বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ রচনা [With PDF]

অরণ্যের সবুজ সমারোহ আর প্রাণের অস্তিত্ব আমাদের পৃথিবীকে অন্যান্য গ্রহদের থেকে আলাদা করেছে। সৃষ্টির আদি লগ্ন থেকেই উদ্ভিদের সাথে প্রাণীর সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। বনের পরিবেশ বন্য প্রাণীদের সৌন্দর্য বিকাশের যেমন যথার্থ ক্ষেত্র,তেমনই বন্য প্রাণী ছাড়া বনের সৌন্দর্যের পূর্ণতা কখনই সম্ভব নয়।

তবুও বিবেকহীন মানুষ নিজের সামান্য স্বার্থসিদ্ধির জন্য অরণ্য উচ্ছেদের নেশায় মেতে উঠেছে। অরণ্যের বিস্তার যত কমছে বন্যপ্রাণীরা ততই হারাচ্ছে তাদের খাদ্য ও বাসস্থানের অধিকার। জীবন যুদ্ধে হেরে গিয়ে লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বহু বিরল প্রজাতির প্রাণী। বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।এ নিয়েই আমাদের আজকের আলোচ্য সময়ে বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ প্রবন্ধ রচনা।

বন ও  বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ রচনা বৈশিষ্ট্য চিত্র

ভূমিকা:

সৃষ্টির আদিতে মানুষের পথ চলা শুরু হয়েছিল গাছপালা এবং বন্য পশু পাখিদের সঙ্গে একসাথেই। আদিম যুগের বিশ্বব্যাপী দিগন্তবিস্তৃত বনানী ও বন্যপ্রাণীকূল মানুষকে দিয়েছিল জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য এবং রোদ-জল-শীত থেকে বাঁচার বস্ত্র। কখনো আবার বনস্পতির কোটর হয়েছে মানুষের আশ্রয়।

প্রাকৃতিক এই পরম সম্পদগুলির উপর ভিত্তি করেই সময়ের সাথে সাথে মানুষ গড়ে তুলেছে তার সভ্যতা। তারপর কালের বিবর্তনে সভ্যতা যত এগিয়েছে, যত জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, পৃথিবী জুড়ে শহর ও নগরের যতই বিকাশ ঘটেছে, মানুষের সার্বিক জীবনযাপনের ক্ষেত্রে ততোই ঘটে গিয়েছে প্রকৃতিগত পরিবর্তন। জীবনধারণের প্রাথমিক রূপ অপরিবর্তিত থাকলেও প্রকৃতির সাথে মানুষের সেই পরম সখ্যতায় ফাটল ধরেছে।

প্রকৃতির সাথে পারস্পরিক নির্ভরশীলতামূলক সহাবস্থানের চিরাচরিত নীতি থেকে সরে এসে একতরফা ভাবে নিজের প্রয়োজনে ইচ্ছেমতো মানুষ তাকে ব্যবহার করা শুরু করেছে। ফলে বন ও বন্যপ্রাণীদের উপর শুরু হয়েছে যথেচ্ছাচার, অবারিত অনিয়ন্ত্রিত শোষণ। পৃথিবীতে প্রকৃতির ভারসাম্য তাই আজ দাঁড়িয়েছে সংকটের মুখোমুখি। প্রকৃতিকে এই সংকটের হাত থেকে রক্ষা করতে না পারলে সভ্যতার টিকে থাকাও অসম্ভব। 

মানুষের যথেচ্ছাচারের ইতিহাস:

প্রকৃতির ওপর মানুষের যথেচ্ছাচার আজ সম্পূর্ণ নতুন কোন বিষয় নয়। জীবনধারণের হেতু নানা ধরনের উপকরণ সংগ্রহের প্রয়োজনে প্রাকৃতিক সম্পদ শোষণের শুরু সেই প্রাক মধ্যযুগে কিংবা তারও আগে। বস্তুত মানুষ যেদিন থেকে পৃথিবীতে অন্যদের তুলনায় শ্রেষ্ঠতর জীব বলে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে, সেই দিন থেকেই প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে পারিপার্শ্বিক পরিবেশের উপর শুরু হয়েছে যথেচ্ছাচার।

