টেলিভিশন বা দূরদর্শন রচনা (Television Essay In Bengali) [With PDF]

করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে যখন সারা বিশ্বজুড়ে লকডাউন,তখন গৃহবন্দি অবস্থায় এক অন্যতম গণমাধ্যম হিসেবে কাজ করেছে টেলিভিশন বা দূরদর্শন। অবসর সময়ে বিনোদনের এক বিশেষ মাধ্যম হিসেবে কাজ করেছে দূরদর্শন। ঘরে ঘরে ব্যবহৃত টেলিভিশনের ইতিহাস,দৈনন্দিন জীবনে এর ভূমিকা,কুফল সমস্ত কিছু বিশ্লেষণ করে আমাদের আজকের আলোচ্য বিষয় টেলিভিশন বা দূরদর্শন রচনা।

"টেলিভিশন রচনা"/ "দূরদর্শন রচনা"

ভূমিকা:

আধুনিক সভ্যতায় প্রযুক্তি বিজ্ঞান আশ্চর্য সব উপকরণ আবিষ্কার করে পৌঁছে দিয়েছে মানুষের ঘরে ঘরে। মানুষের কামনাবাসনার যেমন অন্ত নেই তেমনই বিজ্ঞানের দানেরও শেষ নেই। বিস্ময় আর কৌতূহল সেই আদিম যুগ থেকে মানুষকে আন্দোলিত করে। সেই আন্দোলন মানুষের সৃজন শক্তিকে করেছে জাগরিত; বিশেষ জ্ঞান রূপে বিজ্ঞানের আয়ুধ দিয়েছে উপহার।

আগুন আবিষ্কারের পর থেকে বিজ্ঞানের জয়যাত্রা শুরু হয়েছে। নব নব সৃজনশীল প্রতিভা প্রতিনিয়ত বিজ্ঞানের নতুন আবিষ্কারের মাধ্যমে মানবসভ্যতাকে সমৃদ্ধ করে চলেছে। প্রকৃতির অন্তত রহস্যের অবগুন্ঠন উন্মোচনে বিজ্ঞানের জয়যাত্রা রয়েছে অব্যাহত। বিজ্ঞানের কল্যাণে পৃথিবী আজ আমাদের ঘরের দুয়ারে। আর তারই এক আশ্চর্য উদাহরণ হলো গণমাধ্যম। 

দূর দর্শনের আকাঙ্ক্ষা এবং ইচ্ছেপূরণ:

 বেতার মাধ্যমে বক্তার কণ্ঠ মানুষকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। শোনার সাথে সাথে মানুষ চেয়েছে প্রত্যক্ষ করতে। মানুষের সে ইচ্ছে পূরণ টেলিভিশন বা দূরদর্শন আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে। বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিষ্কার দূরদর্শন। বিপুলা বিশ্ব জগতের নানা বৈচিত্র্য, বিনোদন, খবর সব এই টেলিভিশন নামক বাক্সে আজ বন্দী।

 সমাজজীবনের সর্বস্তরে দূরদর্শনের প্রভাব বর্তমানে অনুভূত হচ্ছে। মহাভারতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সঞ্জয়কে দিব্য দৃষ্টি দান করেছিলেন। সেই দৃষ্টি দ্বারা সঞ্জয় ঘরে বসে দিব্যদৃষ্টিতে দেখা কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের গতি প্রকৃতি জন্মান্ধ ধৃতরাষ্ট্র কে শুনিয়েছিলেন। এই কাহিনীর সত্যতা কতখানি বা এর মধ্যে কোন সত্য লুকিয়ে আছে কিনা সেই বিচার না করেও বলা যায়, মহাভারতের যুগের মানুষও দূরের জিনিস কে ঘরে বসে দেখার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করতেন।

সঞ্জয়ের দিব্যদৃষ্টি হয়তো সেদিনের মানুষের আকাঙ্ক্ষার একটি প্রতিফলন হতে পারে। দূরের মানুষের কথা শোনা ও তার ছবি দেখার আকাঙ্ক্ষা আধুনিক যুগের টেলিভিশনের পর্দায় সার্থক রূপ লাভ করেছে।

টেলিভিশনের ইতিহাস:

আধুনিক বিজ্ঞানের এক যুগান্তকারি আবিষ্কার টেলিভিশন। টেলিভিশনের আবিষ্কারক হিসেবে যাঁদের নাম উঠে আসে তাঁরা হলেন জার্মান বিজ্ঞানী কর্ন, মার্কিন বিজ্ঞানী রেঞ্জার, এবং স্কট বিজ্ঞানী লোগী বেয়ার্ড। ১৯২২ সালে বেতারের মাধ্যমে দূরে ছবি পাঠাতে সক্ষম হন বিজ্ঞানী কর্ন।

পরে আটলান্টিকের পাড়ে ছবি প্রেরণের কৃতিত্ব অর্জন করেন মার্কিন বিজ্ঞানী রেঞ্জার। ১৯২৮ সালে চলমান দৃশ্য অর্থাৎ ভিডিও পাঠিয়ে টেলিভিশন আবিষ্কারের কৃতিত্ব অর্জন করেন বিজ্ঞানী লোগি বোয়ার্ড। গ্রিক শব্দ ‘টেলি’ এবং লাতিন শব্দ ‘ভিশন’ এর সমন্বয়ে গঠিত ‘টেলিভিশন’ শব্দটি। এর অর্থ হলো ‘দূরদর্শন’। এই দূরদর্শন প্রচারের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় ১৯৩০ সালে।

টেলিভিশনের জনপ্রিয়তা:

“কত অজানারে জানাইলে তুমি
কত ঘরে দিলে ঠাঁই
দূরকে করিলে নিকট বন্ধু
পরকে করিলে ভাই।”

দূরদর্শন এক অন্যতম জনপ্রিয় গণমাধ্যম। দেখা ও শোনার সমন্বয়ে দূরদর্শন মানুষের মনকে খুব সহজেই আকৃষ্ট করে। বিনোদনে দূরদর্শনের বিকল্প নেই। পছন্দ অনুসারে বিনোদনের নানান সম্ভার এই ইলেকট্রনিক বোকাবাক্স। যিনি খেলা দেখতে ভালোবাসেন তিনি দুরদেশের খেলা সরাসরি উপভোগ করতে পারেন টেলিভিশনের পর্দায়।

আবার যিনি খবর দেখতে ভালোবাসেন বা চলচ্চিত্র প্রেমী মানুষ নিজ নিজ পছন্দের নানান অনুষ্ঠান দেখতে পান টেলিভিশনের পর্দায়। আজকের দিনে টেলিভিশন এক অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম। মানুষের বিনোদনের চাহিদা অনুযায়ী আজ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে প্রচারিত অনুষ্ঠানকে মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছে এই গণমাধ্যমটি। 

সংবাদ মাধ্যমে দূরদর্শনের প্রভাব

দূরদর্শন সর্বশ্রেষ্ঠ সংবাদ মাধ্যমও বটে। দূরদর্শন কে ভিত্তি করে বিশ্বজুড়ে ডিজিটাল নিউজ মিডিয়া নেটওয়ার্ক প্রসার লাভ করেছে। সারা বিশ্বে প্রতি মুহূর্তে যেসব ঘটনা ঘটছে তার জীবন্ত ছবি ও খবর দিয়ে আমাদের সর্বপ্রকার কৌতুহল নিবারণ করে চলেছে দূরদর্শনের ক্যামেরা। বিশেষ করে যেসমস্ত নিরক্ষর মানুষ সংবাদপত্র পড়তে পারেন না, তারাও আজ দূরদর্শন এর মাধ্যমে দেশ-বিদেশের নানা ঘটনার সমস্ত দৃশ্য দেখতে পাচ্ছে। 

জনমত গঠনে টেলিভিশন:

দূরদর্শন এক বিশিষ্ট প্রচারমাধ্যম। ঝড়ের গতিতে জনমত গঠনে দূরদর্শনের জুড়ি মেলা ভার। নিরক্ষর মানুষের কাছেও দেশ তথা পৃথিবীর হালচাল, রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি, আর্থসামাজিক ওঠানামা ইত্যাদিকে সরল উপস্থাপনার মাধ্যমে পৌঁছে দিয়ে দূরদর্শন সমাজের তৃণমূল স্তর থেকে জনমত গঠনে বিশেষভাবে কার্যকরী।

বিনোদনে দূরদর্শনের প্রভাব:

টেলিভিশন একটি অন্যতম প্রধান বিনোদন মাধ্যম। বলাবাহুল্য বর্তমানে বিনোদনই দূরদর্শননের চ্যানেলগুলির একটি মুখ্য কাজ হয়ে উঠেছে। মানুষ আগে সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে যেত, যাত্রা গানের আসরে রাত জেগে অভিনয় দেখতে যেত। এখন দূরদর্শনের পর্দায় বিনোদনের হাজার রকম ব্যবস্থা রয়েছে।

শিশুদের জন্যে কার্টুনের চ্যানেল থেকে শুরু করে বয়স্কদের জন্য সিনেমার চ্যানেল যেমন আছে তেমনই সববয়সীদের জন্য খেলার চ্যানেল এর পাশাপাশি অর্থনীতি এবং মার্কেট সংক্রান্ত বিষয়ের  জন্য আলাদা চ্যানেল রয়েছে। সরকারের দুর্নীতিপূর্ণ ও জনস্বার্থবিরোধী কার্যকলাপ ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী ব্যবস্থা সমূহ সম্পর্কে সাধারণ জনগণকে অবহিত করে তোলার ক্ষেত্রে বিশেষ দায়িত্ব পালন করে টেলিভিশন।  

ছাত্র জীবনে দূরদর্শনের প্রভাব:

 বর্তমানকালে ছাত্রজীবনেও দূরদর্শন অপরিহার্য সঙ্গী হয়ে উঠেছে। আজকের ছাত্রসমাজ অত্যন্ত গতিশীল। কর্মজীবনে প্রবেশের উপযোগী হয়ে ওঠার জন্য ইঁদুর দৌড়ে ছাত্ররা ক্লান্ত হয়ে ওঠে। সেই সময় দূরদর্শন দুদণ্ড বিশ্রাম ও আরামের নিশ্চয়তা দান করে। খেলাধুলার প্রতি ছাত্র সমাজের আকর্ষণ চিরকালীন। কিন্তু সকল ছাত্রের পক্ষে তাদের পছন্দের প্রতিযোগিতামূলক খেলা দেখার সুযোগ হয়ে ওঠে না।

দূরদর্শন সুদূর গ্রাম গঞ্জের ছাত্রসমাজের কাছে বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক খেলা দেখার সুযোগ এনে দিয়েছে। আগে অলিম্পিক, বিশ্বকাপ ফুটবল, অথবা বিশ্বকাপ ক্রিকেট, কিংবা এশিয়াড প্রভৃতির ক্রীড়াচিত্র দেখার সুযোগ সাধারণ মানুষের পক্ষে অকল্পনীয় ছিল। দূরদর্শন এর কল্যাণে ছাত্রসমাজ সেই সুযোগ পেয়েছে। 

রাজনীতির প্রতিফলনে দূরদর্শন:

দূরদর্শন এর মাধ্যমে শুধু ছাত্ররাই নয়, আমরা প্রত্যেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের দৃশ্যগুলি ঘরে বসে একই সময়ে দেখতে পাই। ফলে মনুষ্য জগতের জাতীয় সংহতির এক বাস্তব রূপরেখা গড়ে ওঠে। আমাদের দেশে জনতা কর্তৃক নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সরকার পরিচালনা করে। তাদের কাজের বিচার করে জনগণ।

সরকারের কাজের যথার্থ প্রতিফলন ঘটে দুরদর্শন এর পর্দায়। প্রশাসনের নানা স্তরের প্রশাসকেরা ঠিকমতো কাজ করছেন কিনা সরকারি নানা কাজ ও বক্তব্যও দূরদর্শন তুলে ধরে।  ফলে সে সম্পর্কে জনমত গড়ে ওঠা সহজ হয়ে যায়। এইভাবে অন্যায়ের প্রতিবাদী ও প্রতিকারের মাধ্যম রূপে দূরদর্শন নিজের স্বাতন্ত্র দাবি করতে পারে।

শিক্ষা মাধ্যমে দূরদর্শনের প্রভাব:

দূরদর্শন অডিও-ভিস্যুয়াল শিক্ষার একটা বড় মাধ্যম। বিদ্যালয়ে কক্ষে অথবা নিজের গৃহে দূরদর্শনের সামনে বসে যে কোন ছাত্র ভূগোল, ইতিহাস, জীবন বিজ্ঞান, প্রকৃতি বিজ্ঞান, ইত্যাদি বিদ্যাচর্চার ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ জ্ঞানভান্ডারের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাওয়ায় পাঠ্যপুস্তক এর সীমাবদ্ধতা মেটানো সম্ভব হয়।

 বিভিন্ন শিক্ষাবিনোদনমূলক চ্যানেলগুলি নিয়মিতভাবে শিক্ষার্থী ও জিজ্ঞাসুদের কাছে পৃথিবীর অজানা অদেখা বিষয়গুলির ছবি ও খবর সম্প্রচার করে তাদের জ্ঞানভান্ডার সমৃদ্ধ করে চলেছে। দূরদর্শন কে যথার্থ লোকশিক্ষার বাহন করে গড়ে তোলা উচিত। দূরদর্শন এর মাধ্যমে ছাত্র সমাজের মনে জাতীয় সংহতি এবং সংস্কৃতির চেতনা গড়ে তোলবার যথেষ্ট সুযোগ আছে।

দূরদর্শন অপ্রথাগত এক বিশ্ববিদ্যালয়। নিরক্ষরতা দূরীকরণ, বয়স্ক শিক্ষা ও নারী শিক্ষা থেকে শুরু করে কৃষক, শ্রমিক তথা বিভিন্ন পেশাজীবীদের জন্য নানা ধরনের শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে দূরদর্শন শিক্ষা বিস্তারে অসামান্য ভূমিকা পালন করে চলেছে। প্রথাগত শিক্ষার ক্ষেত্রে নিয়মিতভাবে বিভিন্ন শ্রেণীর ছাত্রদের জন্য নিয়মিত অনুষ্ঠান প্রচার করে দূরদর্শন। 

বিজ্ঞানচেতনা জাগরণে ও কুসংস্কার দূরীকরণে দূরদর্শনের প্রভাব:

বিজ্ঞানমনস্ক না হলে আমাদের দেশের মানুষের মন থেকে কুসংস্কারের অভিশাপকে দূর করা সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে দূরদর্শনের ভূমিকা অসীম। বিভিন্ন স্থানে কুসংস্কারের শিকারে পরিনত মানুষের দুর্গতির ছবি দেখিয়ে এবং যে কুসংস্কার এর জন্য তার এই অবস্থা তার বৈজ্ঞানিক তাৎপর্য বুঝিয়ে মানুষকে সচেতন করতে দূরদর্শন বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করতে পারে। এছাড়াও পণপ্রথা, কুষ্ঠ রোগ, পোলিও, ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও দূরদর্শনের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি ও সরকারি নিয়ন্ত্রণে দূরদর্শনের প্রভাব: 

আজকাল স্যাটেলাইট টিভি বাজারে চলছে রমরমিয়ে। বিভিন্ন জাতীয় ও বহুজাতিক কোম্পানি স্যাটেলাইটের সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়িক ভিত্তিতে টিভি চ্যানেল প্রবর্তন করছে। এইসব চ্যানেলগুলির বিজ্ঞাপন ও অনুষ্ঠানে সব সময় সুস্থ সাংস্কৃতিক মানদন্ড বজায় থাকে না। কুরুচিকর বিজ্ঞাপন, অপসংস্কৃতি মূলক সিরিয়াল ইত্যাদি প্রচার করে এরা নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষা করার চেষ্টা করে।

বলা বাহুল্য এই জাতীয় মনোবৃত্তি সমাজের প্রতি ঘৃণ্য চক্রান্ত ছাড়া আর কিছু নয়।অন্যদিকে প্রশাসনের নীরবতা এইসব অপসংস্কৃতি গুলিকেই আরো ইন্ধন জোগায়।  সরকার অনেক ক্ষেত্রে বিশেষ করে সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে সেন্সর আরোপ করেন। এর ফলে প্রকৃত সত্য আমরা জানতে পারি না। তাই এই সমস্ত উল্লেখিত বিষয়ে যথাযথ আইন-কানুনের বিশেষ প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। 

টেলিভিশনের অপকারিতা:

সবকিছুরই যেমন কিছু ভালো দিক থাকে তেমন কিছু খারাপ দিকও থাকে। টেলিভিশন তার ব্যতিক্রম নয়। দূরদর্শন আপামর জনসাধারণের জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি করলেও এতে যদি শিশুরা আসক্ত হয়ে পড়ে তাহলে তাদের লেখাপড়ার ক্ষতি হয়।

অনেকক্ষেত্রে কিছু বিজ্ঞাপন সম্প্রচারে, চলচ্চিত্র প্রদর্শনে, এমন সব অশালীন ও বিকৃত রুচির ছবি দেখানো হয়, যা বালক বালিকাদের বিপদগামী করে তোলে। কমবয়সি ছেলেমেয়েরা সাধারণ ভাবেই অনুকরণপ্রিয়। তাই টেলিভিশনে দেখা খারাপজিনিস গুলোও তারা সহজেই শিখে ফেলে যা তাদের ভবিষ্যৎ জীবনে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। মাত্রাতিরিক্ত কোন অভ্যাসই ভালো নয়। হিতকর এবং সুখকর বস্তুর ভোগ মাত্রাতিরিক্ত হলে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের পক্ষে তা হানিকারক হয়ে ওঠে। 

অপব্যবহার:

দূরদর্শন এর বিভিন্ন চ্যানেল বিভিন্ন বাণিজ্যিক সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে জ্ঞান বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে দর্শকদের পরিচিত করা অথবা দর্শকদের সাংস্কৃতিক মানোন্নয়ন সেইসব চ্যানেলগুলির উদ্দেশ্য নয়। পণ্য দ্রব্যের বিজ্ঞাপন দিয়ে ভোগ্য সামগ্রীর বাজার গড়ে তোলাই সেইসব চ্যানেলের মুখ্য উদ্দেশ্য হয়ে ওঠে।

বিজ্ঞাপনের জন্য এমন সব চিত্রের প্রদর্শন করা হয় যা সুস্থ সংস্কৃতির পরিপন্থী। তাছাড়া পৃথিবীর দরিদ্র দেশগুলির অধিকাংশ পরিবারেরই দূরদর্শনে প্রদর্শিত ভোগ্য সামগ্রী ক্রয় করার সামর্থ্য নেই। সেইসব পরিবারের কিশোর-কিশোরীদের মনে আয়ত্তাধীন নয় এমন সব ভোগ্য পণ্যের প্রতি তীব্র আসক্তি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে দূরদর্শনের ভূমিকাকে অস্বীকার করা যায়না। শুধু তাই নয়, যেকোনো দরিদ্র দেশে ভোগবাদী জীবনদর্শন সর্ববিধ প্রগতির অন্তরায় হয়ে ওঠে। 

উপসংহার:

বর্তমান সময়ে দূরদর্শন মানুষের জীবনে এক এমন জায়গায় পৌঁছেছে যাকে বর্জন করা আর কোনো ভাবেই সম্ভব নয়। অস্বীকার করার অবকাশ নেই যে টেলিভিশনকে যতই বোকাবাক্স বলে তিরস্কার করা হোক না কেনো, এই বাক্স ছাড়া আমাদের জীবন একপ্রকার অসম্পূর্ণ। দূরদর্শনের সার্থকতা ও ব্যর্থতা মূলত নির্ভর করে তার ব্যাবহারের উপর। আশার কথা এই যে দেশে দেশে আজ মানুষ সচেতন হয়ে উঠছে।

সাধারণ মানুষ বুঝতে পারছে বিনোদনের সঙ্গে সঙ্গে এক সুস্থ সংস্কৃতি ও শিক্ষার পরিবেশ গড়ে তোলার প্রয়োজনও যথেষ্ট। দূরদর্শন এবং বেতার মানবসভ্যতার শ্রেষ্ঠতম দুটি আবিষ্কার। দূরকে দৃশ্যমান করেছে দূরদর্শন।  এতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্প, কৃষি সম্বন্ধে যেসব অনুষ্ঠান প্রচারিত হয় সেগুলির উপযোগিতা অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু নিছক বিনোদনের উদ্দেশ্য নিয়ে যেসব চ্যানেল অপসংস্কৃতির প্রচার করে তার বিরুদ্ধাচারণও আমাদের সামাজিক কর্তব্যের অঙ্গ।

টেলিভিশন বা দূরদর্শন প্রবন্ধ রচনাটি পড়ে আপনার কেমন লাগলো আপনার ব্যাক্তিগত মতামত কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানান।আমরা সব সময় সচেষ্ট থাকি সবার থেকে সুন্দর ও আপনার মনের মতো করে একটি রচনা তুলে ধরার।

এখানে নেই এমন রচনা পাওয়ার জন্য রচনাটির নাম কমেন্ট করে জানান।দ্রুততার সঙ্গে আমরা উক্ত রচনাটি যুক্ত করার চেষ্টা করবো।সম্পূর্ণ রচনাটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।


আরও পড়ুন:

কম্পিউটার রচনা
মোবাইল ফোন রচনা

উল্লেখ: bn.wikipedia.org/wiki/টেলিভিশন

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন