অনলাইনে বাংলা প্রবন্ধ রচনার এক অন্যতম ঠিকানা banglarachana.com এ আপনাকে স্বাগত জানাই।পঞ্চম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বাংলা সিলেবাসের সমস্ত ব্যাকরণ, গুরুত্বপূর্ণ রচনা,নমুনা সহকারে পত্রলিখন pdf সহ পাওয়ার জন্য আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন।নিয়মিত নতুন নতুন লেখা আপডেট করা হয়।
এখানে নেই এমন রচনা পাওয়ার জন্য রচনার নাম আমাদের কমেন্ট করে জানান। banglarachana.com এর পক্ষ থেকে আজকের নতুন উপস্থাপন -“বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ” রচনা।
সূচি তালিকা
ভূমিকা:
মানবজীবনে যেকোনো সাফল্যের অগ্রগতিকে আশীর্বাদ বলে গণ্য করা যায়।বহুকাল আগে মানব সভ্যতার আদিযুগে মানুষ ছিল প্রকৃতির দাস।থাকার মতো ঘর ছিলনা।পশু মাংস ফলমূল ছাড়া আর কোনো আহার্য ছিলনা।আত্মরক্ষার অস্ত্র ছিলনা।আগুন জ্বালানোর কৌশল ছিল অজানা।তখন মানুষের কাছে এই বিশাল বিশ্বপ্রকৃতি ছিল রহস্যে ভরা।সেই তখন থেকেই শুরু হয়েছিল মানুষের প্রকৃতিকে জয় করার সাধনা।
আজ মানুষ বিস্ববিজয়ী।মানুষের সুখ স্বাচ্ছন্দ্য সমৃদ্ধি সাধনে,তার বৃহত্তর কল্যাণ কর্মে নিরন্তর নিরলস সেবায় অতুলনীয় নজির স্থাপন করেছে বিজ্ঞান।কল্যাণময়ী বিজ্ঞানের এই বিপুল দান সত্বেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরমাণু বোমার দূর্ধর্ষ ধ্বংসলীলার দিকে তাকিয়ে কল্যাণকামী মানুষের মনে বার বার একটাই প্রশ্ন জেগে উঠেছে “বিজ্ঞান অভিশাপ না আশীর্বাদ?”
মানব কল্যাণে বিজ্ঞান:
বিজ্ঞান সাধনার মুলেই রয়েছে মানবকল্যাণ।বিজ্ঞান বলে বলীয়ান মানুষ দুরন্ত নদীর স্রোতকে বশীভূত করে তার অমৃত প্রবাহে উষর মরুকে করেছে শস্য শ্যামলা।সুবিশাল সমুদ্র পাড়ি দিয়ে পৃথিবীর দূরতম ঘাটে নামিয়ে দিয়েছে পণ্য সম্ভার।তার চিন্তা ভাবনা,কামনা বাসনা,প্রয়াস প্রচেষ্টা আজ কেবল মর্তসীমার গণ্ডিতেই আবদ্ধ নয়,মহাকাশের নীল সীমান্ত অতিক্রম করে গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে প্রসারিত।
কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞানের সহযোগিতায় সফল হয়েছে সবুজ বিপ্লব।শিল্পক্ষেত্রে যন্ত্র দানবের আসুরিক শক্তির প্রয়োগ সৃষ্টি করেছে অতুল বিভব।কঠিন কঠিন অসুখ সব প্রায় সকল সংক্রামক ব্যাধির নিরাময় সম্ভব হয়েছে।ইন্টারনেট ও দূরদর্শন দূরকে করেছে নিকট, অদৃশ্য কে করেছে দৃশ্যমান।এমন কল্যাণমুখী বিজ্ঞানকে আমরা কোন সংশয়ের সম্মুখে দাঁড়িয়ে অভিশাপ বলে চিহ্নিত করবো?
বিজ্ঞানকে অভিশাপ বলার কারণ:
বিজ্ঞান যখন মানব সভ্যতার সুস্থ জীবন যাত্রার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়, জীবনের শান্তিকে নষ্ট করে নিয়ে আসে সংঘাত আর মৃত্যু,সুস্থ পরিবেশকে বিষাক্ত করে তোলে।একমাত্র তখনই বিজ্ঞানকে অভিশাপ বলে চিহ্নিত করা যায়।
যেহুতু বিজ্ঞান কোনো সচেতন বস্তু নয় তাই নিজের ইচ্ছে মতো কিছু করবার ক্ষমতা নেই তার।বিজ্ঞানকে আমরা যেভাবে ব্যাবহার করবো ঠিক সেই মতোই ফল পাবো।সবকিছুরই ভালো মন্দ দুটো দিক থাকে,বিজ্ঞান এর ব্যতিক্রম কিছু নয়।
বিজ্ঞানের ভালো অথবা মন্দ,অর্থাৎ বিজ্ঞান আমাদের জন্য আশীর্বাদ না অভিশাপ সবটা নির্ভর করে মানুষ বিজ্ঞানকে কিভাবে প্রয়োগ করছে তার উপর।
বিজ্ঞান ও পরিবেশ দূষণ:
বিজ্ঞানের অগ্রগতি মানুষের জীবনে সুখ স্বাচ্ছন্দ্য কে অনেকাংশে বাড়িয়ে দিলেও বিজ্ঞানের অধিকাংশ ব্যাবহার প্রকৃতির সৌন্দর্য ও ভারসাম্যকে ক্রমশ বিনষ্ট করে চলেছে।ভবিষ্যতে বিজ্ঞানের আরও অগ্রগতি ধ্বংসাত্মক বিপর্যয়ের কারণ হয়েও দাঁড়াতে পারে।
অসংখ্য যানবাহন সহ কলকারখানা থেকে নির্গত ধোয়ার থেকে মুক্ত বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে কার্বন ডাই অক্সাইড ,কার্বন মনোক্সাইড এর মতো দূষিত গ্যাস।অতিরিক্ত রাসায়নিক সারের ব্যাবহার জল দূষণ করছে।বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান বাতাসে মিশে পৃথিবীর ওজন স্তরকে ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছে,যার ফলস্বরূপ পৃথিবীর বুকে এসে পড়ছে ভয়ংকর অতিবেগুনি রশ্মি যা মানব সভ্যতাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
পলিথিনের ব্যবহার মাটিকে দূষণ করছে।প্রতিদিনের এই বিশাল অংশের দূষণের দিকে নজর দিলে বিজ্ঞানকে অভিশাপ বলে চিহ্নিত করা যেতেই পারে।
উপসংহার:
বিজ্ঞান হল মানবজাতির হাতিয়ার।হাতিয়ার ব্যাবহার করে ভালো বা খারাপ যেকোনো কাজই করা যায়।আসলে এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে প্রয়োগকর্তার মনোভাবের উপর।যেমন পরমাণু শক্তি ধ্বংসের কাজে না লাগিয়ে তা মানবকল্যাণে নিয়োজিত হতে পারে।
তাই বিজ্ঞানের উপর অহেতুক দোষ চাপানো ঠিক নয়।সবার আগে প্রয়োজন মানুষের মনোভাবের পরিবর্তন।যতদিন পর্যন্ত না মানুষের খারাপ মনোভাব পরিবর্তিত করে বিজ্ঞান বলের অসৎ ব্যাবহার বন্ধ করে বিজ্ঞানকে মঙ্গলময় দেবতার আসনে প্রতিষ্ঠিত করা যাবে,ততদিন বিজ্ঞান সম্পর্কে এই প্রশ্নটি থেকেই যাবে যে বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ?
“বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ” রচনাটি পড়ে আপনার কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।এখানে নেই এমন রচনা পাওয়ার জন্য রচনার নাম আমাদের কমেন্ট করে জানান।পরবর্তীতে এরকম আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ রচনা পাওয়ার জন্য আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন। ধন্যবাদ।।