আমফান ঘূর্ণিঝড় রচনা (Amphan Essay in Bengali) [With PDF]

বোর্ডের পরীক্ষার্থীদের জন্য সেই বছরে ঘটে যাওয়া বিশেষ ঘটনা গুলি বাংলা পরীক্ষায় রচনার বিষয় হিসেবে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। উক্ত বছরের বিশ্বকাপ হোক কিংবা অলিম্পিক বা কোনো ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় তা বাংলা পরীক্ষায় রচনা হিসেবে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ সম্ভাব্য একটি প্রশ্ন।এবছরের এমনই এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমফান সুপার সাইক্লোন।তাই আজ প্রবন্ধ রচনার বিষয় সেই আমফান ঘূর্ণিঝড়।

আমফান ঘূর্ণিঝড় রচনা

ভূমিকা:

পৃথিবীতে সৃষ্টি তথা স্থিতির পাশাপাশি প্রলয়ও একইভাবে বিরাজমান। পৃথিবীর উপর সভ্যতার বোঝা যখন স্থানুর মতন চেপে বসে, হয়তো তখনই বিশ্বের মাথার উপর নেমে আসে বিপর্যয়ের খাঁড়া। বিপর্যয় প্রাকৃতিক এবং মনুষ্যসৃষ্ট উভয় ধরনেরই হতে পারে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে।যেমন খরা, বন্যা, ভূমিকম্প, সাইক্লোন, সুনামি ইত্যাদি।

প্রতিটি বিপর্যয়ই আপন বিধ্বংসী মহিমায় একটি সভ্যতাকে করে দিতে পারে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত। আমফান ঝড় বা সুপার সাইক্লোন হলো তেমনই একটি বিধ্বংসী প্রাকৃতিক বিপর্যয় যা ২০২০ সালের মে মাসের শেষ দিক নাগাদ ভারতবর্ষের উপকূলবর্তী দুটি রাজ্য উড়িষ্যা এবং পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে বয়ে গিয়ে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের জনজীবনকে প্রভূত ক্ষতি তথা সংকটের মুখে ফেলে দিয়েছিল।

এই আমফান ঝড় বা সুপার সাইক্লোনই হলো আজ আমাদের প্রধান আলোচ্য বিষয়। সমগ্র প্রবন্ধ জুড়ে আমরা এই ঝড়ের কারণ, তার উৎস, এর ফলাফল তথা এই বিপর্যয় থেকে উত্তরণের কথা যথাসম্ভব বিস্তারিতভাবে পর্যালোচনার চেষ্টা করব।

সুপার সাইক্লোন কি:

আমফান সম্পর্কে আলোচনার পূর্বে আমাদের সুপার সাইক্লোন সম্পর্কে জানা বিশেষ প্রয়োজন। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল সম্পর্কে অবহিত ব্যক্তি মাত্রেই জানেন যে পৃথিবীর নিরক্ষীয় অঞ্চলে অবস্থিত বিভিন্ন সাগর এবং মহাসাগরে বিভিন্ন ধরনের ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। এই ঝড়ের প্রধান এবং অন্যতম কারণ হলো সমুদ্রপৃষ্ঠে বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরে বায়ুর তাপমাত্রার নিয়ত পরিবর্তন এবং সেই পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট নিম্নচাপ এবং উচ্চচাপ বলয় জুড়ে বায়ুর নিয়ত আদান-প্রদান।

নিরক্ষীয় অঞ্চলে সৃষ্ট মহাসাগরীয় এই ঝড়গুলি পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সাগর ও মহাসাগরে নানাবিধ নামে পরিচিত। কোথাও মানুষ এদের টাইফুন বলে চেনে, কোথাও বা টর্নেডো, কোথাও কোথাও হারিকেন। একইভাবে আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগর তথা ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট এই ঘূর্ণাবর্ত গুলি সাইক্লোন নামে পরিচিত।

সাইক্লোন গুলি নিজেদের চরিত্রের বিভিন্ন দিক অনুসারে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত। বায়ুর গতিবেগ ৬০ কিলোমিটারের বেশি হলেই তা একটি সম্ভাবনাময় সাইক্লোন বা ঘূর্ণাবর্ত রূপে বিবেচিত হয়। এরপর বায়ুর গতিবেগ যত বাড়তে থাকে, সাইক্লোন ততই শক্তিশালী হয়ে বিধ্বংসী আকার ধারণ করে।

এইভাবে গতিবেগ বাড়তে বাড়তে যখন তা ২০০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা ছাড়িয়ে যায়, তখন একে বলা হয় একটি সুপার সাইক্লোন। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট আমফান ছিল এমনই একটি সুপার সাইক্লোন, যার সর্বোচ্চ গতিবেগ পৌঁছেছিল ২৬০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায়।

আমফান নামকরণ:

প্রত্যেক বছরই সংশ্লিষ্ট সাগর-মহাসাগর জুড়ে একাধিক ঘূর্ণাবর্ত বা সাইক্লোনের সৃষ্টি হয়ে থাকে। সৃষ্ট এই  সাইক্লোনগুলির আগমনের সময় তথা নির্দিষ্ট কারণ, অন্যান্য চারিত্রিক খুঁটিনাটি, তার প্রভাব ইত্যাদির বিস্তারিত বিবরণ সংক্রান্ত দলিল তৈরি এবং সংরক্ষণ হেতু প্রত্যেকটি সাইক্লোনের আলাদা আলাদা নামকরণের একান্ত প্রয়োজনীয়তা আছে।

২০০০ সাল থেকে এই ধরনের নামকরণের প্রথা বিশেষ ভাবে চালু হয়। ২০০৪ সালে এশিয়া মহাদেশে বঙ্গোপসাগর, ভারত মহাসাগর এবং আরব সাগর সংলগ্ন মোট আটটি দেশ পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং সহযোগিতার মাধ্যমে সাইক্লোনগুলির নামকরণের সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তীকালে এশিয়ার আরো পাঁচটি দেশ এই পারস্পরিক সমঝোতা চুক্তিতে যোগ দেয়।

সেই থেকেই বছরের শুরুর প্রথম সাইক্লোনের নামটি সাধারণতঃ ইংরেজি বর্ণমালার আদ্যবর্ণ ‘A’ দ্বারা শুরু হয়ে থাকে। আমাদের আলোচ্য ‘আমফান’ (উচ্চারণগতভাবে ‘উম্পুন’) নামটি ২০০৪ সালের থাইল্যান্ডের সুপারিশ অনুসারে গৃহীত হয়েছে। এই শব্দটির আভিধানিক অর্থ হলো ‘আকাশ’।

আমফানের উৎস ও তার সৃষ্টি:

বিশেষজ্ঞদের মতে সম্প্রতি বিশ্ব উষ্ণায়ন এর মাত্রা অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন মহাসাগর জুড়ে সৃষ্ট নানাবিধ ঘূর্ণাবর্তের সংখ্যাও বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াতে ভারতবর্ষের পূর্ব উপকূলে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট আমফান বিশেষজ্ঞদের মতের প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য বহন করে।

১৩ই মে নাগাদ উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর উপকূলে সৃষ্টি হয় সাধারণ একটি নিম্নচাপ বলয়ের যা সাইক্লোন তৈরীর অনুকূল পরিবেশ লাভ করে অনতিবিলম্বে একটি বিধ্বংসী ঘূর্ণাবর্তের রূপ নেয় এবং ভারতবর্ষের পূর্ব উপকূল দিয়ে প্রবেশ করে আবারও অনুকূল পরিবেশের দরুন শক্তি সঞ্চয় করে একটি সুপার সাইক্লোন এর আকার ধারণ করে।

ভূপৃষ্ঠ তথা সমুদ্রপৃষ্ঠ জুড়ে প্রতিনিয়ত বেড়ে চলা উষ্ণায়নই এই অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে বারবার সহায়তা করেছে। তাই সৃষ্টির শুরুতেই এই সাইক্লোন যেন আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় বিশ্বব্যাপী উষ্ণায়ন রোধ করে পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব ঠিক কতটা।

আমফানের আক্রমণ এবং বিপর্যয়:

বঙ্গোপসাগর তথা উপকূলবর্তী অঞ্চল থেকে শক্তি সঞ্চয় করে এই ঝড় প্রথম উড়িষ্যায় প্রবেশ করে ২০শে মে। তবে অন্যান্য বারের মতন উড়িষ্যাকে এইবার আমফানের কারণে সমূহ ক্ষতির মুখে পড়তে হয়নি। কিন্তু উড়িষ্যার ভূমি থেকে বিপুল পরিমাণে শক্তি বাড়িয়ে চলা আমফান ২১শে মে যখন পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করছে তখন তা সম্পূর্ণরূপে একটি সুপার সাইক্লোন এর আকার ধারণ করে ফেলেছে।

তবে যে কারণেই হোক দুর্ভাগ্যবশত পশ্চিমবঙ্গবাসী এই ধরনের একটি ঝড়ের অতর্কিত আক্রমণের জন্য প্রস্তুত ছিল না। যার ফল হয় ভয়ংকর। একটি মাত্র রাতের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ অংশের সার্বিক পরিকাঠামো সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পড়ে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাজধানী কোলকাতা।

যানবাহন তথা যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ এবং অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা একটি ঝড়ে স্তব্ধ হয়ে যায়। প্রবন্ধের পরবর্তী অংশে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমফানের এই বিধ্বংসী প্রভাব সম্পর্কে আমরা আলোচনা করব।

গণপরিবহনে বিপর্যয়:

বিশেষজ্ঞদের মতে আমফান ছিল গত ২৮৭ বছরের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী এবং বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়। তদুপরি আমাদের মনে রাখতে হবে যে সময়ে আমফান উড়িষ্যাতে তথা পশ্চিমবঙ্গে আছড়ে পড়েছে তা বিশ্বব্যাপী এক মহামারীর প্রাক্কাল। স্বাভাবিকভাবেই এই ঝড় প্রশাসনিক তৎপরতার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল না। 

 গণপরিবহন ব্যবস্থা তথা শহর জুড়ে মানুষের স্বাভাবিক আনাগোনা এই সময় এমনিতেই বিশেষ নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছিল। তবে জনমানুষের সুবিধার্থে গণপরিবহন যেটুকু চালু ছিল, তাও এই ঝড়ে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে যায়। আমফানের আঘাতে রাজধানী কলকাতা তথা বিভিন্ন জেলার রাজপথ জুড়ে বিশাল বিশাল গাছ ভেঙে পড়ে।

বিভিন্ন যেসব বাস ডিপোতে বাস দাঁড় করানো ছিল তার উপরেও ভেঙে পড়ে গাছ। কলকাতা শহরের রাজপথে পরিবেশ রক্ষার হেতু যে সমস্ত বড় বড় গাছ লাগানো হয়েছিল তার অধিকাংশই এই ঝড়ের আঘাতে উপড়ে পড়ে। তাছাড়া ঝড়ের আঘাতে সড়কপথে ভেঙে পড়ে ইলেকট্রিকের খুঁটি, ট্রাফিকের খুঁটি। উড়ে যায় বিভিন্ন বাস স্ট্যান্ড, নানা ছাউনী ইত্যাদি।

বিপর্যস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা:

গণপরিবহনের সাথে সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থাও আমফানের করাল গ্রাস থেকে রেহাই পায়নি। পরিবহন ব্যবস্থায় বিপর্যয় যেমন রাজ্যের একটি অংশকে অন্য অংশের থেকে সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন করে দেয়, তেমনভাবেই এই ঝড় রাজ্যের বিভিন্ন অংশে টেলি তথা ইন্টারনেট ব্যবস্থাকেও ঠেলে দেয় সংকটের মুখে।

রাজ্যের বিভিন্ন অংশে বিধ্বংসী ঝড়ের ফলে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার মূল স্তম্ভ বড় বড় টাওয়ারগুলি বহু ক্ষেত্রে বিকল হয়ে পড়ে। তার ওপর বর্তমান যুগের যোগাযোগ ব্যবস্থা তথা জীবন পরিচালনার অন্যতম উপাদান ইন্টারনেট পরিষেবাও সমূহ সংকটের সম্মুখীন হয়। টেলি ইন্টারনেট ছাড়াও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগের তার গুলি বহু জায়গায় নানাবিধ কারণে ছিঁড়ে যায়।

কোথাও কোথাও ইলেকট্রিক পোলে আগুন লেগে যাওয়ার দরুন ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যাহত হয়। রাজ্যজুড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থায় এই দ্বিমুখী বিপর্যয়ের ফলে বিভিন্ন সরকারি জরুরী পরিষেবা দানকারী সংস্থাগুলির সাথেও যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। কোথাও আগুন লেগে যাওয়ার পর দমকলকে যেমন খবর দেওয়া যায়নি, ঠিক তেমনি কোন মুমূর্ষু রোগীকে গণপরিবহনে বিপর্যয়ের দরুন বিনা চিকিৎসায় মারা যেতে হয়েছে।

ব্যাহত বিদ্যুৎ পরিষেবা:

আজ আমাদের জীবন ধারণের হয়তো সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপাদান হলো বিদ্যুৎ। আমফান ঝড়ের দরুন রাজ্যজুড়ে এই বিদ্যুৎ পরিষেবা সম্পূর্ণরূপে বিপর্যস্ত হয়েছিল। কোথাও ঝড়ের আঘাতে ইলেকট্রিকের খুঁটি ভেঙে পড়ে; কোথাও বা বিদ্যুৎ পরিবাহী তারের উপর বড় বড় গাছ পড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন হয়ে যায়।

কোথাও কোথাও শর্ট সার্কিটের দরুন আগুন লেগে গিয়ে বিদ্যুৎ পরিষেবা যেমন বিচ্ছিন্ন হয়, তেমনই মানুষ জীবন সংকটের মুখে পড়ে। বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুতের ট্রান্সফরমারে আগুন লেগে যেতে থাকে। বিদ্যুৎ পরিষেবায় সম্পূর্ণ বিপর্যয়ের কারণে বিভিন্ন অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবাও ব্যাহত হতে থাকে।

মানুষ দিনের পর দিন জীবন ধারণের জন্য বাড়িতে প্রয়োজনীয় জলটুকুও থেকেও বঞ্চিত হয়। বিভিন্ন রোগী যারা তাঁদের জীবনধারণের জন্য প্রতিনিয়ত বিভিন্ন যন্ত্রের উপর নির্ভরশীল ছিলেন, তারা জীবন সংকটের মুখে পড়েন। বহু মানুষের মৃত্যু ঘটে।

গ্রামাঞ্চলে আমফানের প্রভাব:

পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন গ্রামাঞ্চল যেমন সুন্দরবনে এই ঝড়ের ফলে বিভিন্ন নদী বাঁধ ভেঙে যায়। নদীর জল বইতে থাকে বিপদসীমার উপর দিয়ে। গ্রামের পর গ্রাম ভেসে যায় নদীর জলে। চাষের জমিতে ঢুকে যায় সর্বগ্রাসী নোনাজল।

তাছাড়া বিধ্বংসী ঝড়ের প্রভাবে বিভিন্ন মানুষ যারা কাঁচা বাড়ি, খড়ের কিংবা  টিনের ছাউনি দেওয়া বাড়িতে বসবাস করতেন তাদের মাথার উপরের ছাদটুকুও উড়ে যায়। সহায়-সম্বলহীন হয়ে মানুষ পথে নেমে আসে। আশ্রয়হীন খাদ্যহীন গ্রামবাসীরা কেবলমাত্র সামান্য ত্রাণের পথ চেয়ে বসে থাকে ব্যাকুল চোখে।

ধ্বংসস্তূপ থেকে উত্তরণ:

আমফানের পর শহর তথা সমগ্র রাজ্যের বিভিন্ন অংশ রীতিমত ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। রাজধানী শহর কলকাতার জনজীবন সম্পূর্ণরূপে স্তব্ধ হয়ে যায়। এমন সর্বগ্রাসী বিপর্যয় থেকে উত্তরণের উদ্দেশ্যে রাজ্যবাসী তথা প্রশাসনকে পরবর্তী কিছু দিনব্যাপী এক রকমের দক্ষযজ্ঞে অবতীর্ণ হতে হয়।

শহরের বিভিন্ন অংশে বিদ্যুৎ পরিষেবা ফিরিয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে, রাস্তায় পড়ে থাকা বিশাল বিশাল গাছগুলি সরানো, গণপরিবহন ব্যবস্থাকে পুনরায় স্থাপন করা ইত্যাদি কাজগুলি সম্পন্ন হতে হতে বেশ কিছুদিন কেটে যায়। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার কারণে জনরোষ দানা বাঁধতে থাকে।

টেলিযোগাযোগ তথা ইন্টারনেট সংযোগ চালু হতে আরও বেশ কিছুদিন সময় লাগে। অন্যদিকে রাজ্যের গ্রামাঞ্চলে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া তথা বাঁধ মেরামত, মানুষের বাড়িঘর মেরামতির কাজও ধীরে শুরু হয়। রাজ্য সরকারের কথায় এই ঝড়ে রাজ্যব্যাপী প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়।

উপসংহার:

বিধ্বংসী এই আমফান ঝড় যেন আরও একবার আমাদের সবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গেল প্রকৃতির কাছে মানুষ কতটা অসহায়। মানুষ তার সর্বাধুনিক প্রযুক্তিকে প্রয়োগ করেও প্রকৃতির এই রোষ থেকে রক্ষা পেতে পারেনা। তাই আজ মানব জীবনের প্রাথমিক কর্তব্য হওয়া উচিত পরিবেশ রক্ষা এবং বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ন্ত্রণ।

এই ঝড় যেন আরো দেখিয়ে দিয়ে গেল যে বিপর্যয় মোকাবিলায় আমাদের প্রশাসনিক ব্যবস্থার মূল ত্রুটিগুলি ঠিক কোন জায়গায়। তাই একদিকে যেমন আমাদের প্রকৃতিকে সংরক্ষনের কাজে অবতীর্ণ হতে হবে, অন্যদিকে বিপর্যয় মোকাবিলায় প্রশাসনিক ব্যবস্থার ত্রুটি গুলি নির্মূল করার দিকেও নজর দিতে হবে।

অনতিবিলম্বে জাতি-ধর্ম-বর্ণ ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে একসাথে হয়ে সভ্যতার সুরক্ষার দিকে নজর না দিলে, আমাদের ধ্বংস অবশ্যম্ভাবী।  প্রকৃতি যখন তার তাণ্ডবলীলা চালায় তখন সে কোন ভেদাভেদ করে না। প্রাকৃতিক দুর্যোগ তথা বিপর্যয় পৃথিবীতে থাকবেই। তাই প্রকৃতির নিয়মে আমাদেরও নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ না করে প্রকৃতি পরিবেশ এর সাথে সহাবস্থান এর নীতিকে অনুসরণ করতে হবে।


আমফান ঘূর্ণিঝড় প্রবন্ধ রচনাটি পড়ে আপনার কেমন লাগলো আপনার ব্যাক্তিগত মতামত কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানান।আমরা সব সময় সচেষ্ট থাকি সবার থেকে সুন্দর ও আপনার মনের মতো করে একটি রচনা তুলে ধরার।

এখানে নেই এমন রচনা পাওয়ার জন্য রচনাটির নাম কমেন্ট করে জানান।দ্রুততার সঙ্গে আমরা উক্ত রচনাটি যুক্ত করার চেষ্টা করবো।সম্পূর্ণ রচনাটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

Print Friendly, PDF & Email

“আমফান ঘূর্ণিঝড় রচনা (Amphan Essay in Bengali) [With PDF]”-এ 8-টি মন্তব্য

    • অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট বাদ দিয়ে রচনাটি সহজেই ছোটো করে নেওয়া যায়।আমরা সর্বদা বেশি তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করি,যাতে করে ছাত্রছাত্রীরা নিজের মতো করে গুছিয়ে লিখতে পারে।

      জবাব
    • হ্যালো Aryama, আমরা খুশি যে তোমার এই রচনাটি পছন্দ হয়েছে। তোমার অনুরোধটি গ্রহণ করা হল। আমরা খুব শ্রীঘ্রই রচনাটি যুক্ত করবো।

      ধন্যবাদ।

      জবাব

Rakesh Routh শীর্ষক প্রকাশনায় মন্তব্য করুন জবাব বাতিল