ঊনবিংশ শতাব্দীর আগে অবধি পৃথিবীর জনসংখ্যা সার্বিকভাবে কম থাকায় প্রাকৃতিক শোষণের মাত্রা তেমন তীব্রভাবে অনুভূত হয়নি। কিন্তু উনবিংশ শতাব্দী থেকে ধীরে ধীরে পৃথিবীর জনসংখ্যা ক্রমেই বাড়তে থাকে এবং বিংশ শতাব্দীর শেষ লগ্ন নাগাদ তা এক বিপুল আকার ধারণ করে।

স্বাভাবিকভাবেই জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে তীব্র হতে থাকে পরিবেশের উপর মানুষের যথেচ্ছাচার। ফলে যত দিন যাচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশের এই দুরবস্থা আরো বেশি প্রকট হচ্ছে।

সভ্যতার প্রভাব:

পৃথিবীর বুকে সভ্যতার যত বিকাশ হয়েছে, তার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে প্রাকৃতিক সম্পদের অস্তিত্বসংকট। প্রাকৃতিক সম্পদের অবক্ষয়ের এই আলোচনায় বন এবং বন্য প্রাণীদের পৃথকীকরণ সম্ভব নয়। কারণ তারা পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। সভ্যতার ক্রমোন্নতির ধারায় নানা পারিপার্শ্বিক প্রতিকূলতার উদ্ভবে বন্যজীবন পড়েছে অস্তিত্বসংকটে। বন এবং বন্যপ্রাণীদের অস্তিত্বের জন্য প্রতিকূল তেমনি তিনটি দিকের কথা নিম্নে আলোচনা করা হল।

  • পরিবেশ দূষণের প্রভাব

প্রাচীন যুগ থেকে সময়ের সাথে সাথে মানবসভ্যতার উন্নতির পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বেড়েছে পরিবেশ দূষণ। আধুনিক যুগে শিল্প বিপ্লবের পর থেকে দূষণের মাত্রা অত্যধিক পরিমাণে বেড়ে গিয়েছে। যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে পরিবেশের উপর। কলকারখানা থেকে নির্গত বিভিন্ন ক্ষতিকারক গ্যাস প্রতিনিয়ত বাতাসে মিশছে।

সেখানকার বর্জ্যপদার্থ সহ দূষিত জল এসে মিশছে প্রকৃতির খাল-বিল নদনদী জলাশয়ে। অন্যদিকে ব্যাপকহারে বন জঙ্গল সাফ করে জলাভূমি বুজিয়ে চলছে নগরায়ন। এরইমধ্যে বিংশ শতাব্দীর শেষ পর্বে পরিবেশের জন্য অভিশাপ রূপে আবির্ভাব ঘটেছে প্লাস্টিকের। আমরা সবাই জানি যে এই প্লাস্টিক পৃথিবীর বুকে শত শত বছর অক্ষত অবস্থায় থেকে যায়। যার অনিবার্য প্রভাব রূপে পরিবেশের স্বাভাবিক ভারসাম্য বহুমাত্রায় নষ্ট হয়।

  • মানুষের নির্বিচার শোষণ

বন এবং বন্যপ্রাণীদের জীবনসংকটের জন্য মানুষের প্রত্যক্ষ শোষণ বহুলাংশে দায়ী। সেই প্রাচীন যুগ থেকে মানুষ বন্য প্রকৃতিতে নিজের ইচ্ছে মত নির্বিচারে ব্যবহার করে এসেছে। উদ্ভিদ হোক কিংবা বন্য পশু পাখি কোন কিছুই মানুষের শোষণ এর তালিকা থেকে ছাড় পায়নি।

আধুনিক যুগের পূর্বে উদ্ভিদের উপর শোষণ তুলনামূলকভাবে কম থাকলেও বন্যপ্রাণীরা মানুষের লোলুপ গ্রাস থেকে রেহাই পায়নি। অতীত ইতিহাসের পাতায় আমরা দেখেছি সেসময় নানা ধরনের বন্যপ্রাণী শিকার করাকে গৌরবের বিষয় বলে মনে করা হতো। বাঘ, সিংহ, একশৃঙ্গ গন্ডার, দাঁতাল হাতি প্রভৃতি নানা বন্য জন্তুর শিকার এবং তাদের শরীরের নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা বাড়িঘর অলংকরণ সমাজে বিশেষ মর্যাদার মাপকাঠি বলে বিবেচিত হতো।

প্রাচীন তথা মধ্য যুগে পৃথিবীজুড়ে বিভিন্ন রাজারা, ধনী ব্যক্তিরা, এমনকি তথাকথিত সভ্য বলে পরিচিত ঔপনিবেশিক শাসকেরাও নানা ধরনের বন্য জন্তু শিকারকে বিশেষ বিনোদনের বিষয় বলে মনে করতেন। 

এরপর আধুনিক যুগে বন্য প্রাণীদের ওপর অবারিত শোষণের ক্ষেত্রে মানুষ কিছুটা সচেতন হলেও নগরায়নের উদ্দেশ্যে শুরু হয়েছে নির্বিচার অরণ্যধ্বংসের প্রক্রিয়া। তাছাড়া বন্যপ্রাণীদের ওপর বিভিন্ন চোরাচালানকারীদের অত্যাচার আজও সম্পূর্ণ বন্ধ করা যায়নি।

  • জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন

বিশ্বের আধুনিকীকরণের তাগিদে যত বেশি কলকারখানা তৈরি হয়েছে, নির্বিচারে অরণ্যছেদন করে গগনচুম্বী অট্টালিকা যতই মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে পরিবেশে ততই বেড়েছে দূষণের মাত্রা। যথেষ্ট পরিমাণ বনভূমি না থাকার দরুন সেই দূষণকে রোধ করার উপায়টুকুও আজ পৃথিবী হারিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই জলবায়ুতে দেখা গিয়েছে ব্যাপক পরিবর্তন।

পৃথিবীতে গ্রিনহাউস গ্যাসের মাত্রা অত্যধিক পরিমাণে বেড়ে যাওয়ায় গ্লোবাল ওয়ার্মিং আজ চূড়ান্ত আকার ধারণ করেছে। এমনকি মাত্রাতিরিক্ত দূষণের কারণে পৃথিবীর আবহাওয়া মণ্ডলে অবস্থিত ওজোন স্তরও বিশেষ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মেরু অঞ্চলের বরফ গলে গিয়ে প্রতিবছর সমুদ্রের গড় উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসবের প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে ঋতু পরিবর্তনের ওপরেও। সবমিলিয়ে বিশেষ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জলবায়ুর ওপর একান্তভাবে নির্ভর করে থাকা বন ও বন্যপ্রাণীকূল। 

বন্যপ্রাণের অস্তিত্বসংকট:

তথাকথিত সভ্যতার এই বাড়বাড়ন্তের ফলে মানবজাতির জীবনধারণের আদিমতম সঙ্গীরা সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আধুনিকতার ঢক্কানিনাদে প্রতিনিয়ত যে চূড়ান্ত প্রতিকূল পরিবেশের সৃষ্টি হচ্ছে তাতে বন্য জীবকুল পরছে অস্তিত্ব সংকটে। এছাড়া নির্বিচার শোষণও অব্যাহত রয়েছে। যার ফলস্বরুপ একের পর এক প্রাণী হয় পৃথিবী থেকে চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে, নয়তো তাদের সংখ্যা অত্যধিক মাত্রায় হ্রাস পেয়ে ভবিষ্যতকেই প্রশ্নচিহ্নের মুখে ফেলে দিচ্ছে। 

  • বন্যপ্রাণীদের বিলুপ্তি

২০১৮ সালে ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড -এর করা একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে মাত্র গত ৪০ বছরের মধ্যে পৃথিবীতে বিভিন্ন কারণে আমরা ৬০ শতাংশ জীবকুলকে চিরতরে হারিয়ে ফেলেছি।

এরমধ্যে জলচর, উভচর, পাখি, স্তন্যপায়ী প্রভৃতি সকল প্রকারের জীবই রয়েছে। আর একটি সমীক্ষা অনুযায়ী শুধুমাত্র সমুদ্র দূষণের কারণে পৃথিবীর মোট প্রবালপ্রাচীরের প্রায় ৮৯ শতাংশ নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে মানুষের শোষণ এবং দূষণের থাবায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে পৃথিবীর প্রায় ৩০% পাখিকুল।

উদাহরণ হিসেবে ডোডো পাখি এবং প্যাসেঞ্জার পায়রার দেখা মেলে শুধুমাত্র ইতিহাসের পাতাতেই। এছাড়া গ্রামবাংলার বুকেও আগেকার মতো আর রংবেরঙের নাম-না-জানা অজস্র পাখিদের দেখা মেলে না। এছাড়াও বিশ্বজুড়ে একশৃঙ্গ গন্ডার, কৃষ্ণকায় হরিণ, দাঁতাল হাতি, বাঘ, এশিয়ার সিংহ, ইত্যাদি বহু প্রাণীদের সংখ্যা আজ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে।

  • অরন্যের অস্তিত্বসংকট

অরণ্যধ্বংসের ব্যাপারে আলাদা করে আর কোনো আলোচনার বিশেষ প্রয়োজন আছে বলে মনে হয়না। বন জঙ্গলের উপর মানুষের যথেচ্ছাচারের কথা আজ সর্বজনবিদিত। শুধুমাত্র নগরায়নের প্রয়োজনে নির্বিচারে একের পর এক অরণ্য কেটে সাফ করে দেওয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে চোরাচালানকারীদের কবে পড়ে বিভিন্ন মূল্যবান গাছ অচিরেই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। বন্যপ্রাণীকুলের ধ্বংসের পিছনে অরণ্য ধ্বংসের অবদান সম্ভবত সবথেকে বেশি। বন্যপ্রাণীরা তাদের খাদ্য এবং আশ্রয়ের জন্য বিশেষভাবে অরন্যের ওপর নির্ভর করে থাকে।

অরণ্য ধ্বংস সেসা প্রাণীদের খাদ্য ও আশ্রয় করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। তাছাড়া ব্যাপক পরিবেশ দূষণের ফলে বিভিন্ন পতঙ্গ বিলুপ্তির গহবরে হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে অরন্যের স্বাভাবিক প্রজনন পদ্ধতি ব্যাহত হচ্ছে। 

বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের উদ্দেশ্য:

মানব সভ্যতা আজও প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে বন্য প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। তাই নির্দিষ্ট শব্দের মাত্রায় বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। বিশ্বজুড়ে বহুমুখী কারণে সংরক্ষণের এই মহাযজ্ঞে অনতিবিলম্বে আমাদের উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন।

  • খাদ্যশৃঙ্খল রক্ষা

বন্য উদ্ভিদ তথা জীবকুল পরোক্ষভাবে আমাদের পৃথিবীর বাস্তুতান্ত্রিক খাদ্যশৃঙ্খলকে রক্ষা করে চলে। মানুষেরা খাদ্য হিসেবে যে উদ্ভিদ এবং জীবকে গ্রহণ করে সেগুলি প্রত্যক্ষভাবে প্রকৃতির অন্যান্য জীবগোষ্ঠীর ওপর নির্ভরশীল।

আবার সেই জীবগোষ্ঠী খাদ্যের জন্য অন্য কোন জীবগোষ্ঠীর ওপর নির্ভর করে জীবনধারণ করে। এইভাবে পৃথিবীর প্রাণীকুল পরস্পর পরস্পরের সাথে এক বৃহৎ খাদ্যশৃঙ্খলে আবদ্ধ। এই খাদ্যশৃঙ্খলে কোন একটি প্রাণী অবলুপ্ত হলে তার উপর নির্ভরশীল অন্য প্রাণীর বেঁচে থাকাও কঠিন হয়ে পড়ে।

  • বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য রক্ষা

পৃথিবীতে কোন জীব অপ্রাসঙ্গিক নয়। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় প্রত্যেকটি জীবেরই কিছু না কিছু অবদান থেকে থাকে। তাই কোনো একটি জীবের অবলুপ্তি বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে সমূহ বিঘ্ন ঘটাতে পারে।

  • মানবসভ্যতার ভারসাম্য রক্ষা

মানুষ প্রত্যক্ষভাবে বিভিন্ন দিক থেকে বন্য উদ্ভিদ এবং প্রাণীদের ওপর নির্ভরশীল। মানুষ তার দৈনন্দিন জীবন ধারণের বিভিন্ন উপকরণ পেয়ে থাকে অরণ্য থেকে। তাছাড়া বিভিন্ন ভেষজ দ্রব্যের প্রয়োজনেও মানুষ বন্যজীবনের ওপর নির্ভর করে। 

  • পরিবেশ রক্ষা

পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে বন এবং বন্যপ্রাণীদের অবদান সবথেকে বেশি। মাত্রাহীন অরণ্যচ্ছেদনই খরা, বন্যা, অনাবৃষ্টির মত নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে ডেকে আনে। পৃথিবীতে জীবকুলের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য অপরিহার্য অক্সিজেনটুকুও সরবরাহ করে অরণ্য। তাছাড়া দূষণের মাত্রাহ্রাস তথা ভূমিক্ষয় রোধের ক্ষেত্রেও বনের ভূমিকা অপরিসীম। সর্বোপরি বন্যপ্রাণীদের খাদ্য ও আশ্রয়স্থল হিসেবে অরণ্য অপরিহার্য।

সংরক্ষণ:

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে প্রমাণ হয়ে যায় বন এবং  বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আমাদের পৃথিবীর জন্য কতখানি অপরিহার্য। এই উদ্দেশ্যে তৃণমূল থেকে শুরু করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের একান্ত প্রয়োজন আছে। 

  • জাতীয় স্তরে ব্যবস্থা গ্রহণ

পৃথিবী জুড়ে বিভিন্ন দেশের সরকার দেশের অন্তর্বর্তী অঞ্চল জুড়ে বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় বিংশ শতাব্দী মাঝামাঝি সময় থেকেই বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। দেশের মধ্যে বন্য প্রাণীদের জন্য মুক্তাঞ্চল স্থাপন করা হয়েছে। তাছাড়া জাতীয় স্তরে গঠন করা হয়েছে অসংখ্য রাষ্ট্রীয় উদ্যান বা ন্যাশনাল পার্ক।

দেশের অন্তর্বর্তী বিভিন্ন অঞ্চলকে চিহ্নিত করে সেখানকার অরন্যের উন্নয়ন এবং বন্যপ্রাণীদের নিভৃত আবাসস্থল হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে অনিয়ন্ত্রিত অরণ্যচ্ছেদন এবং চোরাচালানকারীদের দৌরাত্ম্য রুখতে তৈরি হয়েছে বিশেষ আইন।

  • আন্তর্জাতিক স্তরে উদ্যোগ

জাতীয় স্তরে উদ্যোগ গ্রহণের সাথে সাথে আন্তর্জাতিক স্তরেও মানব জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কারণ এই প্রয়োজন কেবলমাত্র কোন একটি দেশের বা অঞ্চলের নয়; সমগ্র মানব সভ্যতার। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকেই এই চরম সত্য উপলব্ধি করে আন্তর্জাতিক স্তরে গড়ে উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন সংগঠন এবং নানা অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান।

আন্তর্জাতিক স্তরে তৈরি হয়েছে নানা ধরনের আইন, যা প্রতিটি দেশের জন্য মেনে চলা বাধ্যতামূলক। IUCN ‘এর মতন বিভিন্ন সংস্থা রীতিমত পরিসংখ্যান অনুযায়ী হিসেব করে বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় বিশেষভাবে উদ্যোগী হয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বও এই কাজে বিশ্বকে উৎসাহ প্রদান করে থাকেন। 

উপসংহার:

পরিশেষে আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন এই পৃথিবীতে মানুষ হিসেবে আমাদের যতটুকু অধিকার, ততটুকুই অধিকার আছে অন্যান্য প্রাণী তথা উদ্ভিদের। তাছাড়া সৃষ্টির অমোঘ নিয়ম অনুযায়ী কোন জীব এই বিশ্বে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। পারস্পরিক নির্ভরশীলতা ছাড়া বেঁচে থাকা কারোর পক্ষেই সম্ভব নয়। মানবজাতিও এই সৃষ্টিরই এক অংশ মাত্র।

তাই বন এবং বন্যপ্রাণীকুল বিপন্ন হলে বিপর্যস্ত হবে মানবসভ্যতাও। তাই সভ্যতার স্বার্থেই মানুষকে বন এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে অগ্রণী হতে হবে। সর্বোপরি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মও যেন বিশ্বপ্রকৃতির এই আদিমতম সম্পদের অংশীদার হতে পারে তার দায়িত্বও আমাদেরই নিতে হবে। কবির ভাষায়- 

“এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি;
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।”


বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ রচনাটি পড়ে আপনার কেমন লাগলো আপনার ব্যাক্তিগত মতামত কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানান।আমরা সব সময় সচেষ্ট থাকি সবার থেকে সুন্দর ও আপনার মনের মতো করে একটি রচনা তুলে ধরার।
এখানে নেই এমন রচনা পাওয়ার জন্য রচনাটির নাম কমেন্ট করে জানান।দ্রুততার সঙ্গে আমরা উক্ত রচনাটি যুক্ত করার চেষ্টা করবো।সম্পূর্ণ রচনাটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

Print Friendly, PDF & Email

“বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ রচনা [With PDF]”-এ 1-টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন