সত্যেন্দ্রনাথ বসু ছিলেন বাংলা তথা ভারতবর্ষের একজন প্রবাদপ্রতিম বিজ্ঞানী, অধ্যাপক, এবং সর্বোপরি মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চার একজন বলিষ্ঠ প্রবক্তা। তার গবেষণার মূল ক্ষেত্র ছিল গাণিতিক পদার্থবিজ্ঞান। সমগ্র কর্মজীবনে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল সমগ্র বিশ্বের দরবারে।
বৈজ্ঞানিক গবেষণা ছাড়াও দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনেও একদা পরোক্ষভাবে যোগদান করে গিয়েছেন দেশব্রতী সত্যেন বসু। তার সেই মহান জীবনের ধারাটিকে কিছু মাত্র স্পর্শ করার দুঃসাহস নিয়ে আমরা আজকের এই প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করতে চলেছি।
সূচি তালিকা
ভূমিকা:
আধুনিক ভারতবর্ষের ইতিহাসে যেসকল উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কের আগমনে ভারতীয় আধুনিক জ্ঞান চর্চার আকাশ সমুজ্জ্বল হয়েছিল তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন সত্যেন্দ্রনাথ বসু। বর্তমানকালে অধিকাংশ বাঙালির মন থেকে সত্যেন্দ্রনাথ বসুর স্মৃতি প্রায় চিরতরে মুছে গেলেও জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার ইতিহাসে তার নাম চিরকাল লেখা থাকবে স্বর্নাক্ষরে।
ভারত তথা সমগ্র বিশ্বের জ্ঞানের ভান্ডারকে তিনি নিজের যে দানবীয় প্রতিভা দ্বারা সমৃদ্ধ করে গিয়েছেন তার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে অসংখ্য আধুনিক ইমারত। কিন্তু তার নিজের দেশ, নিজের জন্মভূমিতে প্রাপ্য সামাজিক মর্যাদা এবং পরিচিতি থেকে তিনি চিরকাল বঞ্চিত থেকেছেন। তবুও সত্যেন্দ্রনাথ বসু ছিলেন বিজ্ঞানের পূজারী।
একজন সার্থক বিজ্ঞানীর মতন মর্যাদা কিংবা পরিচিতি কোন কিছুরই তোয়াক্কা না করে সারাজীবন সত্যেন্দ্রনাথ বসু কেবলমাত্র বিজ্ঞানের সেবায় কাজ করে গিয়েছেন। তার সেই মহান জীবনের সুমহান কর্মকাণ্ডের ওপর একফালি আলোকপাতের আকাঙ্ক্ষা নিয়েই এই প্রতিবেদনের উপস্থাপনা
জন্ম ও প্রাথমিক জীবন:
বিজ্ঞান পূজারী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর জন্ম ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দের ১লা জানুয়ারি উত্তর কলকাতার গোয়াবাগান অঞ্চলে ২২ নম্বর ঈশ্বর মিত্র লেনে। তার জন্মভিটাটি অবস্থিত স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুলের ঠিক পার্শ্ববর্তী সংলগ্ন অঞ্চলে। তাঁর পিতা ছিলেন শ্রী সুরেন্দ্রনাথ বসু এবং মাতা আমোদিনী দেবী।
তৎকালীন বাঙালির শিক্ষার মাপকাঠিতে সত্যেন্দ্রনাথ বসুর পিতা ছিলেন একজন উচ্চশিক্ষিত মানুষ এবং পূর্ব ভারতীয় রেলের হিসাব রক্ষক। অন্যদিকে তার মা আমোদিনী দেবী ছিলেন কলকাতার আলিপুর খ্যাতনামা আইন ব্যবসায়ী মতিলাল রায়চৌধুরীর কন্যা। সত্যেন্দ্রনাথ বসুর পরিবারের আদি নিবাস ছিল ২৪ পরগনার কাঁড়োপাড়ার সন্নিকটে বড়জাগুলিয়া গ্রামে। পিতা-মাতার মোট সাত সন্তানের মধ্যে সত্যেন্দ্রনাথ ছিলেন জ্যেষ্ঠপুত্র।
শিক্ষাজীবন:
সত্যেন্দ্রনাথ বসুর শিক্ষা জীবনের সূচনা ঘটে কলকাতারই নর্মাল স্কুলে। পরবর্তীকালে অনিবার্য কারণবশত বাড়ির সন্নিকটে নিউ ইন্ডিয়ান স্কুল থেকে প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা সম্পন্ন করেন। এখান থেকে তিনি হিন্দু স্কুলে এন্ট্রান্স শিক্ষার জন্য ভর্তি হন। হিন্দু স্কুল থেকে ১৯০৯ সালে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে তিনি সর্বপ্রথম নিজের মেধার পরিচয় দেন। হিন্দু স্কুল থেকে তিনি ভর্তি হন প্রেসিডেন্সি কলেজে।
১৯১১ সালে সত্যেন্দ্রনাথ বসু প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে প্রথম স্থানে আই.এস.সি পাস করেন। এই কলেজে অধ্যয়নকালেই তিনি জগদীশচন্দ্র বসু আচার্য এবং প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের মতন যশস্বী অধ্যাপকদের সান্নিধ্যে আসেন।
এমন মহান সব অধ্যাপকদের সান্নিধ্যে পড়াশোনা করে ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। এরপর ১৯১৫ সাল নাগাদ আবারো প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে মিশ্র গণিতে সত্যেন্দ্রনাথ বসু স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
কর্মজীবন:
সত্যেন্দ্রনাথ বসুর কর্মজীবন শুরু হয় তার স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের বছরই। এই বছর তিনি স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় প্রতিষ্ঠিত কলকাতা বিজ্ঞান কলেজে লেকচারার হিসেবে যোগদান করেন। এইখানে তার গবেষণা জীবন শুরু হয় প্রবাদপ্রতিম বিজ্ঞানী মেঘনাথ সাহার সঙ্গে মিশ্র গণিত এবং পদার্থ বিজ্ঞান বিষয় নিয়ে। বেশ কিছুকাল এখানে কাটানোর পর ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে সেখানে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের রিডার হিসেবে তিনি যোগ দেন।
কিছুকাল পর গবেষণার কাজে সত্যেন্দ্রনাথ বসু ইউরোপ যাত্রা করেন। তারপর দেশে ফিরে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি পদার্থবিজ্ঞানের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব লাভ করেন। এরপর দেশভাগের অব্যবহিত পূর্বে ঢাকা থেকে কলকাতায় ফিরে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণের পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সত্যেন্দ্রনাথ বসুকে এমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত করে।
তাছাড়া ওই বছরেই ভারত সরকারের আমন্ত্রণে তিনি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। দু বছর তিনি এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে অবসরের পরের বছর ভারত সরকার তাকে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত করে।
বৈজ্ঞানিক গবেষণা সমূহ:
সত্যেন্দ্রনাথ বসু ছিলেন আজীবন একজন বিজ্ঞান এর পূজারী। বিজ্ঞান ছাড়া তাঁর কর্মজীবনের আলোচনা সম্পূর্ণ অসমাপ্ত থেকে যায়। ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে প্রবাদপ্রতিম এই বিজ্ঞানীর গবেষণা জীবন প্রথম শুরু হয় কলকাতা বিজ্ঞান কলেজে।
তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতাকালীন সময়ে প্ল্যাঙ্কের কোয়ান্টাম তেজস্ক্রিয়তা নীতি ক্লাসিক্যাল পদার্থ বিজ্ঞানের সাহায্য ছাড়াই প্রতিপাদন করে তিনি একটি প্রবন্ধ রচনা করেন এবং সদৃশ কণার সাহায্যে দশার সংখ্যা গণনার একটি চমৎকার উপায় উদ্ভাবন করেন। তবে ঔপনিবেশিক পরিস্থিতিতে সেই প্রবন্ধটি প্রকাশের প্রাথমিক চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে তিনি সরাসরি আরেক প্রবাদপ্রতিম বিশ্ব বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের কাছে সেটি প্রেরণ করেন।
আইনস্টাইন সেই প্রেরিত প্রবন্ধের তত্ত্বকে পরমাণু গবেষণায় প্রয়োগ করলে যা উঠে আসে, তা বর্তমানে বোস-আইনস্টাইন সংখ্যাতত্ত্ব নামে সুপরিচিত। এরপর স্বয়ং আলবার্ট আইনস্টাইন সত্যেন বসুর সেই প্রবন্ধটি জার্মান ভাষায় অনুবাদ করে একটি বৈজ্ঞানিক পত্রিকায় প্রকাশ করলে বিশ্বের কাছে এই বাঙালি বিজ্ঞানীর প্রতিভা প্রতিভাত হয়ে ওঠে।
এই স্বীকৃতির প্রেক্ষিতেই সত্যেন্দ্রনাথ বসু ভারতের বাইরে গবেষণার সুযোগ পান। এই বৈজ্ঞানিক জীবনে তিনি মারি কুরী, এবং আইনস্টাইনের মতন বিজ্ঞানীদের সাথে কাজ করার সুযোগ লাভ করেছেন।
মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চার প্রবক্তা:
সত্যেন্দ্রনাথ বসু সারা জীবন উচ্চমার্গের বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করলেও নিজের মাতৃভাষার প্রতি তাঁর ছিল অগাধ শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা। উপনিবেশিক ভারতবর্ষে যখন মানুষ কেবলমাত্র ইংরেজি শিক্ষাকেই শিক্ষিত মানুষ হওয়ার মাপকাঠি বলে মনে করত সেই সময় তিনি মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন।
এক্ষেত্রে তিনি অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন তার শিক্ষক প্রবাদপ্রতিম বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু এবং আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের থেকে। সমকালীন সময়ে বিজ্ঞান চর্চা বলতে ইংরেজি ভাষার বিকল্প হিসেবে অন্য কিছুকে প্রায় ভাবাই যেত না। স্রোতের বিপরীতে চলে সত্যেন বসু তখন বাংলাভাষায় বিজ্ঞান চর্চাকে সমর্থন করে অসংখ্য অবদান রেখে যান। তার নেতৃত্বেই ১৯৪৮ সালে গঠিত হয় বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ। এই পরিষদের মঞ্চ থেকেই তিনি বারংবার মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চার পক্ষে সওয়াল করতে থাকেন।
এই সংস্থার মুখপত্র হিসেবে বাংলা ভাষার বিজ্ঞান পত্রিকা জ্ঞান ও বিজ্ঞান প্রকাশিত হয়। তিনি বার বার তার প্রতিভা দ্বারা প্রমাণ করে গিয়েছেন যে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানের মৌল নিবন্ধ রচনা করা সম্ভব। বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের মুখপত্রে তিনি বলিষ্ঠ কণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন- “যারা বলেন বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চা সম্ভব নয় তারা হয় বাংলা জানেন না অথবা বিজ্ঞান বোঝেন না।”
প্রাপ্ত সম্মাননা এবং পুরস্কারসমূহ:
সমগ্র কর্মজীবনে সত্যেন্দ্রনাথ বসু অসংখ্য পুরস্কার এবং সম্মাননা লাভ করেছেন। সর্বপ্রথম ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের পদার্থ বিজ্ঞান শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি লাভ করেন লন্ডনের রয়েল সোসাইটির ফেলোশিপ।
ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউট, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সত্যেন্দ্রনাথ বসুকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রিতে ভূষিত করে।
বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে দেওয়া হয় দেশিকোত্তম পুরস্কার। সর্বোপরি ভারত সরকার তাকে পদ্মভূষণ উপাধিতে ভূষিত করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার নামে পরবর্তীকালে স্বাধীন বাংলাদেশে চালু করে একটি অধ্যাপক পদ। ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে তার সমগ্র জীবনের কর্মক্ষেত্র কলকাতা শহরে সত্যেন বসুর নামে সত্যেন্দ্রনাথ বসু জাতীয় মৌলিক বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়।
উপসংহার:
সত্যেন্দ্রনাথ বসুর মতন এমন একজন প্রবাদপ্রতিম বিজ্ঞানী যদি ঔপনিবেশিক ভারতবর্ষে জন্ম গ্রহণ না করে পৃথিবীর অন্য কোন দেশে জন্ম গ্রহণ করতেন তাহলে তার প্রাপ্ত সম্মানের ঝুলি ভোরে উঠতো আরো অসংখ্য সম্মাননায়। তার আবিষ্কৃত তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে গবেষণায় পরবর্তীকালে অনেক মানুষ নোবেল পুরস্কার লাভ করেছিলেন। কিন্তু সত্যেন্দ্রনাথ বসু নোবেল পুরস্কার থেকে বঞ্চিত ছিলেন।
একজন বিশ্বখ্যাত বৈজ্ঞানিক হিসেবে কর্ম জীবন অতিবাহিত করলেও তাঁর ব্যক্তিগত জীবন ছিল অত্যন্ত সাদামাটা। অবসর সময়ে তিনি সেতার বাজাতে ভালোবাসতেন। বাংলার এই কৃতী সন্তান ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দের চৌঠা ফেব্রুয়ারি তার চির বিচরণক্ষেত্র কলকাতায় পরলোকগমন করেন। বাংলার সাধারন জনগন থাকে মনে রাখুক কিংবা না রাখুক সমগ্র বিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার ইতিহাসে সর্বদা শ্রী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়ে থাকবে।
সংক্ষেপে এই ছিল সত্যেন্দ্রনাথ বসুর জীবন সম্পর্কে উপস্থাপিত প্রতিবেদন। উক্ত প্রতিবেদনটিতে যথাসম্ভব যথাযথভাবে বাংলার এই প্রবাদপ্রতিম বিজ্ঞানীর সমগ্র জীবনের সবকটি দিককে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। আশা করি এই প্রতিবেদনটি আপনাদের ভাল লেগেছে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী তা যথাযথভাবে আপনাদের সহায়তা করতে পারবে।
উপরিউক্ত প্রতিবেদনটি সম্পর্কে আপনাদের মতামত কমেন্টের মাধ্যমে বিশদে আমাদের জানান। আপনাদের মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চেষ্টা করব আপনাদের মতামত অনুযায়ী আমাদের লেখনীকে আরও উন্নত করে তোলার। তাছাড়া যদি এমনই অন্য কোন রচনা পড়তে চান সে বিষয়েও আমাদের অবগত করুন। আমরা অতি সত্বর সেই রচনাটি আপনার কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করব। ধন্যবাদ।