আমার জীবনের লক্ষ্য বা তোমার জীবনের লক্ষ্য রচনা (আদর্শ ডাক্তার হওয়া) [PDF]

আমাদের সকলের জীবনে কিছু না কিছু লক্ষ্য থাকে,ছাত্র জীবনে ভবিষ্যতের জন্য একটি লক্ষ্য স্থির করা ও সেই লক্ষ্য পূরণের সঠিক পথে এগিয়ে চলা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।আজকের উপস্থাপন – আমার জীবনের লক্ষ্য বা তোমার জীবনের লক্ষ্য রচনা। এই রচনায় আমি আমার জীবনের লক্ষ্য হিসেবে আদর্শ ডাক্তার হওয়াকে তুলে ধরেছি।

তোমার জীবনের লক্ষ্য রচনা বৈশিষ্ট্য চিত্র

ভূমিকা:

প্রত্যেক সচেতন মানুষের মতো আমার জীবনেও একটা লক্ষ্য আছে। আমি শৈশব পার করে কৈশোরে পদার্পণ করেছি। অনেক ভেবে চিন্তে আমি এই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করেছি। মানব জীবনের অন্যতম লক্ষ্য হওয়া উচিত অন্যের কল্যাণ সাধন। এই কাজ অনেকভাবেই করা সম্ভব।

তবে যেসব মানুষ পেশাগতভাবে ডাক্তার হন, তারা নিজেদের জীবিকা নির্বাহের মধ্যে দিয়েই এই গুরুদায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারেন। ডাক্তারি যেমন একইসঙ্গে একটি পেশা, আবার অন্যদিকে এটি সমাজের প্রতি পালনীয় একটি কল্যাণকর কর্তব্যও বটে। আমি, তাই ব্যক্তিগতভাবে ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করাকেই আমার জীবনের লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিতে চাই। 

জীবনে লক্ষ্য নির্বাচনের গুরুত্ব:

জীবনের সুস্থ যাপনের জন্যে তার একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য বা অভিমুখ থাকা একান্ত জরুরি। জীবনের অনেক সময় অনেকভাবে আমরা অপচয় করে ফেলি, যার কোন ক্ষতিপূরণ করা সম্ভব হয় না।মানুষের নিজস্ব একটা লক্ষ্যস্থান থাকলে সেই স্থানেই সে নিজেকে উন্নীত করতে পারে। প্রত্যেক মানুষের জীবনে কোনো না কোনো স্বপ্ন থাকে।

সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য মানুষকে পরিশ্রম ও সাধনা করতে হয়। নির্দিষ্ট লক্ষ্য না থাকলে জীবনে সফলতা লাভ করা যায় না। কান্ডারি বিহীন তরী যেমন অকূল মহাসমুদ্রে তীর খুঁজে পায়না, তেমনি লক্ষ্যবিহীন জীবনও এ কন্টকাকীর্ণ পৃথিবীতে সাফল্যের সোপান খুঁজে পায় না। মানুষের মনের মধ্যে লালিত স্বপ্নই তাকে তার লক্ষ্যের বন্দরে পৌঁছে দেয়। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকলে জীবনে বিপথগামী, লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।

তাই প্রত্যেক মানুষের জীবনে একটা অর্থবহ লক্ষ্য থাকা প্রয়োজন। এই প্রসঙ্গে ডা. লুৎফর রহমান এর বক্তব্য স্মরণীয়- ‘জীবনের প্রথম থেকে ঠিক করে নাও তুমি কোন কাজের উপযুক্ত। এটা একবার, ওটা একবার করে যদি বেড়াও তাহলে তোমার জীবনের কোনো উন্নতি হবে না। এরূপ করে অনেক লোকের জীবন নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তোমার যেন তা না হয়।’ 

জীবনে লক্ষ্য স্থির করে সে লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য দৃঢ় আকাঙ্খা আর কঠোর পরিশ্রম করলে সফলতা আসবেই। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য না থাকলে জীবনযুদ্ধে টিকে থাকা যায় না।

জীবনে পেশার প্রয়োজনীয়তা:

পেশা হল কোন ব্যক্তির কোন নির্দিষ্ট বা বিশেষ বিষয়ে শিক্ষালাভ বা প্রশিক্ষণ গ্রহণ পরবর্তী জীবন-জীবিকা নির্বাহের জন্য চাকুরী বা অন্য কোন বৃত্তিবিশেষ। এর মাধ্যমে তিনি অর্থ উপার্জন করেন বা জীবিকা নির্বাহ করেন।

প্রত্যেকটি মানুষেরই বেঁচে থাকার জন্যে অর্থের প্রয়োজন। নিজের জীবনকে সুন্দর করে তোলার জন্যও অর্থের প্রয়োজন, জীবিকা নির্বাহের জন্য তাই পেশা নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের পেশাই নির্ধারণ করে দেয় তার ভবিষ্যৎ জীবনের সুখ সমৃদ্ধি এবং তার জীবনচর্চার মান। পেশা নির্বাচনের সঙ্গে প্রায়শই জড়িয়ে থাকে অর্থনৈতিক উন্নতি এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠার  মনষ্কামনা।    

 লক্ষ্য নির্বাচনের সঠিক সময়:

ছাত্রজীবন আদতে তপস্যার সময়। এই সময় কঠোর অধ্যবসায় ও পরিশ্রমের সময়। তাই ছাত্রজীবনে কোনো অর্থবহ লক্ষ্যকে সামনে রেখে সঠিক পথে পরিশ্রম ও মনপ্রাণ দিয়ে সাধনা করলেই লক্ষ্যে পৌঁছে জীবনকে সার্থক করা যায়। তাই ছাত্রাবস্থাতেই একটি লক্ষ্য স্থির করে তাকে বাস্তব রূপদান করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে সামনের দিকে অগ্রসর হতে হয়।

সমাজে ডাক্তারের প্রয়োজনীয়তা:

আমাদের দেশের সিংহভাগ মানুষই গ্রামাঞ্চলে অথবা মফস্বল এলাকায় বসবাস করেন।এইসব প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে রোগব্যাধি র চিকিৎসা র সু্যোগ খুবই অপ্রতুল, বেশিরভাগ মানুষই বিনা চিকিৎসায় মারা যান, বছরের বেশিরভাগ সময়েই তাঁরা নানান রকম রোগব্যাধিতে ভোগেন এইসব অঞ্চলে স্বাস্থ্যব্যবস্থা যেমন দুর্বল, তেমনই অপ্রতুল ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, এবং নার্সিং পেশার সঙ্গে যুক্ত মানুষ।

এইসব এলাকার মানুষের মনে স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সঠিক ধারণা ও নেই।তারা বেশিরভাগ সময়েই নানান ধরনের কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে নিজেদের স্বাস্থ্যের চরম ক্ষতি করে ফেলেন।এইসমস্ত মানুষের মনে সঠিক স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলাও আমাদের আশু কর্তব্য। শুধু গ্রাম বা মফস্বলি মানুষের জন্যই নয়, শহরাঞ্চলের মানুষেরও রোগভোগ পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তাদের জীবনযাত্রার উন্নয়নের পাশাপাশি।

তাই শুধু গ্রামের মানুষই নন, যেকোন মানুষের যেকোন শারীরিক সমস্যায়, তাদের রোগভোগে তাদের সেবা করতে চাওয়া থেকেই আমার এই লক্ষ্য নির্বাচন। আজকাল ডাক্তারি পেশার সঙ্গে যুক্ত মানুষের সঙ্গে সাধারণ মানুষের এক অদ্ভুত অনতিক্রম্য মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়েছে, যা কোনভাবেই বাঞ্ছনীয় নয়।

এ থেকে জন্ম নিচ্ছে পারষ্পরিক ঘৃণার- যা ডাক্তারির মত পবিত্র পেশার পক্ষে কলুষতাময়। যাঁরা মানুষের সেবা করার জন্য নিবেদিতপ্রাণ, তাঁদেরও যেমন তাঁদের কর্তব্যের কথা সর্বদা মাথায় রাখা উচিৎ ঠিক তেমনই যাঁরা এই ডাক্তারদের সেবা শুশ্রূষা তেই সুস্থ হয়ে উঠছেন তাঁদেরও এই পেশার মানুষদের প্রতি সম্মান এবং শ্রদ্ধা বজায় রাখা প্রয়োজন।

লক্ষ্য পূরণের ভিত্তিস্থাপনা:

ছোটবেলা থেকেই আমার ডাক্তার হয়ে ওঠার এক প্রবল বাসনা ছিল,আমি চাইতাম পীড়িত মানুষের সেবা করতে। শৈশবকাল থেকেই মানুষের দুঃখ কষ্ট যন্ত্রণা আমায় কষ্ট দিত, আমি তাদের ব্যথা উপশমের চেষ্টা করতাম। তাই সেইসময় থেকেই স্বপ্ন দেখতাম বড় হয়ে ডাক্তার হওয়ার। ডাক্তারি নিয়ে পড়ার ইচ্ছে কে বাস্তবায়িত করার উদ্দেশ্যেই বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার শুরু।

জীববিজ্ঞান এর উপর বরাবরই আমার এক বিশেষ টান অনুভব করেছি। তাছাড়া ডাক্তারি পড়ার স্বপ্ন কে সত্যি করার জন্য জীবনবিজ্ঞান কে অধিক গুরুত্ব দিয়ে পড়ার প্রয়োজন। ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেতে গেলে সর্বভারতীয় পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়া অবশ্য প্রয়োজনীয়, তাই জীবনবিজ্ঞানের পাশাপাশি রসায়ন এবং পদার্থবিজ্ঞানকেও সমান গুরুত্ব দিতে হচ্ছে।

ডাক্তারি পেশায় দুর্নীতি:

ডাক্তারি পেশা যেমন পবিত্র, প্রদীপের তলার অন্ধকারের মত এই পেশারও অনেক কালো দিক রয়েছে অন্তত আমাদের দেশে। আমাদের দেশের বেশিরভাগ ডাক্তারই বর্তমানে মানুষের সেবা করার চাইতে নিজের আখের গোছানোতে বেশি মনোযোগী হন। অতিরিক্ত ভিজিট রাখার ফলে অধিকাংশ দুঃস্থ মানুষই তাঁদের কাছথেকে ডাক্তারির পরিষেবা পাননা।

সরকারি হাসপাতালে পরিষেবা দিতেও অনেক ডাক্তার রাজি থাকেননা,তাঁরা প্রাইভেট প্র্যাকটিসেই বেশি স্বচ্ছন্দ্য বোধ করেন,ফলস্বরূপ বেশিরভাগ গরিব মানুষ ন্যূনতম স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হন,যা কখনোই কাম্য নয়। এছাড়া জাল ওষুধের রমরমা ব্যবসার চক্রে বহু ডাক্তারের নাম খবরে উঠে আসে, মানবদেহের অঙ্গ পাচার বা অর্গ্যান ট্রাফিকিং এর সঙ্গেও যুক্ত থাকেন অনেক ডাক্তার, যা ভীষণই লজ্জাজনক।

এইসব অন্ধকার দিক থাকা সত্ত্বেও এটা সত্যি যে ডাক্তার ছাড়া এই সমাজ অথর্ব হয়ে পড়বে। তাই আমি চাই একজন আদর্শ ডাক্তার হতে, যা বহু মানুষের মনে আবার আশার সঞ্চার ঘটাবে, আমি চাই ডাক্তারি পেশার সঙ্গে যুক্ত মানুষদের উপর সাধারণ মানুষের বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে, যা এই সমাজের জন্য আশু প্রয়োজন।

লক্ষ্যের পরিণতি:

আমি ডাক্তার হলে নিজের সুবিধার্থে শহরকে আমার কর্মস্থল করতে চাইবোনা, বরং বেছে নেব সুবিধাবঞ্চিত গ্রামাঞ্চল। সেখানে নিরক্ষর বা স্বল্পশিক্ষিত গ্রামবাসীর স্বাস্থ্য বিষয়ে অজ্ঞতার ফলে গ্রামের পর গ্রাম বিভিন্ন সংক্রামক মহামারির শিকার হয়ে শ্মশানে পরিণত হয়। হাজার হাজার মানুষ ঢলে পড়ে মৃত্যুর কোলে। আমার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হলে আমি এই মারণ যজ্ঞ থেকে উদ্ধার পেতে সেই মুমূর্ষ গ্রামবাসীর সেবা এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতার প্রসারে আত্মনিয়োগ করব।

এইসকল সংক্রামক ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ার আগেই বিশেষ উদ্যোগে গড়ে তুলব প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা। অসহায় গ্রামবাসীকে রক্ষা করব মহামারীর ছোবল থেকে। তাছাড়া এসবের পাশাপাশি সরকারি এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে তোলার চেষ্টা করব বিভিন্ন দাতব্য চিকিৎসালয়। সেইসব চিকিৎসালয়ে বিনামূল্যে যথাযথ মানের চিকিৎসা পাবে সেইসব মানুষ যাদের দুবেলা-দুমুঠো খাবার জোগাড়ের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয়।

হিপোক্রেটসের সেই মহান বাণীর মতন সকল আত্মস্বার্থ ভুলে আমি আত্মনিয়োগ করব আর্তের সেবায়। নিজের সকল অসুবিধা উপেক্ষা করে হাসিমুখে ছুটে যাবো রোগীর জীবন বাঁচানোর জন্য। পরার্থে আত্মোৎস্বর্গেই জীবনের চরম সার্থকতা বলে আমি বিশ্বাস করি, আর সেই কারণেই তো আমার এই পেশাচয়ন। 

উপসংহার:

আমরা আজ এই পারস্পারিক হিংসা হানাহানির যুগে,এই কঠিন সময়ে ভালো কিছু করার কথা, অন্যের বিষয়ে ভাববার কথা ভুলতে বসেছি। কেউ আজ আত্মস্বার্থের কথা ভুলে জাতির সেবায় আত্মনিয়োগের কথা ভাবলে সে সমাজে উপহাসের পাত্র হিসেবে বিবেচিত হয়। তবু আশা রাখি যে আজ যা আমার স্বপ্ন, আমার জীবনে তাকে বাস্তবায়নের পথে আমি সফল হব।

আর্তপীড়িত মানুষের দুঃখ কিংবা দারিদ্রের অভিশাপ সার্বিক রূপে দূর করার ক্ষমতা হয়তো আমার কখনও হবেনা, কিন্তু আমার এই লক্ষ্য পূরণের মাধ্যমে অসহায় মানুষকে রোগ যন্ত্রনার হাত থেকে রক্ষা করবার যে ক্ষমতা আমি আয়ত্ত করব- তা দিয়েই সকলের মঙ্গলসাধনের চেষ্টায় ব্রতী হব আমি, এই আমার জীবনের লক্ষ্য।


আমার জীবনের লক্ষ্য বা তোমার জীবনের লক্ষ্য রচনাটি পড়ে আপনার কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।বানান ভুল থাকলে কমেন্ট করে জানাবেন। সম্পূর্ণ রচনাটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

Print Friendly, PDF & Email

“আমার জীবনের লক্ষ্য বা তোমার জীবনের লক্ষ্য রচনা (আদর্শ ডাক্তার হওয়া) [PDF]”-এ 4-টি মন্তব্য

Saswata Baksi শীর্ষক প্রকাশনায় মন্তব্য করুন জবাব বাতিল