আমাদের পরিবার হল আমাদের জীবনের সবথেকে প্রিয় ও নিরাপদ আশ্রয়। কোন একটি গাছের জন্ম যেমন ভূমিকে শিকড় দিয়ে আঁকড়ে ধরে হয়, তেমনি মানুষের জন্ম তার পরিবারকে আঁকড়ে ধরে হয়। মানুষের জীবনে পরিবারের গুরুত্ব বলে শেষ করার মতন নয়। পরিবার নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনার উদ্দেশ্যে আজকের বিষয় আমার পরিবার রচনা।
সূচি তালিকা
ভুমিকা:
পরিবার হলো আমাদের সকলের জীবনের সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কোন একটি গাছের জন্ম যেমন ভূমিকে শিকড় দিয়ে আঁকড়ে ধরে হয়, তেমনি মানুষের জন্ম তার পরিবারকে আঁকড়ে ধরে হয়। কোন মানুষ নিজের পরিবার ছাড়া বাঁচতে পারে না। পৃথিবীতে বিভিন্ন রকমের পরিবার দেখা যায়।
আগেকার দিনে বেশিরভাগ পরিবারই ছিল যৌথ একান্নবর্তী পরিবার। তবে বর্তমানে বিভিন্ন কারণবশত অধিকাংশ একান্নবর্তী পরিবার আলাদা হয়ে গিয়ে ছোট ছোট একক পরিবারের সৃষ্টি হয়েছে। একটি যৌথ একান্নবর্তী পরিবারে অনেক সদস্য থাকেন। প্রত্যেক সদস্য সেই পরিবারে কোনো নির্দিষ্ট ভূমিকা পালন করেন।
তবে একান্নবর্তী পরিবারের ক্ষেত্রে সদস্য সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হওয়ার কারণে পরিবারের সীমিত সংখ্যক সদস্যদেরই সকল পারিবারিক দায়িত্ব পালন করতে হয়। আজ আমার পরিবার নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনার উদ্দেশ্যেই এই প্রতিবেদনের উপস্থাপনা।
আমার পরিবার:
বর্তমান পৃথিবীতে খুব কম সংখ্যক যৌথ একান্নবর্তী পরিবার এখনো টিকে আছে। টিকে থাকা নগণ্য সংখ্যক সেই যৌথ পরিবারগুলির মধ্যে আমার পরিবার একটি। একই বাড়ির এক ছাদের তলায় মোট ১৩ জন সদস্য নিয়ে গঠিত আমার এই পরিবার। আমার পরিবারে আমার মা-বাবা ছাড়াও ঠাকুরদা ঠাকুরমা, দুই জ্যাঠা, এক কাকা এবং তাদের ছেলেমেয়েরা রয়েছেন।
একটি একান্নবর্তী পরিবার হিসেবে এক ছাদের তলায় থাকার দরুন বিভিন্ন সাংসারিক বিষয় নিয়ে মতপার্থক্য হয়েই থাকে, কিন্তু সেই মতপার্থক্য কখনো আমাদের মধ্যে বিভেদের কারণ হয়ে দাড়ায় না। আমরা সবাই সবাইকে অত্যন্ত ভালবাসি, বড়রা আমাদের ছোটদেরকে স্নেহ করেন; আর আমরা ছোটরা সারাদিন মিলেমিশে থাকি।
আমি আমার পরিবারের মধ্যে কনিষ্ঠতম সদস্য। আমার দাদা-দিদিরা আমার অত্যন্ত ভালোবাসে। আমার খেলার সাথী হওয়া থেকে শুরু করে, আমায় পড়াশোনা দেখিয়ে দেওয়া পর্যন্ত সকল কাজে তারা আমায় যথাসাধ্য সাহায্য করে থাকে।
পরিবারের সদস্যদের ভূমিকা:
একটি একান্নবর্তী পরিবারে প্রত্যেক সদস্যের কিছু নিজস্ব ভূমিকা থাকে। নির্দিষ্ট সদস্যের কাঁধে ন্যাস্ত তাকে নির্দিষ্ট দায়িত্ব সমূহ। আমাদের পরিবারও তার ব্যাতিক্রম নয়। আমার বাবা এবং কাকা রোজ সকালে উঠে বাজারে যান। তারা বাজার করে আনার পর আমার দুই জেঠি ও মা প্রতিদিনের রান্নাবান্না করে থাকেন। আমার দুই দাদা এবং এক দিদি কলেজে পড়ে, আর আমি আর আমার দুই দিদি বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করি।
আমরা সকালবেলা উঠে যে যার মতন পড়াশোনা করে স্কুল কলেজে যাওয়ার জন্য তৈরি হই। বাবা, কাকা এবং জ্যাঠারা নিজেদের সকালের কাজ সেরে অফিসে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হন। আমার ছোট কাকি একটি বিদ্যালয় শিক্ষকতা করেন। অন্যদিকে আমার ঠাকুরদা অতিসম্প্রতি তার দীর্ঘ কর্ম জীবন থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন। আর ঠাকুমাকে সংসারের ভার থেকে বয়সের কারণে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
একটি স্মরণীয় পারিবারিক ঘটনা:
আমাদের পরিবারে প্রায়ই অসংখ্য ঘটনা ঘটে। তারমধ্যে নির্দিষ্ট কয়টিই স্মরণীয় হয়ে থেকে যায়। এমনই একটি স্মরণীয় ঘটনা ঘটেছিল গতবছর শীতকালে। গতবছর শীতকালে ডিসেম্বর মাসে আমরা পরিবারের সকলে মিলে সুন্দরবন ঘুরতে গিয়েছিলাম।
পরিবারের প্রত্যেক সদস্য একসাথে হয়ে দূরে কোথাও ঘুরতে যাওয়া সেই প্রথম। মোট চারটি দিন পরিবারের সকলে মিলে আমরা সুন্দরবনে নদীর ওপর লঞ্চে কাটিয়েছিলাম। লঞ্চে কাটানো সেই দিনগুলিতে আমরা ভাইবোনেরা মিলে খুব আনন্দ করেছিলাম।
লঞ্চের উপর দাঁড়িয়ে আমরা নদীর পাড়ে দেখেছিলাম কুমিরকে রোদ পোহাতে, একদিন দেখেছিলাম একটি রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে বোনের মধ্যে ঘুরে বেড়াতে। বড় জেঠু আমাদের বিভিন্ন পাখি দেখিয়ে তাদের নাম বলে চিনিয়ে দিচ্ছিলেন। সপরিবারে প্রথমবার কাটানো সেই কয়েকটি দিন আমার কাছে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
পরিবারের গুরুত্ব:
মানুষের জীবনে পরিবারের গুরুত্ব বলে শেষ করার মতন নয়। পরিবার আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান রূপে কাজ করে। একজন মানুষের ভবিষ্যৎ কেমন হবে, তার চরিত্র কেমন হবে জীবনের এই সকল গুরুত্বপূর্ণ দিক গুলি নির্ধারণ করে দেয় তার পরিবার। আমার পরিবারের ক্ষেত্রেও এই একই কথা প্রযোজ্য।
আমি প্রতিনিয়ত আমার দাদা, দিদি এবং বাড়ির বড়দের দেখে অনুপ্রাণিত হই। আমার বড় জেঠু সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত আছেন। তার জীবন আমার কাছে আদর্শ স্বরূপ। আমি বড় হয়ে তার মতন হতে চাই। এছাড়া আমার সমগ্র পরিবার আমার প্রতিদিনের সুখ-দুঃখ, ভালো-মন্দ সবকিছুর সঙ্গী হয়। এই কারণেই হয়তো পরিবারের থেকে বাইরে গিয়ে খুব বেশিদিন একা কোথাও থাকতে আমার ভালো লাগেনা।
উপসংহার:
আমার কাছে আমার পরিবার হলো জীবনের সবচেয়ে প্রিয় এবং নিরাপদ আশ্রয়। এই পরিবার ছাড়া আমি নিজের অস্তিত্ব কল্পনাও করতে পারিনা। বর্তমান ছোট একক পরিবারের যুগেও হয়তো আমাদের এই ১৩ জনের একান্নবর্তী যৌথ পরিবার ব্যতিক্রমঃ স্বরূপ। তবে আমি ছোট পরিবারে প্রতিদিন জীবনযাপনের কথা চিন্তাও করতে পারিনা। আমার অধিকাংশ বন্ধুই একক পরিবারে বাস করে।
কখনো কখনো পড়াশোনার কোনো কাজে তাদের বাড়ি যেতে হলে আমার অত্যন্ত দমবন্ধ লাগে। সেই কারণেই আমি মনে করি আমার এই বৃহৎ পরিবারে যে সাংসারিক সমস্যাই থাক না কেন, জীবনে একান্নবর্তী পরিবারের অসীম তাৎপর্যের কাছে তা অত্যন্ত নগণ্য। তাই আমার কাছে আমার এই পরিবার হলো পবিত্র শান্তির পরম আশ্রয়স্থল।
প্রিয় বন্ধুরা আমার পরিবার রচনাটি পড়ে তোমাদের কেমন লাগলো আমাদের কমেন্ট করে জানাও। এরকম আরও রচনা পড়ার জন্য আমাদের সাথে যুক্ত থাকো। ভালো থেকো সুস্থ থেকো আর পড়তে থাকো banglarachana.com.