,যেমন – “নষ্ট নীড়”, “চতুরঙ্গ”, ” দুই বোন” ইত্যাদি।”শেষের কবিতা” তাঁর অদ্বিতীয় উপন্যাস।
ছোট গল্প:
এনার লেখা ছোট গল্প গুলো আমার সবচাইতে বেশি ভালো লাগে।এরকম গল্পের স্বাদ শুধু আমার নয় যেকেনো পাঠকের হৃদয়কে স্পর্শ করতে পারে।ইনি শতাধিক ছোট গল্প লিখেছেন। “কাবুলিওয়ালা” , “দেনা পাওনা”, ” খাতা “,”কঙ্কাল”, “পোস্ট মাস্টার”, “গুপ্তধন”, “বলাই”, “অতিথি” প্রভৃতি ছোট গল্প গুলি শুধুমাত্র বাংলা সাহিত্যের নয়,বিশ্ব সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ।রবী ঠাকুর রচিত ছোটগল্প গুলির বেশির ভাগ গুলোই আমার পড়া এবং ভীষণ প্রিয়।”ইচ্ছে পূরণ” গল্পের সরসতা মিশে রয়েছে জীবনবোধের সঙ্গে।
নাটক ও প্রবন্ধ:
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা নাটক গুলি মূলত গীতিপ্রধান ও কাব্যধর্মী। রয়েছে নৃত্যনাট্য, রূপক সহ হাস্যরস প্রধান কৌতুক নাটকও।এনার রচিত নাটক গুলির মধ্যে “বিসর্জন” ও “লক্ষ্মীর পরীক্ষা” আমার ভীষণ প্রিয়।”ডাকঘর” এর জন্যও আমার মনে রয়েছে এক আলাদা জায়গা।এই নাটক যে আমার মনকে কোথায় নিয়ে যায় আজও বুঝিনা।
“মুক্ত ধারা”র অভিজিৎ কে আমি নিজের মধ্যে খুঁজে পাই।রবীন্দ্র গদ্য তথা প্রবন্ধ সাহিত্য বিশ্ব বাংলার সাহিত্যের অন্যতম সম্পদ। উল্লেখযোগ্য চিঠিপত্র,প্রবন্ধ ও ভ্রমণবিষয়ক গ্রন্থ গুলি হলো – “সাহিত্য” , “ছেলে বেলা” , “জীবন স্মৃতি” , “সাহিত্যের পথে” , “রাশিয়ার চিঠি” , “জাপান যাত্রী” ইত্যাদি।
উপসংহার:
রবীন্দ্র রচনাবলী মহা সমুদ্রের মতো বিশাল ও গভীর। যতদিন বাঙালি জাতি, ও তার ভাষা সাহিত্য থাকবে, ততোদিন রবীন্দ্র সাহিত্য অক্ষয় ও অমর থাকবে।পরিণত জীবনে তাঁর লেখা যতই পড়বো ততো বেশি করে রসাস্বাদন অনুভব করবো।ইনি আমাদের বাঙালির পরম সৌভাগ্য ও অতিগৌরবের মহামানব।।
আমার প্রিয় লেখক প্রবন্ধ রচনাটি পড়ে আপনার কেমন লাগলো আপনার ব্যাক্তিগত মতামত কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানান।আমরা সব সময় সচেষ্ট থাকি সবার থেকে সুন্দর ও আপনার মনের মতো করে একটি রচনা তুলে ধরার।
এখানে নেই এমন রচনা পাওয়ার জন্য রচনাটির নাম কমেন্ট করে জানান।দ্রুততার সঙ্গে আমরা উক্ত রচনাটি যুক্ত করার চেষ্টা করবো।সম্পূর্ণ রচনাটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আর পড়ুন:
আমার প্রিয় বই রচনা
আমার প্রিয় কবি
উল্লেখ: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – উইকিপিডিয়া
জগদীশচন্দ্র বসুর রচনা টা দিলে খুব ভালো হয়।