আমার প্রিয় কবি (জীবনানন্দ দাশ) Amar Priyo Kobi Essay in Bengali [PDF]

banglarachana.com এ আপনাকে স্বাগত জানাই।পঞ্চম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বাংলা সিলেবাসের সমস্ত ব্যাকরণ গুরুত্বপূর্ণ রচনা,ভাবসম্প্রসারণ,পত্র লিখন PDF সহকারে পাওয়ার জন্য আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন।

নিয়মিত নতুন নতুন লেখা প্রকাশিত হয় এখানে।এখানে নেই এমন রচনা পাওয়ার জন্য রচনার জন্য আমাদের কমেন্ট করে জানান।আজকের উপস্থাপন “আমার প্রিয় কবি”/”তোমার প্রিয় কবি” রচনা। (এখানে আমার প্রিয় কবি হিসেবে আমি জীবনানন্দ দাশ কে বেছে নিয়েছি।রচনা পয়েন্ট অনুসরণ করে আপনি আপনার প্রিয় কবি হিসেবে অন্য কোনো কবিকে নিয়েও উক্ত রচনাটি লিখতে পারবেন।)

তোমার প্রিয় কবি-জীবনানন্দ দাশ

ভূমিকা:

কবিতা কার না ভালো লাগে? ছোটো বেলায় মা ঠাকুমার মুখে ছড়া শুনে কোন শিশু না অভিভূত হয়।শৈশবে মায়ের মুখে ছড়া শুনে ছোটো থেকেই আমার কবিতার প্রতি ভালোবাসা।আমি একপ্রকার কবিতার পরিবেশেই বড়ো হয়ে উঠেছি।যখন আমি এক্কেবারে ছোট তখন মায়ের মিষ্টি সুরে শুনতাম সুকুমার রায় ও যোগীন সরকারের ছড়া।একটু বড়ো হয়ে শুনেছি বাবার উদাত্ত আবৃত্তি।

পরিচিত হয়েছি কাজী নজরুল ইসলাম,রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,জীবনানন্দ দাশ,প্রমুখ কবিদের সাথে।সকল কবিতার মানে বুঝতে পারতাম না কিন্তু শব্দে ধ্বনি আমার মনে গভীর ভাবের সঞ্চার করে দিত।অনেক অনেক কবির কবিতা শুনেছি কিন্তু সবাইকে ছাড়িয়ে কবে জীবনানন্দ দাশ আমার প্রিয় কবি হয়ে উঠেছেন তা ঠিক বলতে পারবোনা।জীবনানন্দের কবিতা আমার চেতনায় এক অন্য রকম স্বাদ এনে দিয়েছে।যত বার জীবনানন্দের লেখা কবিতা পড়ি ততই কবি হিসেবে উনি আমার প্রিয় হয়ে উঠেন।

কবির জীবন:

প্রিয় কবির কবিতার কথা বলতে গেলে তাঁর জীবন কথাকে এড়িয়ে যাওয়া যায় না।
১৮৯৯ সালের ১৮ ই ফেব্রুয়ারি বর্তমান বাংলাদেশের বরিশাল শহরে জীবনানন্দ দাশ জন্ম গ্রহণ করেন। মাতা কুসুমকুমারী দেবী খুব ভালো কবিতা লিখতেন।পূর্ব বাংলার নদীনালা,মাঠ ঘাট,গাছপালা,পশুপাখি, কবির চেতনায় এক চিরস্থায়ী স্থান অর্জন করে নিয়েছিল।

ভোরে ঘুম থেকে উঠেই পিতা সত্যানন্দ দাশগুপ্ত এর কণ্ঠে উপনিষদ আবৃত্তি ও মায়ের গলায় গান শুনতেন।জন্ম থেকেই এক সাহিত্য চর্চার পরিবেশে বড় হয়ে উঠেছিলেন কবি জীবনানন্দ।বিদ্যালয়ে পড়াশোনা চলাকালীনই জীবনানন্দ বাংলা ও ইংরেজি ভাষাতে লেখা শুরু করেন।সে সেসময় তাঁর ছবি আঁকার উপরও ঝোঁক ছিল।

তিনি ছিলেন আত্মমগ্ন, নিঃসঙ্গ ও বেশ লাজুক স্বভাবের মানুষ।স্পর্শ কাতরতা ও বিষণ্ণতার সঙ্গে মিশে ছিল প্রকৃতি প্রেম ও গভীর প্রজ্ঞা।এনার কবিতায় বারবার উঠে এসেছে মানুষের বেদনার কথাও।জীবনানন্দ দাশ ছিলেন ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক।জন্মসূত্রে এনার পদবি “দাশগুপ্ত” হলেও তিরিশের দশকের শুরুতে তিনি “গুপ্ত” ত্যাগ করে শুধুমাত্র দাশ লেখা শুরু করেন।১৮৫৪ সালে ১৪ ই অক্টোবর অন্যমনস্ক কবি ট্রাম দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন।২২ ই অক্টোবর তাঁর মহাপ্রয়াণ ঘটে।

কবিতার বৈশিষ্ট্য:

ছোটবেলা থেকেই সম্ভবত মা কুসুমকুমারী দেবীর প্রভাবেই পদ্য লিখতে শুরু করেন কবি জীবনানন্দ দাশ।১৯১৯ সালে তিনি “বর্ষার আহবান” নামে একটি কবিতা লেখেন যা তাঁর লেখা প্রথম প্রকাশিত কবিতা।

যৌবনের প্রারম্ভেই জীবনানন্দের কবিপ্রতিভা বিকশিত হতে শুরু করে।১৯২৫ সালে জুন মাসে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ মৃত্যু বরণ করলে তাঁর স্মরণে “দেশবন্ধুর প্রয়ানে” নামক এক কবিতা লেখেন জীবনানন্দ দাশ।যা সেই সময় বঙ্গবাণী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।পরবর্তীতে এই কবিতাটি এনার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ঝরা পালক'(১৯২৭) এ স্থান অর্জন করে নেয়।এরপর ধূসর পাণ্ডুলিপি প্রকাশিত হয় ১৯৩৬ সালে।

১৯৫২ সালে “বনলতা সেন” কাব্যগ্রন্থটির বর্তমান সংস্করণ বের হয়।”বনলতা সেন” কাব্যগ্রন্থটিই জীবনানন্দ দাশ কে বাংলা কবিতার জগতে চিরস্থায়ী প্রতিষ্ঠা করেছিল।এরপর প্রকাশিত হয় “মহা পৃথিবী” ও “সাতটি তারার তিমির”।১৯৫৭ সালে তাঁর মৃত্যুর পর “রূপসী বাংলা” কাব্যগ্রন্থ মুদ্রিত হয়।ছোটবেলায় মায়ের মুখেই শুনেছিলাম “রূপসী বাংলা”র কবিতা গুলি।

বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি,তাই আমি পৃথিবীর রূপ
খুঁজিতে যাই না আর; অন্ধকারে জেগে উঠে ডুমুরের গাছে
চেয়ে দেখি ছাতার মতন বড়ো পাতাটির নিচে বসে আছে
ভোরের দোয়েলপাখি— চারিদিকে চেয়ে দেখি পল্লবের স্তূপ
জাম—বট—কাঠালের—হিজলের—অশখের করে আছে চুপ;
ফণীমনসার ঝোপে শটিবনে তাহাদের ছায়া পড়িয়াছে;
মধুকর ডিঙা থেকে না জানি সে কবে চাঁদ চম্পার কাছে
এমনই হিজল — বট — তমালের নীল ছায়া বাংলার অপরূপ রূপ।

আর কোনো কবি এভাবে বাংলার অপরূপ রূপকে বর্ণনা করেছেন বলে মনে হয় না।মায়ের মুখে কবিতাটি শুনে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম।এখনও যতবার এই কবিতা টি পড়ি আমাদের বাংলার অপরূপ রূপকে আমি নতুন ভাবে খুঁজে পাই।কবি জীবনানন্দ দাশের চিত্রকল্প আমাকে ভীষণ ভাবে মুগ্ধ করে।অসম্পূর্ণ বাক্য বন্ধের মধ্যে তিনি তুলে নিয়ে আসেন চেতনার গভীর অনুভূতিশীল তালে।এরই সঙ্গে জড়িয়ে থাকে এক গভীর বিষণ্ণতার বোধ।

“সেই দিন এই মাঠ স্তব্ধ হবে নাকো জানি
এই নদী নক্ষত্রের তলে
সেদিনো দেখিবে স্বপ্ন-
সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে!
আমি চ’লে যাব ব’লে
চালতা ফুল কি আর ভিজিবে না শিশিরের জলে
নরম গন্ধের ঢেউয়ে?
লক্ষ্মীপেঁচা গান গাবে নাকি তার লক্ষ্মীটির তরে?
সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে!”

প্রিয় কবি হওয়ার কারণ:

জীবনানন্দ দাশের কবিতায় শব্দ এবং শব্দ চিত্র আমার অনুভূতির জগৎকে এক নতুন রসে আপ্লুত করেছে।দেশপ্রেমের সঙ্গে ব্যাক্তি মানুষের হৃদয়ের আবেগ ও করুন রসকে সমন্বিত করে তিনি তাকে সার্বজনীন করে তুলেছেন।এনার লেখা “বনলতা সেন” সম্পূর্ণ ভিন্ন স্বাদের এক কবিতা।

অতীত , বর্তমান ও ভবিষ্যৎ এক ধূসর জগতের সঙ্গে মিশে যায়।একইসাথে বিষণ্ণতার সঙ্গে মিশে যায় মানব প্রেমও।নায়িকা হয়ে ওঠে সর্বকালের।
“চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা, মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য।”এই ভাবে আর কোনো কবি বলতে পারেন “সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল।”শেষ পর্যন্ত “থাকে শুধু অন্ধকার,মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেনের।”

উপসংহার:

সাধু ভাষাকে কবি অনায়াসে মিশিয়ে দিতে পারেন চলিত ভাষার সঙ্গে।জীবনানন্দ দাশ তাঁর লেখা কবিতায় এমন এক পরিবেশ রচনা করে দেন যার অভিনবত্ব আমাকে ভীষণ ভাবে মুগ্ধ করে দেয়।এনার লেখা কবিতা গুলোতে আমি নিজেকে বারেবারে নতুন করে খুঁজে পাই। সবশেষে আমার প্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশ কে আমি শ্রদ্ধা ও প্রণাম জানাই।


“আমার প্রিয় কবি”/”তোমার প্রিয় কবি” রচনাটি পড়ে আপনার কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।এই রচনাটি অনুসরণ করে একজন আধুনিক বাঙালি কবি হিসেবে জীবনানন্দ দাশ কে কেন্দ্র করে “একজন আধুনিক বাঙালি কবি” রচনা খুব সহজেই লেখা যায়।এরকম আরও নতুন নতুন প্রবন্ধ রচনা পাওয়ার জন্য আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন।সম্পূর্ণ রচনাটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন