আমাদের দেশ (ভারতবর্ষ) রচনা [সঙ্গে PDF]

“ধনধান্য পুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা, তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা” – সকল দেশের সেরা এই দেশটি হল আমাদের জন্মভূমি ভারতবর্ষ। আমাদের দেশের প্রতিটি শিশুর দেশ সম্পর্কে সঠিক শিক্ষা দেওয়া ভীষণ প্রয়োজন। “আমার দেশ” বা “আমাদের দেশ” ছোটদের বাংলা রচনা হিসেবে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তাই আমাদের আজকের বিষয় ছোটদের জন্য আমার দেশ বা আমাদের দেশ (ভারতবর্ষ) রচনা।

ভারতের জাতীয় পতাকার ছবি

ভূমিকা:

দেশ আমাদের সকলের কাছে এক পরম আবেগের বিষয়। নিজের দেশকে আমরা মাতৃভূমি বা পিতৃভূমি বলে থাকি। এই মাতৃভূমি বা পিতৃভূমি আমাদের কাছে সত্যিই নিজেদের মা-বাবার সঙ্গে তুলনীয়। সেজন্য দেশকে আমরা পরম শ্রদ্ধা করে থাকি। এই পৃথিবীতে বর্তমানে মোট ১৯৫ টি দেশ রয়েছে।

একটি দেশ তার নির্দিষ্ট সীমানা এবং নির্দিষ্ট ভূখন্ড এর মধ্যে সীমাবদ্ধ। কিন্তু প্রত্যেকটি মানুষের কাছে দেশ বলতে শুধুমাত্র কোন একটি ভূখন্ড নয়; দেশ হল মানুষের জন্মভূমি, তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা সকল প্রকার আবেগ এবং ভালোবাসা। আমাদের দেশের নাম ভারতবর্ষ। আজকের একবিংশ শতাব্দীতে ভারতবর্ষ পৃথিবীতে একটি অন্যতম উল্লেখযোগ্য নাম। 

আমাদের দেশের অবস্থান:

আমাদের দেশ ভারতবর্ষ পৃথিবীর বুকে বৃহত্তম মহাদেশ এশিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত। ভূ প্রাকৃতিক বৈচিত্র সমৃদ্ধ এই দেশটির উত্তর-পূর্বে রয়েছে হিমালয় পর্বত শ্রেণী, এবং উত্তর-পশ্চিমে কারাকোরাম এবং পিরপাঞ্জাল এর মত বৃহৎ পর্বতশ্রেণী, দক্ষিণ-পূর্বে বঙ্গোপসাগর, পশ্চিমে আরব সাগর আর সবচেয়ে দক্ষিণের হয়েছে সুবিশাল ভারত মহাসাগর।

এই দেশের কয়েকটি প্রধান নদী হল গঙ্গা, যমুনা, সিন্ধু, ব্রহ্মপুত্র ইত্যাদি। ভারতবর্ষের উত্তরপূর্বে অবস্থিত চীন, নেপাল, ভুটান; দক্ষিনে শ্রীলংকা, পূর্বে বাংলাদেশ ও মায়ানমার এবং পশ্চিমে পাকিস্তান। তাছাড়া পৃথিবীর বুকে আশ্চর্যজনক ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ভারতবর্ষ একটি উপমহাদেশ হিসেবেও পরিচিতি লাভ করে থাকে।

 ইতিহাস:

পৃথিবীর বুকে ভারতবর্ষের এক সুপ্রাচীন এবং গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে। এ-বিশ্বে প্রাচীনকাল থেকে যত সভ্যতা গড়ে উঠেছে তারমধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য হলো ভারতীয় সভ্যতা এবং সংস্কৃতি। খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৫০০০ বছর আগে থেকে ভারতবর্ষের বুকে মানুষ এক অন্যতম উন্নত সংস্কৃতি গড়ে তুলেছিল।

সিন্ধু নদী কে ভিত্তি করে এর তীরে গড়ে ওঠা এই সভ্যতা কে আমরা সিন্ধু সভ্যতা বা হরপ্পা সংস্কৃতি বলে চিনি। তারপর থেকে কালের নিয়মে বহু ছোট-বড় সংস্কৃতি  ভারতবর্ষের সভ্যতার স্রোতে বিলীন হয়ে গিয়েছে। এক সময় এই দেশের বুকে পত্তন ঘটেছে মহান বৈদিক সভ্যতার; আবার তারপরে ধীরে ধীরে পরবর্তী বৈদিক কালে উত্থান ঘটেছে মৌর্য গুপ্ত কুষাণদের মত বৃহৎ নৃপতিদের।

এরপরে ভারতবর্ষের সভ্যতার টানে এসেছে মধ্য এশিয়ার মুসলমানেরা। তারপর এসেছে ব্রিটিশ। পৃথিবীর সকল অংশের সকল প্রকারের মানুষের মিলনে আমাদের ভারতবর্ষ হয়ে উঠেছে মহান।

এই দেশের ঐতিহ্য:

আমাদের দেশের যেমন এক সুপ্রাচীন ইতিহাস রয়েছে, তেমনি রয়েছে সেই প্রাচীনকাল থেকে বয়ে আনা এক মহান ঐতিহ্য। এক্ষেত্রে প্রথমেই উল্লেখ্য হলো পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ তিনটি ধর্মের জন্মস্থল ভারতবর্ষ। এগুলি হল হিন্দু সংস্কৃতি এবং বৌদ্ধ ও জৈন ধর্ম। ভারতবর্ষ থেকে উৎপত্তি লাভ করেই বৌদ্ধ ও জৈন ধর্ম সারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।

বৌদ্ধ ধর্মের শান্তির বাণী কথা পৃথিবীজুড়ে সুবিদিত। এই পবিত্র দেশ থেকেই ভগবান গৌতম বুদ্ধ তার শান্তির বাণী প্রচার করেছিলেন। এগুলি ছাড়াও ভারতবর্ষে গড়ে উঠেছে একের পর এক অত্যন্ত সমৃদ্ধ দার্শনিক মতবাদ, যেগুলি আধুনিক যুগের পৃথিবীর বহু মানুষকে আজও অবাক করে। তাছাড়া প্রাচীন যুগে ভারতবর্ষে ছিল জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার অন্যতম পীঠস্থান। ভারতবর্ষের প্রাচীন গণিতজ্ঞ আর্যভট্ট গণিতের শূন্যের আবিষ্কর্তা। 

বৈচিত্র্যময় ভারত:

এই দেশ নানা প্রকার বৈচিত্রে ভরপুর। একদিকে এই দেশটিতে যেমন রয়েছে হিমালয়ের মতো সুউচ্চ পর্বতশ্রেণী, তেমনি রয়েছে সাগর, উপসাগর, মহাসাগর। ভারতবর্ষের উত্তর পূর্বে যেমন রয়েছে চেরাপুঞ্জির মত পৃথিবীর সবথেকে আর্দ্র অঞ্চল, তেমনি পশ্চিমে রয়েছে রাজস্থানের উষ্ণ ও শুষ্ক থর মরুভূমি।

এইদেশের দক্ষিণ অংশে যেমন অবস্থিত মালভূমি তেমনি উত্তরে রয়েছে উচ্চভূমি, আবার পূর্বে সমভূমি। ব্যাপক ভূ-প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের কারণে ভারতবর্ষকে পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা বিশ্বের এক ক্ষুদ্র সংস্করণ বলেও অভিহিত করে থাকেন।

ভূ প্রাকৃতিক বৈচিত্র মতন মানুষ তথা তাদের খাদ্য, পোশাক-আশাক, ভাষা, দৈনিক জীবনযাপনেও ব্যাপক পার্থক্য গোটা দেশজুড়ে বর্তমান। এত বৈচিত্র সত্ত্বেও ভারতবর্ষের প্রতিটি কোণার প্রত্যেক মানুষ নিজেকে ভারতবাসী বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। এইখানেই ভারতবর্ষের বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য লক্ষ্য করা যায়। 

পৃথিবীর বুকে আজকের ভারতবর্ষ:

বিশ্বের দরবারে আজ ভারত একটি অন্যতম উল্লেখযোগ্য নাম। দীর্ঘ ১৯০ বছর ঔপনিবেশিকতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ থাকা সত্বেও, স্বাধীনতার মাত্র 75 বছরের মধ্যে ভারত নিজেকে যে উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে এককথায় তা অভাবনীয়। পৃথিবীজুড়ে প্রত্যেকটি আধুনিক জ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে আজ ভারতীয়রা উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।

মহাকাশ গবেষণা থেকে শুরু করে চিকিৎসা তথা প্রযুক্তিবিদ্যা সকল ক্ষেত্রে ভারতের জয়যাত্রা অব্যাহত। বিশাল জনসংখ্যার দরুন আজকের ভারতবর্ষ হল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় খোলা বাজার। এই বাজারের উপর ভিত্তি করে একের পর এক বৃহৎ শিল্প ভারতবর্ষে বিকাশ লাভ করেছে।

উপসংহার:

সেই সুপ্রাচীন কাল থেকেই ভারত পৃথিবীতে শান্তি, সমৃদ্ধি, জ্ঞান চর্চা এবং আন্তর্জাতিকতার এক মূর্ত প্রতীক। নিজের সেই মহান ঐতিহ্যকে আমাদের দেশ আজও সগৌরবে বহন করে নিয়ে চলেছে।

আধুনিক বিশ্বে আধুনিক মননের প্রতিটি ক্ষেত্রে ভারত পৃথিবীতে দিশা দেখাচ্ছে। এমন একটি দেশে জন্ম লাভ করে আমি সত্যিই গর্বিত। সময়ের সাথে সাথে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারত যে উচ্চ আসন লাভ করছে তাতে ভারতবর্ষের মানুষের “ভারত আবার জগত সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে”- এই স্বপ্ন ধীরে ধীরে সার্থকতার পথে এগিয়ে যাচ্ছে।


প্রিয় ছোট্ট বন্ধুরা আমাদের দেশ (ভারতবর্ষ) প্রবন্ধ রচনাটি পড়ে তোমাদের কেমন লাগলো আমাদের কমেন্ট করে জানাও। এরকম আরও রচনা পড়ার জন্য আমাদের সাথে যুক্ত থাকো। ভালো থেকো সুস্থ থেকো আর পড়তে থাকো banglarachana.com.

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন