ভারতের স্বাধীনতা দিবস রচনা [সঙ্গে PDF]

ভারতমাতার বহু বীর সন্তান অনেক রক্তের বিনিময়ে দীর্ঘ সংগ্রামের পর স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন আমাদের। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ ই আগস্ট ইংরেজ শাসনের অবসান ঘটিয়ে ভারত স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি পেয়ে ছিল। এই দিনটি আমাদের সকলের কাছে একটি গর্বের দিন। আমাদের দেশের প্রত্যেক ছোটো ছোটো ছাত্র ছাত্রীদের স্বাধীন দিবস সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকা দরকার তাই ছোটদের বাংলা রচনা হিসেবে স্বাধীনতা দিবস রচনাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমাদের আজকের উপস্থাপন স্বাধীনতা দিবস রচনা।

জাতীয় পতাকা হাতে একটি বাচ্চার ছবি

ভূমিকা: 

 স্বাধীনতা আমাদের সকলের কাছেই এক পরম কাঙ্ক্ষিত বিষয়। স্বাধীনতা ছাড়া কোন জাতি বিশ্বের দরবারে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না। তাই পৃথিবীতে স্বাধীনতা একান্ত প্রয়োজনীয়। ১৫ ই আগস্ট আমাদের ভারতবর্ষের স্বাধীনতা দিবস। ১৯৪৭ সালে এই দিনে আমাদের দেশ ব্রিটিশদের পরাধীনতা থেকে মুক্ত হয়েছিল।

তবে এই স্বাধীনতা কোন একদিনে কিংবা অনুনয়-বিনয়ের মাধ্যমে আসেনি।  আমরা ইতিহাসে পড়েছি বহু বিপ্লবীর রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা এসেছিল। আজ দেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তির এত বছর পর ভারত মাতার সেইসব বীর সন্তানদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধার্ঘ্য হলো এই প্রবন্ধ।

পরাধীন ভারত:

সপ্তদশ শতক থেকে ভারতবর্ষে ইংরেজরা বাণিজ্য করার জন্য বসতি স্থাপন করে। তারপর ধীরে ধীরে তারা ভারতবর্ষে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করার দিকে হাত বাড়ায়। অবশেষে ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশীর যুদ্ধে বাংলার স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের মাধ্যমে ভারতের স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়।

তারপর থেকে ভারতের উপর চলেছে ইংরেজদের শোষণ এবং অত্যাচার। সমৃদ্ধ ভারতবর্ষ থেকে সম্পদ লুট করে নিয়ে গিয়ে ব্রিটেন ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। ভারতবর্ষে দেখা দিয়েছে একের পর এক মহামারী, খাদ্যাভাব, দুর্ভিক্ষ ইত্যাদি। যতদিন গেছে ভারত দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর হয়েছে। 

স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা: 

পরাধীনতার বেড়াজালে যতই ভারতবাসী জড়িয়ে পড়েছে, সময়ের সাথে সাথে ততই তীব্র হয়েছে তাদের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা। এই দেশে পাশ্চাত্য শিক্ষা সংস্কৃতির বিস্তারের মাধ্যমে ভারতবাসী জানতে পেরেছে ফরাসি বিপ্লবের কথা; বুঝেছে সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতার গুরুত্ব।

তারপর থেকেই ধীরে ধীরে তারা ইংরেজ শাসকদের কাছে নিজেদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া পেশ করতে শুরু করেছিল। সেই দাবিদাওয়া গুলির অনাদায়ে ভারতবাসী রাস্তায় নেমেছে, শাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। এইভাবে ধীরে ধীরে বৃহত্তর আন্দোলন এবং সংগ্রামের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে।

বিপ্লবীদের আত্মবলিদান:

শুধুমাত্র অনুনয়-বিনয় এর মাধ্যমে দাবি-দাওয়া পেশ করে স্বাধীনতা আদায় করা যায়নি। তার জন্য দীর্ঘ ১৯০ বছর ধরে বহু রক্ত ঝরেছে দেশজুড়ে। দেশের উপর ব্রিটিশ শাসকদের শোষণের নাগপাশ যখন তীব্র হয়ে চেপে বসেছে তখন থেকেই ধীরে ধীরে ভারতবর্ষের মধ্যে ক্ষোভ দানা বেধেছে। এই ক্ষোভের প্রথম বহিঃপ্রকাশ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের মাধ্যমে।

ব্যারাকপুর সেনাছাউনিতে মঙ্গল পান্ডে বিদ্রোহের আগুন জেলে ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম শহীদ হন। তারপর থেকে ধীরে ধীরে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে বিদ্রোহের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। স্বাধীনতা লাভের আগে পর্যন্ত এই আগুনকে নেভানো যায় নি। জাতিকে স্বাধীন করার আকাঙ্ক্ষায় দেশপ্রেমের এই আগুনে আত্মাহুতি দিয়েছেন ক্ষুদিরাম বোস থেকে শুরু করে বিনয়-বাদল-দীনেশ, সূর্যসেন তথা ভগৎ সিং সকলেই।

ব্যাপক গণ-আন্দোলন: 

বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে গান্ধীজীর হাত ধরে এক নতুন মাত্রা যোগ হয়। সমগ্র দেশের মানুষ একযোগে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে কোন আন্দোলনে শামিল হয়। গান্ধীজীর অহিংসা ও সত্যাগ্রহের মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে সমগ্র দেশ জুড়ে একের পর এক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।

এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো অসহযোগ, আইন অমান্য এবং সবশেষে ভারত ছাড়ো আন্দোলন। এই সকল আন্দোলনগুলোতে ভারতবর্ষ তার বহু বীর সন্তানদের হারায়। অন্যদিকে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন করে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। দেশের মানুষ দুই হাত তুলে এই মহান সংগ্রামকে সমর্থন জানায়।

স্বাধীনতার পটভূমি:

একদিকে ব্যাপক গণ-আন্দোলন, আজাদ হিন্দ ফৌজের আগ্রাসন, নৌ বিদ্রোহ; আর অন্যদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধাক্কা সামলাতে না পেরে ব্রিটেন ভারতবর্ষকে স্বাধীনতা দানে বাধ্য হয়। তবে ভারতবর্ষ ভারত ও পাকিস্তান এই দুইটি দেশে ভাগ হয়ে যায়। অবশেষে ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট মধ্যরাত্রে ভারতবর্ষ স্বাধীনতা লাভ করে। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু তিরঙ্গা পতাকা উত্তোলন করেন। 

উপসংহার: 

আমাদের কাছে স্বাধীনতা দিবস এক অত্যন্ত আনন্দের দিন। এই দিন পাড়ায় পাড়ায়, স্কুলে কলেজে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। আমরা প্রতিবছর ১৫ই আগস্ট স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে পতাকা উত্তোলনে সামিল হই। এই দিন প্রতিটি বিদ্যালয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের উদ্দেশ্য শ্রদ্ধা জানিয়ে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা হয়।

দেশের প্রধানমন্ত্রী এইদিনে দিল্লির লালকেল্লায় পতাকা উত্তোলন করে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। অন্যদিকে আমরা আমাদের বিদ্যালয়ে পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে জাতীয় সংগীত গেয়ে সংকল্প গ্রহণ করি, যে স্বপ্ন আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামীরা দেখেছিলেন আমরা সেগুলিকে সার্থক করে তুলবো।

“ভারত আবার জগত সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে।।”


প্রিয় বন্ধুরা ভারতের স্বাধীনতা দিবস প্রবন্ধ রচনাটি পড়ে তোমাদের কেমন লাগলো আমাদের কমেন্ট করে জানাও। এরকম আরও রচনা পড়ার জন্য আমাদের সাথে যুক্ত থাকো। ভালো থেকো সুস্থ থেকো আর পড়তে থাকো banglarachana.com.

আরও পড়ুন:

আমাদের দেশ (ভারতবর্ষ)
জাতীয় পতাকা রচনা
Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন