রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন “If you want to know India read Vivekanand”. স্বামী বিবেকানন্দ ভারতবর্ষের এক অন্যতম বীর মহাপুরুষ। তাঁর চিন্তাধারা ও মহৎ কার্য প্রত্যেক ভারতবাসীর গর্বের বিষয়।আজ তাঁকে স্মরণ করেই আমাদের আলোচ্য বিষয় স্বামী বিবেকানন্দ রচনা।
“তাঁর নিজের মধ্যে অসীম শক্তির যে উৎস ছিল তা সবসময় প্রকাশের পথ খুঁজত সমস্ত জীবন এ অদম্য শক্তি তাকে পৃথিবীময় তাড়িয়ে নিয়ে ফিরেছে।আর যেখানেই তিনি গিয়েছেন সেখানেই মানুষ তাঁর মধ্যে এই প্রাণের প্রবাহ দেখে নিজেরাও উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে।”
– সত্যেন্দ্রনাথ বসু।।
সূচি তালিকা
ভূমিকা:
একটি জাতির যখন খারাপ অবস্থা আসে,তখন সেই অবস্থা থেকে জাতিকে জাগরিত করার জন্য মহাপুরুষের আবির্ভাব ঘটে।পৃথিবীর সব দেশেই এমন ঘটনা দেখা গিয়েছে।ঊনবিংশ শতাব্দীতে বিবেকানন্দ আবির্ভূত হয়ে আপামর জনসাধারণের দরিদ্র, অশিক্ষা, কুসংস্কারে আচ্ছন্ন ব্যক্তিত্বকে জাগিয়ে তুলেছিলেন।
বিবেকানন্দের আবির্ভাব বাঙালি জাতির জীবনে দিয়েছিল এক নতুন অনুপ্রেরণা।তিনি আজ আমাদের মধ্যে না থাকলেও আমাদের চিন্তা চেতনায় ,ভাব ভাবনায়,স্মরণে মননে উজ্জ্বল হয়ে আছেন।
বাল্যকাল ও শিক্ষাজীবন:
১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে ১২ জানুয়ারী বিবেকানন্দ উত্তর কলকাতার সিমলা স্ট্রীটে বিখ্যাত দত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা বিশ্বনাথ দত্ত পেশায় উকিল ছিলেন।এবং মাতা ছিলেন ধর্মপ্রানা ভুবনেশ্বরী দেবী।মায়ের দেওয়া নাম ছিল বীরেশ্বর আর সবাই ডাকত ‘বিলে’ নামে।
বাল্যকালে বিলে ছিল দুরন্ত ও সাহসী,সব বিষয়ে ছিল তার অদম্য কৌতূহল।এনার আসল নাম নরেন্দ্রনাথ দত্ত।পরবর্তী কালে রামকৃষ্ণ দেবের শিষ্যত্ব গ্রহন করার পর তাঁর সন্ন্যাস জীবনের নাম হয় স্বামী বিবেকানন্দ।তিনি উত্তর কলকাতার মেট্রোপলিটন স্কুল থেকে প্রবেশিকা এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এ পাশ করেন।
ভারত ভ্রমণ ও ভারত গঠন:
রামকৃষ্ণ দেবের শিষ্যত্ব ও সন্ন্যাস গ্রহণ করার পর তিনি সারা ভারত ভ্রমণ করতে বেরিয়ে পড়েন।বিভিন্ন স্থানে তিনি ধর্ম সম্পর্কে তাঁর ব্যাক্তিগত অভিমত প্রকাশ করেন।হিন্দু ধর্মের নানান গোড়ামি ও কুসংস্কার অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন।
তিনি উপলদ্ধি করেছিলেন “মানুষের মধ্যেই ভগবান বাস করেন” তাই তিনি বলেন _”জীবে প্রেম করে যে জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর”।তাঁর ধর্ম সাধনার মূল কথা ছিল মানবমুক্তির সাধনা।স্বদেশ বাসীকে তিনি গভীর মমতার সঙ্গে ভালোবেসেছিলেন।দেশবাসী তখন দারিদ্র্য পীড়িত,পরাধীনতার অন্ধকারে নিমজ্জিত।
বিবেকানন্দ এই ভারতবর্ষকে পুনরুজ্জীবিত করতে চেয়েছিলেন মানবধর্মের নানান বাণী দিয়ে।মূর্খ ,অজ্ঞ,দরিদ্র,মুচি,মেথর সবাইকে তিনি এক রক্তের বন্ধনে আবদ্ধ করতে চেয়েছিলেন।জাতিভেদ প্রথাকে তীব্র ঘৃণা করতেন তিনি তাই জাতিভেদ প্রথা দূরীকরণে সচেষ্ট হন।
শিকাগো বক্তৃতা ও বিদেশ ভ্রমন:
১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে স্বামী বিবেকানন্দ ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে আমেরিকার শিকাগো শহরে বিশ্বমহাধর্ম সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন।সেই ধর্ম সভায় তিনি জগৎ বাসির কাছে হিন্দু ধর্মের কথা বিস্তারিত আলোচনা করেন।
তিনি সেই সম্মেলনে বলেন মুহূর্তের মধ্যে একতাই হল প্রকৃতির নিয়ম _হিন্দু এ সত্য উপলদ্ধি করেছে।ধর্মের গোড়ামি, মিথ্যা লোকাচার,ইত্যাদির বিরুদ্ধে তিনি শিকাগোর ধর্ম সভায় বক্তৃতা রাখেন।দেশ বিদেশে তাঁর এই বক্তৃতার প্রভাব খুবই সুদূর প্রসারী হয়।
দেশের মানুষ প্রথম উপলদ্ধি করে ভারত পরাধীন হলেও বিশ্বে তাদের এক বিশেষ স্থান রয়েছে।তারা একটি সুপ্রাচীন ভূখণ্ডের অধিকারী।শিকাগো বক্তৃতার পর স্বামী বিবেকানন্দের অনুরাগী এবং অনুগামীদের সংখ্যা ক্রমশই বাড়তে থাকে।এরপর নিউইয়র্কে তিনি বেদান্ত সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন।
বক্তৃতা দেন হাভার্ড বিশ্ব বিদ্যালয়ে।চারিদিকে প্রশংসিত বিবেকানন্দের শিষ্যত্ব গ্রহণ করলেন অনেকেই। তাঁর মধ্যে রয়েছে “মার্গারেট নোবেল”।ভারতের মাটিতে এসে যিনি হলেন “ভগিনী নিবেদিতা”।
রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা:
রামকৃষ্ণ দেবের তিরোধানের পর বিবেকানন্দ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে রামকৃষ্ণ মিশন ও ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে গঙ্গার তীরে বেলুড় মঠ প্রতিষ্ঠা করেন।এই মঠের মাধ্যমে তিনি সেবা ধর্মের দিকটি প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।আজ সারা ভারতে এমনকি ভারতের বাইরেও রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।এবং সর্বত্রই রামকৃষ্ণ এবং স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শ প্রসারিত হয়েছে।
সাহিত্য সাধনা:
স্বামী বিবেকানন্দের মধ্যে সমান্তরাল ভাবে বর্তমান ছিল সাহিত্য রচনার প্রতিভা।তিনি বহু গ্রন্থ রচনা করে গিয়েছেন। যেসবে তাঁর সাহিত্য বোধের পরিচয় স্পষ্ট।”বর্তমান ভারত” , “ভাববার কথা” , ” “প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য” প্রভৃতি তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ। বিবেকানন্দ অনেক উৎকৃষ্ট মানের কবিতাও লিখে গিয়েছেন।
উপসংহার:
বিবেকানন্দ উচ্চকোটি প্রজ্ঞানি দার্শনিক ,তিনি আছেন প্রেমের পরাকাষ্ঠায় ,পূজার অঞ্জলিতে । তাঁর বাণী ভারত তথা বিশ্বের অজস্র মানুষকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে এখনও।আধুনিক কালের এক কবির ভাষায়-
“আকাশে বরুনে দুর স্ফটিক
ফ্যানায় ছড়ানো তোমার প্রিয় নাম
তোমার পাতা সবখানে পাতা
কোনখানে রাখিব প্রণাম।”
স্বামী বিবেকানন্দ রচনাটি আপনার কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।আপনার প্রয়োজন ও পছন্দের খেয়াল রাখি আমরা। এরকম আরও রচনা পাওয়ার জন্য follow করুন banglarachana.com
আর পড়ুন
Paribesh Dushan o Tar Protikar
বাংলার উৎসব
গাছ আমাদের বন্ধু
বিজ্ঞান ও কুসংস্কার
শ্রমের মর্যাদা রচনা
উল্লেখ: বিবেকানন্দের জীবনী
Jodi rochona ta at ektu baro hoto,tahole valo hoto
আপনার মূল্যবান মতামত জানানোর জন্য ধন্যবাদ
Nice