যুগে যুগে বাংলার কোলে জন্ম নিয়েছেন বহু মহাপুরুষ। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তাঁদের মধ্যে একজন অন্যতম মহাপুরুষ। তাঁর শিক্ষা, জ্ঞান, সমাজের জন্য করে যাওয়া নানান কর্ম, আজও বাঙালি জাতির মেরুদন্ড সোজা করে রেখেছে। আজ তাঁর কথা স্মরণ করেই আমাদের আলোচ্য বিষয় বাংলা প্রবন্ধ রচনা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।
সূচি তালিকা
ভূমিকা:
প্রখ্যাত পণ্ডিত ও প্রাবন্ধিক রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের মহত্বের কথা স্মরণ করিয়ে লিখেছিলেন –
“তিনি ছিলেন বৃহৎ জিনিসকে ক্ষুদ্র দেখাইবার যন্ত্র স্বরূপ।”
আমাদের অস্বীকার করার অবকাশ নেই যে, আত্ম দ্বন্দ্বে লিপ্ত,দুর্বল,কর্মবিমুখ, স্বার্থপর,তমসিকতার অন্ধকারে নিমজ্জিত বাঙালির মধ্যে বিদ্যাসাগরের মতো তেজোদীপ্ত, ঋজু মেরুদন্ড বিশিষ্ট মানুষের ‘ আবির্ভাব একটা অদ্ভুত ঐতিহাসিক ঘটনা।’
জন্ম ও পারিবারিক পরিবেশ:
১৮২০ খ্রিস্টাব্দে মেদিনীপুর জেলার অন্তর্গত বীরসিংহ গ্রামে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।এনার প্রকৃত নাম ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়।মা ছিলেন অসামান্য ব্যক্তিত্বময়ী নারী _ ভগবতী দেবী ও পিতা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। মনুষ্যত্বের মহৎ উত্তরাধিকার নিয়ে বিদ্যাসাগর আবির্ভূত হয়েছেন।
শিক্ষা জীবন:
ঈশ্বরচন্দ্রের প্রথম শিক্ষা জীবন শুরু হয় গ্রামের পাঠশালায় ।শৈশবে এনার মেধা শক্তির পরিচয় পেয়ে পিতা ঠাকুরদাস এনাকে কলকাতায় পড়াবেন বলে মনস্থির করেন।সেই সময় ভারতের রাজধানী কলকাতা লেখাপড়ার কেন্দ্রভূমি।
নয় বছর বয়সে ভর্তি হলেন কলকাতার সংস্কৃত কলেজে।দারিদ্রের সাথে কঠোর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তাকে অধ্যায়ন করতে হয়।ছাত্র হিসেবে ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী।তাই দারিদ্রতা ও কোনো প্রতিকূলতা তাকে পরাভূত করতে পারেনি।
মাত্র বারো বছর বয়সেই সংস্কৃত সাহিত্য,ব্যাকরণ,বেদান্ত,স্মৃতি,অলংকার ইত্যাদি নানা বিষয়ে পাণ্ডিত্য অর্জন করে “বিদ্যাসাগর” উপাধি লাভ করেন।এই উপাধির আড়ালে নামটিই হারিয়ে যায়।ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় নাম আমাদের সকলের কাছে ততোখানি পরিচিত নয় যতটা পরিচিত তাঁর “বিদ্যাসাগর” উপাধি।
কর্মজীবন:
মাত্র একুশ বছর বয়সে পাঠ্য জীবন শেষ করে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে সংস্কৃত বিভাগে অধ্যাপনার মধ্য দিয়ে বিদ্যাসাগর তাঁর কর্ম জীবন শুরু করেন।পরবর্তী কালে আপন কর্মদক্ষতায় উক্ত কলেজে অধ্যক্ষ পদ গ্রহণ করেছিলেন।
ইনি বিশেষ বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাজে নিযুক্ত হয়ে ছিলেন কিন্তু শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের মতবিরোধের জন্য একসাথে উভয় পদে ইস্তফা দেন। এখান থেকেই সূচনা হয় তাঁর বৃহত্তর কর্ম জীবন।তিনি যুক্ত হয়ে যান মানবকল্যাণের কাজে।
সমাজ সংস্কার:
বিদ্যাসাগরের সমাজ সংস্কারের কাজে শ্রেষ্ঠ কীর্তি আমরা সকলেই জানি ” বিধবা বিবাহ” প্রচলন।সেই সময় খুব কম বয়েসেই মেয়েদের বিয়ে দেওয়া হতো ,পুরুষের বয়েসের কোনো বিচার হতোনা।
সেই সাথে প্রচলন ছিল পুরুষের বহু বিবাহ তাই একজন পুরুষের মৃত্যুতে বহু অল্প বয়সের মেয়েরা বিধবা হতো _বিধবা মেয়ে দের কান্নায় ভরে গিয়েছিল বাঙালির ঘর।অল্প বয়সি এই বিধবাদের কষ্ট সহ্য করতে পারেননি বিদ্যাসাগর।
বিধবা বিবাহ প্রচলন করার উদ্দেশ্যে আন্দোলন শুরু করলেন।এই আন্দোলনে কিছু উদার দরদি মানুষ এগিয়ে এলেও ছিলনা তাঁর যোগ্য সহযোগী।চারিদিকের প্রবল বাধায় তার প্রানসংশয় পর্যন্ত দেখা দিয়ে ছিল।কিন্তু এই সমস্ত বাধা তাকে আটকে রাখতে পারেনি।
১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে বিধবা বিবাহ আইন সংগত হয়।পুরুষের বহু বিবাহ ও বাল্য বিবাহের ঘোরতর বিরোধী ছিলেন বিদ্যাসাগর।এই মহান ব্যাক্তিত্ব বিদ্যাসাগরের সমাজ সংস্কারের আন্দোলন বাঙালি সমাজে এক নতুন যুগের সূচনা করে ছিল।
গ্রন্থ রচনা:
নিজস্ব স্বাধীন জীবিকা হিসেবে তিনি বই লিখতে শুরু করেছিলেন।ইনি হলেন বাংলার গদ্যের জনক।এনিই হলেন প্রথম “বাংলা ভাষার যথার্থ শিল্পী”।এনার শ্রেষ্ঠ রচনা “শকুন্তলা” ও”সীতার বনবাস”।
অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য “বেতাল পঞ্চ বিংশতি” ও “ভ্রান্তিবিলাস”। ” স্বরচিত আত্মজীবনী ” খণ্ডিত হলেও এটা তার স্মরণীয় সৃষ্টি।শিশুদের জন্য লেখেছেন অনেক গ্রন্থ।যেমন “বর্ণ পরিচয়” , “বোধদয়” , “কথা মালা” ইত্যাদি।
উপসংহার:
বিদ্যাসাগরের চরিত্র মাহাত্ম্য মনে করিয়ে রবী ঠাকুর লিখেছেন –
“তিনি নবীন ছিলেন এবং চিরযৌবনের অভিষেক লাভ করে বলশালী হয়েছিলেন।তাঁর এই নবীনতাই আমার কাছে সবচেয়ে পূজনীয়,কারণ তিনি আমাদের দেশে চলার পথ প্রস্তুত করে গেছেন।”
কালের নিয়মে একদিন এই মানবের প্রাণশক্তি ফিরিয়ে এলো। অবশেষে এলো মহা প্রস্থানের দিন,১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে ২৯ শে জুলাই তিনি চির বিদায় নিলেন।বাঙালি জাতি হারালো তার সর্বকালের এক শ্রেষ্ঠ সন্তান।তিনি আজ আমাদের মধ্যে না থাকলেও তাঁর আদর্শ আজও অনির্বাণ হয়ে আছে।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচনাটি আপনার কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।আপনার প্রয়োজন ও পছন্দের খেয়াল রাখি আমরা। এরকম আরও রচনা পাওয়ার জন্য follow করুন banglarachana.com
আর পড়ুন
Paribesh Dushan o Tar Protikar
বাংলার উৎসব
গাছ আমাদের বন্ধু
উল্লেখ: Ishwar Chandra Vidyasagar Biography
ছোট হলে ভালো হতো। কিন্ত ভালো আছে
ধন্যবাদ।। 🙂
Very nice
ধন্যবাদ।
খুব সুন্দর লাগলো ।
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ।
Thanks, sir
extraordinary
বেস ভালো…… ধন্যবাদ
very good
ধন্যবাদ।
Thanks sir…………………
ধন্যবাদ।
Very good
Thank You sir
আমার খুব ভালো লেগেছে এইটি আমার পড়ায় সাহায্য করেছে খুব।
Wonderful