মাদার টেরিজা রচনা [PDF]

banglarachana.com এ আপনাকে স্বাগত জানাই। গুরুত্বপূর্ণ সকল বাংলা রচনা পাওয়ার জন্য আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন।এখানে নেই এমন রচনা পাওয়ার জন্য রচনার নাম অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।কিছু কিছু রচনা রয়েছে যা সকল শ্রেণীর ছাত্র ছাত্রীদের জন্য প্রত্যেক বছরের পরীক্ষায় সমান ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এমনই এক রচনা “মাদার টেরিজা/জননী টেরিজা“।

মাদার টেরিজা রচনা বৈশিষ্ট্য চিত্র

ভূমিকা:

পৃথিবীতে যাঁরা অসহায় মানুষের প্রতি গভীর ভালোবাসা নিয়ে তাদের সেবায় নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁরা কখনও কোনোদিন দেশ ও কালের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ থাকেননি; মানুষের দ্বারা সৃষ্টি কৃত্রিম ভৌগলিক গন্ডিকে মেনে নেননি।তাদের কাছে সকল দেশের সব মানুষ সমান আপন।

এমনি একজন অসাধারণ মানুষ হলেন জননী টেরিসা।দীর্ঘ দিন ধরে ইংরেজ শোষণ এ মানুষের দুঃখ কষ্টের সীমা ছিলনা। সেসময় শ্রিমা,ভগিনী নিবেদিতা,নেলি সেনগুপ্তা বিদেশিনী হয়েও এদেশের মানুষের কষ্টকে বুঝে তাদের সেবায় নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। এনাদেরই উত্তরাধিকারী রূপ নিয়ে আসেন স্নেহময়ী মাদার তেরেসা।

‘কেবল সেবা নয়, মানুষকে দাও তোমার হৃদয়। হৃদয়হীন সেবা নয়, তারা চায় তোমার অন্তরের স্পর্শ’

এরকম একটি নিছক বাণীই বলে যাননি আমৃত্যু মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছেন।

জন্ম ও শৈশব:

টেরিজার পারিবারিক নাম ছিল অ্যাগনিস।জন্মসূত্রে তিনি ছিলেন আলবেনীয়।১৯১০ খ্রিস্টাব্দের ২৭ ই আগস্ট অটোম্যান সাম্রাজ্যের ইউস্কুবে এক সচ্ছল কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন অ্যাগনেস। মা বাবা ভাই বোনের খুব সুখের সংসার।কিন্তু ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে মাত্র নবছর বয়সেই বাবাকে হারান। মায়ের কাছে বড়ো হন।

অ্যাগনেস মিশনারি দের স্কুলে পড়াশোনা করতেন।মিশনারীদের কাছেই তিনি শুনেছিলেন কলকাতার মানুষের দুঃখ কষ্ট ও দারিদ্রতার কথা।মানুষের দুঃখ কষ্টের কথা তাঁর মনে গভীর প্রভাব ফেলত।তিনি ঠিক করলেন সাধারণ সুখের জীবনে ভেসে যাবেন না। মানুষের দুঃখে তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য মন স্থির করলেন।সেই মতই সেবার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করার মহান সংকল্প নিয়ে আসলেন সুদূর ভারতবর্ষে।

কর্মজীবন:

১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে শিক্ষকতার কাজ নিয়ে জননী তেরিজা এসে পৌঁছলেন কলকাতায়, লরেটো সেন্টমেরিস স্কুলে। স্কুল সংলগ্ন এলাকায় ছিল কলকাতার এক দরিদ্র বস্তি। তাঁর মন সর্বদা চাইত সেখানে তাদের সেবার কাজ করতে।

১৯৩১খ্রিস্টাব্দের ২৪ মে তিনি সন্ন্যাসিনী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। এই সময় তিনি ধর্মপ্রচারকদের পৃষ্ঠপোষক সন্ত Therese de Lisieux – এর নামানুসারে টেরিজা নাম গ্রহণ করেন। এইসময় তিনি পড়ানো ছেড়ে সেবার কাজে যুক্ত হতে চাইলেন কিন্তু পোপের অনুমতি পেলেন না।

সন্ন্যাস ও সেবাব্রত:

জীবনের আঠারো বছর শিক্ষকতার কাজের মধ্যেই চলে যায়।আর চার দেওয়ালের মধ্যে শিক্ষকতার কাজ ভালো লাগছিলনা তাঁর।স্বাধীনতার এক বছর আগে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতাই শুরু হয় হিন্দু মুসলমান দাঙ্গা।এসময় তিনি সরাসরি আত্মনিয়োগ করেন দাঙ্গা বিধ্বস্ত মানুষের সেবার কাজে।

স্বাধীনতার পর ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভারতের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন।সেই সঙ্গে গ্রহণ করলেন ভারতীয় নারির পোষাক। নীল পাড় সাদা সুতির শাড়ি।এরপর মাত্র ১২ জন সদস্য নিয়ে ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ৭ ই অক্টোবর প‘মিশনারিজ অব চ্যারিট’ প্রতিষ্ঠা করেন। যার শাখা বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে আছে।

সমাজে অবহেলিত বঞ্চিত অনাথ শিশুদের জন্য গড়লেন নির্মলা শিশু ভবন। সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে জননী টেরিজার সেবাব্রত। গড়ে তোলেন ৬০ টি বিদ্যালয়,৫৫ টি কুষ্ট চিকিৎসা কেন্দ্র,২০ টি উদ্ধার আশ্রম,২ টি দাতব্য চিকিৎসালয়।

আন্তর্জাতিক খ্যাতি:

মাদার টেরিজার কথা শুধুমাত্র চার্চের মধ্যে আটকে থাকল না। তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পড়লো দেশে বিদেশে। আর্ত মানুষের যথার্থ একজন মা হয়ে উঠলেন তিনি। অসংখ্য অসহায় মানুষকে তিনি সযত্নে আশ্রয় দিয়েছিলেন।

দেশ বিদেশের হাজার হাজার মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে তাঁর কাছে ঋণ স্বীকার করেছেন। জীবনে অনেক বড়ো বড়ো পুরস্কার পেয়েছেন। এদেশে পেয়েছেন ভারতরত্ন পুরস্কার।ফিলিপাইনে ম্যাগসেসে পুরস্কার। পেয়েছেন পোপের শান্তি পুরস্কার।

এসমস্ত ছাড়াও ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বের শ্রেষ্ট সম্মান নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন। তাঁর অর্জিত সকল অর্থ তিনি মানব কল্যাণের জন্য দান করে গেছেন তাঁর নিজের গঠন করা মিশনারিজ অফ চ্যারিটি তে।

উপসংহার:

মাদার টেরিজা আমাদের কাছে শুধু মাত্র শ্রদ্ধার পাত্রী নন , তিনি হলেন আমাদের কাছে এক বিস্ময়। সারা পৃথিবী যখন নিজের স্বার্থের কথা ভাবতে ব্যাস্ত তখন একজন জননী রুপে তিনি মানবতার বাণীকে উর্ধ্বে তুলে ধরেছেন।

যিশু খ্রিস্টের উপর গভীর বিশ্বাস থাকলেও সকল ধর্মের মানুষের জন্য তাঁর সমান ভালোবাসা ও অপরিসীম মমতা,সহানুভূতি ছিল।নিজের জীবন দিয়ে তিনি মানবতার বাণীকে উর্ধ্বে তুলে ধরেছেন।

সমাজে অসহায় মানুষের সেবার মধ্যেই তিনি নিজের জীবনের অর্থ খুঁজে পেয়েছেন।১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দের ৫ ই সেপ্টেম্বর মাদার টেরেসা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন।কিন্তু তাঁর কাজ ও মানুষের প্রতি গভীর ভালোবাসা তাঁকে আজও অমর করে রেখেছে।


“মাদার টেরিজা”/জননী টেরিজা রচনাটি পড়ে আপনার কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।পরবর্তীতে এরকম আরও নতুন নতুন প্রবন্ধ রচনা পাওয়ার জন্য আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন।সম্পূর্ণ রচনাটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।

Print Friendly, PDF & Email

“মাদার টেরিজা রচনা [PDF]”-এ 1-টি মন্তব্য

Pushpita Majhi শীর্ষক প্রকাশনায় মন্তব্য করুন জবাব বাতিল