মহাত্মা গান্ধী বা গান্ধীজি প্রবন্ধ রচনা [PDF]

banglarachana.com এ আপনাকে স্বাগতম। পঞ্চম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বাংলা সিলেবাসের সমস্ত ব্যাকরণ গুরুত্বপূর্ণ রচনা ভাবসম্প্রসারণ সমস্ত কিছু PDF সহ পাওয়ার জন্য আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন।পরীক্ষায় সম্ভাব্য গুরুত্বপূর্ণ সমস্ত প্রবন্ধ রচনা তুলে ধরার চেষ্টা করি আমরা।তাই এখানে নেই এমন রচনা পাওয়ার জন্য রচনার নাম অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। আজকের বিষয় – মহাত্মা গান্ধী বা গান্ধীজি প্রবন্ধ রচনা।

গান্ধীজি প্রবন্ধ রচনা বৈশিষ্ট্য চিত্র

ভূমিকা:

ব্রিটিশ শাসন ব্যবস্থা আমাদের ভারতবর্ষকে গ্রাস করে রেখেছিল প্রায় দুশো বছর ধরে। একসময় আমাদের ভারতবর্ষ ছিল অনেক গুলি খন্ড রাজ্যে বিভক্ত।ভারতের সাধারণ জনগণের মধ্যে জাতীয়তাবাদের কোনো চেতনা ছিল না।

সকল জায়গায় আঞ্চলিক রাজাদের প্রতি আনুগত্যই বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য ছিল। ইংরেজরা সমস্ত ভারতবর্ষকে একই শাসন ব্যবস্থার মধ্যে নিয়ে এসেছিল। এই ইংরেজ সরকারের অধীনে ভারতবাসী শোষণ ও বঞ্চনার শিকার হয়ে পড়ে।

সাধারণ মানুষের সামান্য অধিকার টুকুও কেড়ে নেয় ইংরেজ সরকার। মানুষ অনুভব করলো তারা নিজের দেশের মাটিতে পরাধীন হয়ে গেছে।এভাবেই শোষণ বঞ্চনার মধ্যে সাধারণ মানুষের দিন যেতে থাকলো। এমন দুঃসময়ে দিশেহারা মানুষদের নতুন জীবনের মহা মন্ত্রে উদ্দীপ্ত করেছিলেন দেশনায়ক মহাত্মা গান্ধী।

জন্ম, শৈশব ও যৌবন:

মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দের ২ রা অক্টোবর গুজরাটের পোর বন্দরে হিন্দু মোধ জন্ম গ্রহণ করেন।পিতা করমচাঁদ উত্তম চাঁদ গান্ধী, মাতা পুতলি বাই। পারিবারিক ভাবে তাদের মুদির ব্যাবসা ছিল। কিন্তু এনার ঠাকুরদা ছিলেন এক দেশীয় রাজ্যের দেওয়ান। পিতা করমচাঁদ উত্তম চাঁদ গান্ধীও পোর বন্দরে দেওয়ানী করতেন।

গান্ধী পরিবার একটি আদর্শ নিষ্ঠ পরিবার। ১৮৮৮ সালের ৪ ঠা সেপ্টেম্বর আঠারো বছর বয়সে ব্যারিস্টারি পড়তে বিলেত গিয়েছিলেন মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। আইনের বই এর পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ পড়তে ভালোবাসতেন।ব্যারিস্টারি পাশ করে ভারতে ফিরে তিনি প্রথমে মুম্বাই হাইকোর্টে যোগ দিয়েছিলেন।

দাদা আব্দুল্লা এন্ড সন্সের আইনজীবী হিসাবে দক্ষিণ আফ্রিকার নাটালে যেতে হয়েছিল।সেখানেও ছিল ইংরেজদের ঔপনিবেশিক শাসন। শেতাঙ্গ ইংরেজরা ছিল প্রবল বর্ণবিদ্বেষ। দক্ষিণ আফ্রিকা গান্ধীজির জীবনকে নাটকীয়ভাবে পরিবর্তন করে দেয়। তিনি এখানে কৃষ্ণাঙ্গদের ও ভারতীয়দের প্রতি সাধারণভাবে প্রচলিত বৈষম্যের শিকার হন।

শেতাঙ্গ ইংরেজরা ভারতীয় ও আফ্রিকান দের মানুষ বলেই গণ্য করতো না।গান্ধীজি বুঝলেন ইংরেজদের এই অত্যাচার ও অপমানের বিরুদ্ধে দলবদ্ধ প্রতিবাদের একান্ত প্রয়োজন। দক্ষিণ আফ্রিকার নাটাল হয়ে উঠলো মহাত্মা গান্ধীর রাজনৈতিক জীবনের প্রথম কর্মক্ষেত্র।তাঁর আন্দোলন ছিল অহিংস আন্দোলন।

উক্ত আন্দোলনকে তিনি নাম দিয়েছিলেন সত্যাগ্রহ।গান্ধীজি প্রহৃত ও কারাবন্দী হলেও স্থানীয় সরকার ভারতীয় দের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়। অহিংসার অস্ত্র বলে সাফল্য অর্জন করেন গান্ধীজি।

রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রথম অধ্যায়:

দীর্ঘ সময় পর ১৯১৫ সালে ৯ ই জানুয়ারি বিজয়ী সম্মান নিয়ে দেশে ফিরে আসেন গান্ধীজি। এই দীর্ঘ সময়ে তাঁর অনেকখানি মানসিক পরিবর্তন ঘটে। তিনি বুঝতে পারেন পরাধীন ভারতবর্ষে স্বাধীনতা আনতে প্রয়োজন জনজাগরণ।

ভারতের বিপুল সংখ্যক অশিক্ষিত সাধারণ জনগণকে সাথে নিয়ে অহিংসার অস্ত্র দিয়ে ইংরেজ সাম্রাজ্যের পতন ঘটাবেন বলে মনস্থির করেন দেশ নায়ক মহাত্মা গান্ধী।১৯২২ সালে গান্ধীজির নেতৃত্বে শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। গান্ধীজির নেতৃত্বে ই প্রথম শুরু হয় সমগ্র দেশ জুড়ে জন জাগরণের জোয়ার।

আন্দোলনের দ্বিতীয় অধ্যায়:

স্বদেশী আন্দোলনের পাশাপাশি ভারতবাসীকে স্বদেশী ভাবনায় উদ্বুদ্ধ করতে চেয়েছিলেন গান্ধীজি।সমগ্র দেশ জুড়ে খাদি ও চরকা কেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন তিনি। তিনি বুঝতে পারেন ভারতের অতি সাধারণ নিরস্ত্র মানুষকে সসস্ত্র আন্দোলনের পথে চালিত করা ঠিক হবে না।তাই অহিংসার পথকেই বেছে নিয়েছিলেন।এনার জীবন ছিল অতি সাধারণ। পায়ে হেঁটেই সাধারণ মানুষের সাথে যোগাযোগ রাখতেন।

১৯৩০ সালে লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু হয়। হল স্মরণীয় ডান্ডি অভিযান।এর বেশকিছু দিন পর বিশ্ব জুড়ে শুরু হয় দ্বিতীয় মহা যুদ্ধ।১৯৪২ সালে ৯ ই আগস্ট গান্ধীজি সমস্ত দেশবাসীর কাছে তাঁর চূড়ান্ত সির্ধান্ত প্রকাশ করেন। জানান ভারত ছাড়ো আন্দোলনের কথা।দাবি করেন পূর্ণ স্বাধীনতা।এরপর তাঁকে কারারুদ্ধ করে ইংরেজ সরকার। আসমুদ্র হিমাচল ভারতবাসীর বিক্ষোভে ভেঙে পড়ে ইংরেজ শাসনের ভিত।

গান্ধীজির প্রয়ান:

সবশেষে ১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগস্ট ভারতবর্ষ ইংরেজ শাসনের অবসান ঘটিয়ে স্বাধীন হল। কিন্তু ইংরেজ শাসন কালে স্বাধীনতা আন্দোলন কে ব্যার্থ করতে ইংরেজরা যে দ্বিজাতি তত্ত্বের বিষ প্রয়োগ করেছিল তার থেকে দেখা দিয়েছিল সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা।অসহায় গান্ধীজি তা প্রতিহত করতে পারলেন না।

দেশ দুই ভাগে বিভক্ত হল ভারত ও পাকিস্তান। এতে গান্ধীজি অনেক আঘাত পান।কারণ তিনি সর্বদায় চেয়েছিলেন হিন্দু মুসলমানের ঐক্য ভারতবর্ষ।এক মৌলবাদী হিন্দু প্রতিষ্ঠান মহান গান্ধীজি কে মুসলমান তোষণ বাদী বলে অভহিত করলো।১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি দেশপ্রেমী মহান গান্ধীজি প্রাত্যহিক পার্থনা সভায় এদেরই কারো দ্বারা গুলি বিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

উপসংহার:

গান্ধীজি তাঁর জীবনকে সত্য অনুসন্ধানের এক মহৎ উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেছিলেন।তিনি ছিলেন প্রেম সত্য ও অহিংসার প্রতীক।দেশের জন্য তাঁর অবদানের জন্য তিনি দেশবাসীর কাছে চির অমর হয়ে রয়বেন।


মহাত্মা গান্ধী/ গান্ধীজি প্রবন্ধ রচনাটি পড়ে আপনার কেমন লাগলো কমেন্ট করে জানাবেন।আপনার একটি কমেন্ট আমাদের অনেক উৎসাহিত করে আরও ভালো ভালো লেখা আপনাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ায় জন্য।বানান ভুল থাকলে কমেন্ট করে জানিয়ে ঠিক করে দেওয়ার সুযোগ করে দিন।সম্পূর্ণ রচনাটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন