banglarachana.com এ আপনাকে স্বাগত জানাই।পঞ্চম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বাংলা সিলেবাসের সমস্ত ব্যাকরণ গুরুত্বপূর্ণ রচনা,ভাবসম্প্রসারণ,পত্র লিখন PDF সহকারে পাওয়ার জন্য আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন। নিয়মিত নতুন নতুন লেখা প্রকাশিত হয় এখানে। এখানে নেই এমন রচনা পাওয়ার জন্য রচনার জন্য আমাদের কমেন্ট করে জানান।কবি,লেখক,সমাজসেবী,বা স্বাধীনতা সংগ্রামী দের ব্যাক্তিত্ব নিয়ে রচনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।আজকের বিষয় – বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
সূচি তালিকা
ভূমিকা:
বিংশ শতাব্দীর বাংলা মননে কাজী নজরুল ইসলামের মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম।একাধারে সাহিত্যিক,কবি,ঔপন্যাসিক, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ এবং সৈনিক হিসেবে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে নজরুল ইসলাম সর্বদাই ছিলেন উচ্চকণ্ঠ।
আধুনিক বাংলা কাব্যে কবি কাজী নজরুল ইসলাম একেবারে এক ব্যতিক্রমী প্রতিভা।বাংলা কাব্যের শান্ত পরিবেশে তিনি ঝড় তুলেছিলেন। বাংলা কাব্যে প্রেম ও সৌন্দর্যের স্তবগান থেকে সরে গিয়ে তিনি সমাজের সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি বলিষ্ঠ কণ্ঠে ঘোষণা করলেন –
“আমি বিদ্রোহী ভৃগু,ভগবান বুকে এঁকে দিই পদ-চিহ্ন,
আমি স্রষ্টা-সূদন,শোক-তাপ হানা খেয়ালী বিধির বক্ষ করিব ভিন্ন!”
অসহায়,ক্ষুধার্ত দেশবাসীর হয়ে তিনি লিখলেন –
“প্রার্থনা কর যারা কেড়ে খায় তেত্রিশ কোটি মুখের গ্রাস
যেন লেখা হয় আমার রক্ত লেখায় তাদের সর্বনাশ।”
সমাজ ও রাষ্ট্রের অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সর্বদায় সোচ্চার।তাই তাঁর কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাঁকে “বিদ্রোহী কবি” আখ্যায়িত করা হয়েছে।
জন্ম ও পারিবারিক জীবন:
কবি নজরুল ইসলামের জন্ম ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২৪ ই মে,(১৩০৬ বঙ্গাব্দ,১১ ই জৈষ্ঠ) বর্ধমান জেলার অন্তর্গত চুরুলিয়া গ্রামে। পিতা ফকির আহমেদ ও মাতা জাহেদা খাতুন।তিন ছেলে ও এক মেয়ে কে নিয়ে তাদের অসচ্ছল সংসার। কবি নজরুলের ডাক নাম ছিল দুখু মিয়া।মাত্র নয় বছর বয়সে ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে বাবাকে হারান।
পিতার মৃত্যুর পর অভাব অনটন তাঁর শিক্ষার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি তাঁর বাবার কাছ থেকে পেয়েছিলেন উন্নত আদর্শ ও ধর্ম বিষয়ে উদারতা।
শিক্ষা ও শৈশব:
চুরুলিয়া গ্রামের মৌলবি কাজী ফজলে আহমেদের কাছে বিদ্রোহী কবির প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়েছিল।যেমন তিনি মেধাবী ছিলেন তেমনই দুরন্তপনা ও ছিল তাঁর। মাত্র নয় বছর বয়সে পিতাকে হারানোর পর জীবন সংগ্রামে জয়ী হতে ওই বয়সেই তাঁকে জীবিকার সন্ধান করতে হয়েছিল।
কিন্তু আর্থিক অভাব তাঁর লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ কমাতে পারেনি।বাল্যকালেই তিনি কোরান, রামায়ন,মহাভারত পুরাণ কাহিনী সবই পড়ে ফেলেছিলেন।আরবী ও ফারসি ভাষা কেও অনেকটা আয়ত্তে করেছিলেন। কবি নজরুল ইসলামের শিক্ষা জীবন শুরু হয় রানিগঞ্জের সিয়ারশোল স্কুলে।এরপর ভর্তি হন বর্ধমানের মাথরুন উচ্চ বিদ্যালয়ে।
এই সময় দারিদ্রতা তাঁর শিক্ষার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।অভাবের তাড়নায় ছেড়ে দিতে হয় পড়াশোনা।এরপর যুক্ত হন কবি গানের দলে।এইসমস্ত গানের দলদের লেটোর দল বলা হত।এখানে তিনি নিজেই গান লিখতেন এবং সুর দিতেন।
এই সময় তিনি অনেক সাধারণ মানুষ,সুফি,ফকির,বাউল,সাধু সন্ন্যাসীদের সান্নিধ্য পান।পুনরায় ভর্তি হন রানীগঞ্জ অন্তর্গত সিয়ারশোল স্কুলে।তিনি যখন দশম শ্রেণীর ছাত্র তখন শুরু হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ।এরপর পড়া ছেড়ে বেঙ্গলি রেজিমেন্টে যোগ দেন।সুদূর রণাঙ্গনে সূচনা হয় তাঁর সৈনিক জীবনের।
নজরুলের প্রতিভার প্রকাশ:
১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ অবসান ঘটে।বেঙ্গলি রেজিমেন্ট ভেঙে দেওয়া হয়।এইসময় স্বদেশে ফেরত আসেন নজরুল। তাঁর জীবনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়।যুদ্ধের রক্তাক্ত স্মৃতি তাঁর চেতনায় নিয়ে আসে এক পরিণতি।
তিনি অনুভব করতে পারেন পরাধীনতার অপমান।যুদ্ধ চলাকালীনই তিনি লিখেছিলেন “বাউন্ডুলের আত্মকাহিনী” এবং “রিক্তের বেদন” নামে দুই উপন্যাস।যুদ্ধ শেষে দেশে ফিরে তিনি নিজেকে সম্পূর্ণভাবে বাংলা কাব্য সাহিত্যের জগতে নিয়োজিত করেন।বুঝতে পারলেন কবিতা আর গান অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার ও নিজের প্রতিভা প্রকাশের উপযুক্ত অন্যতম মাধ্যম।
এই সময় বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিভা উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো অন্যান্য সবাইকে আড়াল করে রেখেছিল।কিন্তু বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলাম তাঁর লেখার মধ্যে এমন এক নবীনতাকে নিয়ে এলেন যে বাঙালি পাঠকগণ তাঁকে সাগ্রহে বরণ করে নিলেন।
কাবসৃষ্টির বৈশিষ্ট্য:
“মহা-বিদ্রোহী রণক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত।
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না,
অত্যাচারীর খড়ুগ কৃপাণ ভীম রণ, ভূমে রণিবে না-
বিদ্রোহী রণক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত।”
১৯২২ খ্রিস্টাব্দে “মুসলিম ভারত”পত্রিকায় “বিদ্রোহী” কবিতাটি প্রকাশিত হয় যা সারা ভারতের সাহিত্য সমাজে খ্যাতিলাভ করে।উক্ত কবিতাই বাংলা কাব্যে তাঁকে বিজয়ীর গৌরব সন্মান দান করল।বাংলায় এমন করে কবিতা আর কেউ কখনও লেখেননি।
১৯২২ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই আগস্ট নজরুল “ধূমকেতু” পত্রিকা প্রকাশ করেন। এটি সপ্তাহে দুবার প্রকাশিত হতো।ওই বছরেরই ২৩ ই নভেম্বর তাঁর প্রবন্ধ গ্রন্থ “যুগবানি” ইংরেজ সরকার বাজেয়াপ্ত করে।
সেদিনই তাকে কুমিল্লা থেকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়।কারাগারে অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে তিনি আমরণ অনশন শুরু করেন। পরে রবীন্দ্রনাথের অনুরোধে অনশন প্রত্যাহার করেন পাশাপাশি তার সৃষ্টি ধারা অব্যাহত ছিল।একে একে প্রকাশিত হয় অগ্নিবীণা, দোলনচাঁপা,ভাঙ্গা গান, বিষের বাঁশী,সর্বহারা,ইত্যাদি কাব্যগ্রন্থ।একই সাথে তিনি অজস্র গান লিখেছিলেন ও সুর দিয়েছিলেন।
উপসংহার:
বিদ্রোহী কবি যখন সকল সাধনার উর্ধ্বে তখন অল ইন্ডিয়া রেডিওতে একটি অনুষ্ঠানে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর বাকশক্তি হারিয়ে যায়।হারানো বাকশক্তি তিনি আর ফিরে পাননি।জানা যায় কবি এক দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছেন।দীর্ঘ প্রচেষ্টার পরও তাঁকে সুস্থ করা যায়নি।অবশেষে এলো চিরবিদায় পালা। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে ২৯ ই আগস্ট সাতাত্তর বছর বয়সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন কবি নজরুল ইসলাম। তাঁর মৃত্যুতে দেশের আপামর জনসাধারণ শোকে অভিভূত হয়ে পড়ে।
“মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই”
তাঁর গানের লাইন অনুসরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে তাঁকে সমাহিত করা হয়।জীবনে কবি অসংখ্য খেতাব ও পুরস্কার পেয়েছেন সেই সঙ্গে শুনেছেন প্রশস্তি ও নিন্দাবাদ।সেসব ছাড়িয়ে বাংলা কাব্য ও সঙ্গীতের জগতে তাঁর স্থান আজও অম্লান হয়ে আছে।
“বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম” রচনাটি পড়ে আপনার কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।বানান বা তথ্যগত কোনো ভুল থাকলে কমেন্ট করে জানিয়ে ঠিক করে দেওয়ার সুযোগ করে দিন। এরকম আরও নতুন নতুন প্রবন্ধ রচনা পাওয়ার জন্য আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন।সম্পূর্ণ রচনাটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।
Good