সমার্থক শব্দ [বিস্তারিত আলোচনা PDF সহযোগে]

বাংলা ভাষার ব্যাকরণের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শাখা রয়েছে। বাংলা ভাষাকে পূর্ণরূপে জানা এবং তার সার্থক প্রয়োগ নিমিত্ত বাংলা ব্যাকরণের এই সকল শাখা সম্পর্কে বিশেষভাবে অবগত হওয়া প্রয়োজন। সমার্থক শব্দ হলো বাংলা ব্যাকরণের এমনই একটি অবিচ্ছেদ্য গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা সম্পর্কে না জানলে বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডার সম্পর্কে জ্ঞান অসম্পূর্ণই থেকে যায়। তাছাড়া পৃথিবীর যেকোন ভাষার ক্ষেত্রেই সার্বিকভাবে সমার্থক শব্দ বা প্রতিশব্দ বা synonym -এর গুরুত্ব ব্যাপক। সমার্থক শব্দের এই গুরুত্বের কথা অনুধাবন করে আজ আমরা বাংলা ভাষার এই অংশটি সম্পর্কে পূর্ণরূপ আলোকপাতের উদ্দেশ্য নিয়ে একটি প্রতিবেদনের উপস্থাপনা করতে চলেছি।

সমার্থক শব্দ বৈশিষ্ট্য চিত্র

সমার্থক শব্দ কাকে বলে?

সমার্থক শব্দবন্ধটির মধ্যেই বাংলা ব্যাকরণের এই অসীম গুরুত্বপূর্ণ অংশটির সংজ্ঞা নিহিত আছে। সমার্থক শব্দ দ্বারা সাধারণভাবে সম বা সমান অর্থ বাহক শব্দকে বোঝায়। প্রকৃতপক্ষে বাংলা ভাষা ব্যবহারের সময় আমরা এমন বিভিন্ন শব্দের প্রয়োগ করে থাকি যাদের প্রয়োগ ভঙ্গি ভিন্ন ভিন্ন হলেও তারা একই অর্থ বহন করে। শুধুমাত্র বাক্য কিংবা পরিস্থিতির প্রয়োজনে সেই একই অর্থের ভিন্ন ভিন্ন শব্দরূপ ব্যবহৃত হয়। এই একই অর্থবোধক ভিন্ন ভিন্ন শব্দগুলিকে সমার্থক শব্দ বা প্রতিশব্দ বা সম অর্থবোধক শব্দ বলা হয়। ইংরেজি ভাষাতে সমার্থক শব্দ বা প্রতিশব্দকে synonym বলে অভিহিত করা হয়। 

ব্যাকরণে সমার্থক শব্দের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা:

বাংলা ভাষাকে সঠিকভাবে জানতে গেলে সর্বপ্রথম বাংলা ভাষার ব্যাকরণকে নির্ভুলভাবে বোঝা প্রয়োজন। এই ব্যাকরণ এর একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ, অপরিহার্য তথা অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো সমার্থক শব্দ বা প্রতিশব্দ। বাংলা ভাষায় এর ব্যাপক গুরুত্ব তথা প্রয়োজনীয়তা বর্তমান। তারই কয়েকটি নিম্নে আলোচনার চেষ্টা করা হলো। 

Responsive Advertisement
মাধ্যমিক সাজেশন 2024
মাত্র 592 টাকায় সব বিষয়
Product Image Buy Now
  • সমার্থক শব্দ বা প্রতিশব্দ নিজের বিভিন্ন রূপ দ্বারা একটি নির্দিষ্ট অর্থকে প্রকাশের মাধ্যমে আদপে বাংলা শব্দভান্ডারকেই সমৃদ্ধ করে।
  • বাংলা ভাষা প্রয়োগের ক্ষেত্রে একটি অত্যন্ত সাধারণ ত্রুটি হল গুরুচণ্ডালী দোষ। ভাষা গুরুচণ্ডালী দোষ দ্বারা দুষ্ট হলে সেই ভাষার মর্যাদা পূর্ণতা পায় না। সমার্থক শব্দ বা প্রতিশব্দের সমৃদ্ধি গুরুচণ্ডালী দোষ থেকে ভাষাকে মুক্তি দিতে পারে 
  • ভাষার প্রধান কাজ হল পরিস্থিতি অনুযায়ী মনের ভাব প্রকাশ করা। সমার্থক শব্দ পরিস্থিতির প্রয়োজন অনুযায়ী ভাষার কোন একটি নির্দিষ্ট অর্থকে ভিন্ন ভিন্ন রূপে উপস্থাপিত করতে পারে। ফলে পরিস্থিতি অনুযায়ী মনের ভাব প্রকাশ করা সমার্থক শব্দ বা প্রতিশব্দের সফল ব্যবহারে অত্যন্ত সহজ হয়ে যায়।
  • সমার্থক শব্দ ভাষাশৈলীর গঠনগত অবয়বকে দৃঢ় তথা বলিষ্ঠ করে। এর ব্যবহারে ভাষার নিয়ত ক্ষয়িষ্ণু রূপ দূর হয়।
  • সমার্থক শব্দের সকল ব্যবহারে বাক্যে মাধুর্যের ছোঁয়া লাগে। ফলে বাক্য শুধুমাত্র মনের ভাব প্রকাশের শুষ্ক মাধ্যম থেকে উন্নীত হয়ে সজীবতা লাভ করে।
  • প্রতিশব্দ প্রকৃতপক্ষে ভাষাকে সৌন্দর্য এবং রুচিশীল নান্দনিকতা দান করে।
  • কবিতার উপমা, শব্দ চয়ন, তথা ভাষার আতিশয্যে এই সমার্থক শব্দ গুলি গাম্ভীর্যের বিকাশ ঘটায়। 
  • সমার্থক বা প্রতিশব্দ সৃজনশীলতা মননশীল সাহিত্য সৃষ্টি এবং আধুনিক ধারার বিকাশ ঘটাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় সকল লেখক, সাহিত্যিক, ও কবিরা তাদের সৃষ্টিতে সমার্থক শব্দ বা প্রতিশব্দের সফল প্রয়োগ করে থাকেন।

শিক্ষার্থীদের সমার্থক শব্দ শিক্ষার গুরুত্ব:

ইংরেজি ভাষায় আমরা যাকে স্টক অফ ওয়ার্ড বলে থাকি, বাংলায় একপ্রকার তাইই হল সমার্থক শব্দ বা প্রতি শব্দের প্রকৃত রূপ। কোন ভাষা শিক্ষা এবং তার সার্থক প্রয়োগের জন্য এই স্টক অফ ওয়ার্ড-এর গুরুত্ব যে কতখানি তা বলাই বাহুল্য। তাই সমার্থক শব্দ বা প্রতিশব্দ শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর শব্দ ভান্ডারের শক্তি বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। সর্বোপরি এই শব্দভাণ্ডারের শক্তি দ্বারা শিক্ষার্থীর মধ্যে ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে আত্মপ্রত্যয় তথা সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটে। তাছাড়া সমার্থক শব্দ জানলে বিভিন্ন প্রকার লেখনীর ক্ষেত্রে একই শব্দকে বারবার ব্যবহার করতে হয় না।

দ্রষ্টব্য:

সমার্থক শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে এ কথা সবসময় মনে রাখা দরকার যে সমার্থক শব্দ বা প্রতিশব্দ গুলি মোটামুটি একই রকম অর্থ বহন করলেও অনেক সময় এদের অর্থের ক্ষেত্রে কিছু কিছু সূক্ষ্ম পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। এই সকল সূক্ষ্ম পার্থক্য শব্দ অধ্যয়নের সময় তাৎপর্যপূর্ণ না হলেও বাক্যে বা ভাষায় ব্যবহারের ক্ষেত্রে এই নির্দিষ্ট পার্থক্য অনুসারে শব্দের ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা প্রকট হয়ে ওঠে। তাই সমার্থক শব্দের চর্চা দ্বারা প্রতিটি শব্দের অর্থ ও বিশেষ করে তার ভাষাগত প্রয়োগের দিকটি সার্থকভাবে আয়ত্ত করা উচিত। 

নিম্নে বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত প্রচলিত বেশকিছু সমার্থক শব্দের উল্লেখসহ তাদের অর্থ গুলি আলোচনা করা হলো। 

Responsive Advertisement
মাধ্যমিক সাজেশন 2024
মাত্র 592 টাকায় সব বিষয়
Product Image Buy Now

সমার্থক শব্দ এবং তাদের অর্থসমূহ:

অগ্নি – কৃশানু, অনল, বিভাবসু, বহ্নি, হুতাশন, সর্বভুক, পাবক, বৈশ্বানর।

অতিথি –  অভ্যাগত, আগন্তুক, আমন্ত্রিত।

অঙ্গ – দেহ, বপু, কলেবর, কায়া, গাত্র, তনু, শরীর।

আনন্দ –  উল্লাস, হর্ষ, পুলক, আমোদ, প্রমোদ, আহ্লাদ।

আকাশ – অন্তরীক্ষ, অম্বর, গগন, নভ -, ব্যোম।

ইচ্ছা – অভিলাষ, অভিপ্রায়, অভিরুচি, অভীপ্সা, আকাঙ্ক্ষা, ঈসা, কামনা।

উনুন – আখা, আহা, চুল্লি, চুলা, উনান।

উত্তম – উৎকৃষ্ট, উপাদেয়, চমৎকার, ভাল, শ্রেষ্ঠ।

উদ্যান – বাগান, উপবন, বাগিচা।

উঠান – আঙ্গিনা, অঙ্গন, চাতাল, চত্বর।

কন্যা – আত্মজা, তনয়া, দুহিতা, নন্দিনী, মেয়ে, সুতা।

কপাল –  ললাট, ভাল, বিশেষ অর্থে ভাগ্য, অদৃষ্ট।

কান – কর্ণ, শ্রুতি, শ্রবণেন্দ্রিয়।

কিরণ – রশ্মি, প্রভা, আভা, দযুতি, জ্যোতি, অংশু, ময়ূখ, কর, বিভা।

কুকুর – সারমেয়, স্বা, কুকুর।

কাপড় – বস্ত্র, বসন, বাস, পরিধেয়, অম্বর।

গৃহ – আলোয়, আবাস, নিবাস, ভবন, ঘর, নিকেতন, বাটী, সদন, কুটীর।

গলা – কণ্ঠ, গ্রীবা।

গাল – কপােল, গণ্ডদেশ।

গাছ – বৃক্ষ, তরু, পাদপ, মহীরুহ, বিটপী।

গ্রাম – গা, পল্লী, লোকালয়, জনপদ।

ঘোড়া – তরঙ্গ, ঘোটক, হয়, বাজী, অশ্ব।

চন্দ্র – শশাঙ্ক, শশধর, শশী, সােম, সুধাংশু, সিতাংশু, হিমাংশু, বিধু, নিশাকর, চন্দ্রমা

চুল – অলক, কুন্তল, চিকুর, কেশ।

চোখ – আঁখি, নেত্র, নয়ন, লোচন, চক্ষু, অক্ষি, দর্শনেন্দ্রিয়।

ছাত্র – শিষ্য, শিক্ষার্থী, পড়ুয়া, বিদ্যার্থী।

জল – অম্বু, অপ, উদক, জীবন, পয় -, বারি, নীর, সলিল।

জন্তু – জানোয়ার, জীব, পশু, প্রাণী।

তীর – কূল, তট, পুলিন, সৈকত।

দেবতা – দেব, অমর, সুর, বৈকুণ্ঠবাসী। 

দন্ত – দশন, আশী।

দরজা – দ্বার, দুয়ার, ফটক।

দিন – দিবস, দিবা, অহ।

দুর্গা – শারদা, দশভুজা, পার্বতী, উমা, চণ্ডী।

নারী – রমণী, ললনা, মহিলা, বনিতা, স্ত্রী, বামা, অঙ্গনা, প্রমদা।

নক্ষত্র – তারা, তারকা, জ্যোতিষ্ক।

নাক – নাসিকা, নাসা, ঘ্রাণেন্দ্রিয়।

নদী – কল্লোলিনী, তরঙ্গিনী, তটিনী, নির্ঝরিণী, স্রোতস্বিনী, প্রবাহিনী।

পর্বত – গিরি, ভূধর, নগ, অদ্রি, অচল, মহীধর।

পৃথিবী – অবনী, ধরা, বসুধা, মেদিনী, ধরিত্রী।

পা – পদ, চরণ, পাদ।

পদ্ম – কমল, উৎপল, শতদল, পঙ্কজ, সরােজ, সরসিজ, কোকনদ।

পাখী – পক্ষী, খেচর, বিহগ, বিহঙ্গ, পক্ষধর, খগ, বিহঙ্গম।

পুত্র – ছেলে, তনয়, আত্মজ, সূত, নন্দন, কুমার, দুলাল।

পেট –  উদর, জঠর।

পুকুর – পুষ্করিণী, তড়াগ, জলাশয়, সরসী।

পাহাড় – গিরি, পর্বত, ভূধর, অচল, শৈল, শৃঙ্গধর।

পিতা – বাবা,  জনক, বাপ, জন্মদাতা, তাত।

পূজা – ভজন, অর্চনা, আরাধনা, বন্দনা।

বৃক্ষ – তরু, শাখী, মহীরূহ, বিটপী, পাদপ, গাছ, দ্রুম।

ব্যাঘ্র – শার্দূল, বাঘ, মৃগারি।

বিদ্যুৎ – ইরম্মদ, ক্ষণপ্রভা, চঞ্চলা, চপলা, দামিনী, বিজলী, সৌদামিনী।

বায়ু – বাতাস, অনিল, সমীর, সমীরণ, বায়, গন্ধবহ, পবন, মরুৎ।

বন – অরণ্য, কানন, জঙ্গল, বিপিন, কান্তার, অটবি।

বানর – কপি, শাখামৃগ, বাঁদর, প্লবগ।

ব্যাঙ – ভেক, দাদুরী, মন্ডুক।

বুক – বক্ষ, উর, বক্ষ -স্থল।

বন্ধু – মিত্র, সখা, সুহৃদ, বান্ধব।

ভভিনী – বোন, ভগিনী, সহােদরা, অনুজা/অগ্রজা।

ভ্রাতা –  ভাই, সােদর, সহোদর, অনুজ/অগ্রজ।

মাতা – অম্বা, মা, জননী, গর্ভধারিণী, প্রসবিনী, প্রসূতি।

মেঘ – অভ্র , অম্বুদ, কাদম্বিনী, ঘন, জলদ, জলধর, নীরদ, পয়ােদ, বারিদ, বারিধর।

মন্দির – দেবালয়, দেউল, দেবগৃহ, সুরালয়।

মৎস্য – মাছ, মীন।

সুখ – বদন, আর্স্য, আনন।

ময়ূর – শিখি, কলাপী।

মানুষ – মানব, মনুষ্য, নর, লােক।

রজনী – রাত্রি, নিশা, শর্বরী, বিভাবরী, ক্ষপা, ক্ষণদা, ত্রিযামা।

রাগ – ক্রোধ, কোপ, রােষ। শোণিত, রুধির।

লতা – লতিকা, ব্রততী, বল্লরী।

শিক্ষক – গুরু, আচার্য, শিক্ষাদাতা।

শত্রু – অরি, রিপু, অরাতি, বৈরী।

শিব – মহাদেব, ভব, মহেশ, কৃত্তিবাস, শম্ভু, শর্ব, ভবেশ।

ষাঁড় – ষাঁড়, বৃষ, বৃষভ।

সমুদ্র – পারাবার,  জলধি, বারিধ,  সাগর, অর্ণব, পাথার, রত্নাকর।

সূর্য – রবি, ভানু, ভাস্কর, আদিত্য, দিনমণি, তপন, সবিতা, মার্তণ্ড।

সাপ – সর্প, ফণী, আশীবিষ, অহি, উরগ, নাগ, ভুজঙ্গ, ভুজঙ্গম।

স্ত্রী – কান্তা, জায়া, ঘরণী, গৃহিণী, গিন্নি, বধু, বউ।

সিংহ – পশুরাজ, কেশরী, মৃগরাজ।

সরস্বতী – বাগদেবী, বীণাপাণি, সারদা, শুভ্রা, শ্বেতা, শ্বেতাম্বরা।

হাতী – করী, দন্তী, হস্তী, স্বিরজ, কুঞ্জর।

হরিণ – কুরঙ্গ, কুরঙ্গম, মৃগ, এণ।

ক্ষমা – মাপ, মার্জনা, কৃপা, দয়া, মায়া, অনুগ্রহ।

নির্ভরতা – অবলম্বন, অবলম্বন, আলম্ব, সহায়, ভরসা, আস্থা, অবস্থান, সম্বল।

সংবাদ – খবর, সমাচার, বার্তা, সন্দেশ, বৃত্তান্ত, বিবরণ, তথ্য।

সৌন্দর্য – শোভা, বাহার, চারুতা, চারিমা, চমক, আশ্চর্য, অবাক।

বিস্ময় – চমক, আশ্চর্য।

অবসর – অবকাশ, ফুরসত, মহলত, নিষ্কর্ম, নিষ্কর্ম, বিক্রিয়া।

স্নান – চান, নাওয়া, নাহা, অবগাহন, নিমজ্জন, ডুবন, অবগাহ, গোসল।

রান্না – রন্ধন, রাধা, পাক, ভক্তি, রসুই।

যন্ত্রণা – বেদনা, ব্যথা, যাতনা, দরদ, তাড়স, কষ্ট, শূল।

উক্তি – কথা, বচন, বাক্য, বাণী, কথন, জবান, ভাণতি, ভাষ, বাক, বুলি।

বিস্তার – বিস্তৃতি, প্রসারণ, ব্যাপ্তি, ব্যাপন।

গুচ্ছ – গােছা, থােক, থােক, গােছ, থােক,

তন্তু – আশ, রাবেয়া, লােম, রােম, অংশু।

প্রকাশ – প্রকটন, প্রকাশন, ফোটন, স্ফুরণ, বিস্ফার, স্ফুটন।

বাক্যে প্রয়োগ:

সমার্থক শব্দ বা প্রতিশব্দ শিখনের পাশাপাশি বাংলা ভাষায় বাক্যে সমার্থক শব্দ প্রয়োগের কৌশল না বুঝতে পারলে সমার্থক শব্দের শিক্ষা একপ্রকার অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তাই নিম্নে কয়েকটি সমার্থক শব্দ ও বাক্যে তাদের ব্যবহার সম্পর্কে একটি উদাহরণ মূলক আলোচনা করা হলো।

১) অগ্নি

অনল – আমি সুখের লাগিয়া এ ঘর বাঁধিনু অনলে পুড়িয়া গেল।

আগুন  : মনের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল।

সর্বভুক  : সর্বভুক আমাদের নিঃস্ব করে দিল।

শিখা  : জ্বেলে দে তোর বিজয় শিখা।

২) আকাশ

আসমান  : ‘নীল ‍সিয়া আসমান লালে লাল দুনিয়া।’

গগন  : গগনে গরজে মেঘ ঘন বরষা।

অম্বর  : অম্বরে এখন মেঘের ঘনঘটা।

৩) ইচ্ছা

অভিপ্রায়  : তোমাকে দেখার অভিপ্রায়ে গিয়েছিনু ‍সন্দ্বীপ।

বাসনা  : এ জীবনে অনেক বাসনাই অপূর্ণ রয়ে গেল।

সাধ  : বড় সাধ জাগে একবার তোমায় দেখি।

৪) উত্তম 

উৎকৃষ্ট  : ব্যাকরণ বইটি নিঃসন্দেহে উৎকৃষ্ট মানের।

ভালো  : জব্বার সাহেব বড় ভালো মানুষ ছিলেন।

উপাদেয়  : ‍শিশুদের বৃদ্ধির জন্য উপাদেয় খাবার দরকার।

শ্রেষ্ঠ  : ‘গীতাঞ্জলি’ রবীন্দ্রনাথের শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ।

বরেণ্য  : শামসুর রহমান দেশবরেণ্য কবি।

৫) কলহ 

ঝগড়া  : ঝগড়া করা গর্হিত কাজ।

বিবাদ  : ছাত্রদের বিবাদ মেটাতে প্রধান শিক্ষক এগিয়ে এলেন।

বিরোধ  : দুই নেত্রীর বিরোধ ক্রমশই ধ্বংসাত্নক রুপ নিচ্ছে।

কোন্দল  : অভ্যন্তরীন কোন্দল দলের ভিতকে দুর্বল করে তোলে।

দ্বন্দ  : কাদম্বিনী ও হেমাঙ্গিনীর মধ্যকার দ্বন্দ্ব ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকল।

৬) পৃথিবী 

ধরা  : প্রাচুর্যের দম্ভে অনেকেই ধরাকে সরা জ্ঞান করে।

বিশ্ব  : বাংলা ভাষার খ্যাতি এখন বিশ্বময়।

বসুমতি  : ‘বসুমতি কেন তুমি এতই কৃপণা?’

ধরণী  : মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্যদেব এই ধুলার ধরণীতে জন্ম নিয়েছিলেন।

 ভুবন  : ’মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে।’

৭) মৃত্যু

মরণ  : মরণ আমায় ডাক দিয়েছে যেতে হবে ভাই।

নিপাত  : সন্ত্রাসবাদ নিপাত যাক।

নিধন  : বর্বর পাকবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালিদের নির্বিচারে নিধন করেছে।

চিরবিদায়  : সুন্দর এ পৃথিবী ছেড়ে একদিন  আমাদের সবাইকে চিরবিদায় নিতে হবে।

পরলোকগমন  : বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯৪১ সালে পরলোকগমন করেন।

৮) ধন

অর্থ  : অর্থ সকল অনর্থের মূল।

দৌলত  : দৌলতের মোহ কজনে ত্যাগ করতে পারে?

টাকাকড়ি  : চাই না আমি টাকাকড়ি, দাও শুধু সুখ।

সম্পদ : দুটি হালের গরু, বিঘা তিনেক জমি এই তার সম্পদ।

বিত্ত  : বিত্তের মোহ লোকটিকে অন্ধ করে রেখেছে।

৯) চন্দ্র

শশী : চেয়ে দেখ পূর্বাকাশে পূর্ণিমার শশী।

চাঁদ : মেঘের আড়ালে চাঁদ লুকোচুরি খেলছে।

সুধাকর : এই নিশীথে সুধাকর জেগে আছে।

নিশাপতি : নিশাপতি তুমি কেন এতই শোভন।

চন্দ্রিমা : হে চন্দ্রিমা এই রাতের সাক্ষী থেকো।

১০) গৃহ

ঘর : আমার এ ঘর ভাঙ্গিয়া গিয়াছে।

আবাস : পৃথিবী মানুষের জন্য স্থায়ী আবাস নয়।

নিকেতন : রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত শান্তি নিকেতন একটি প্রসিদ্ধ স্থান।

সদন : মাতৃসদন ছেড়ে তখন তারা রাস্তায় নামল।

ধাম :  এ ধরাধাম ছেড়ে একদিন সকলকেই চলে যেতে হবে। 


আমাদের আজকের এই উপস্থাপনায় বাংলা ভাষায় বহুল ব্যবহৃত কিছু শব্দ এবং তাদের কয়েকটি সমার্থক শব্দ উল্লেখপূর্বক বাংলা ভাষায় সমার্থক শব্দ বা প্রতিশব্দের সংজ্ঞা এবং তার প্রয়োজনীয়তা বুঝিয়ে দেওয়ার সংক্ষিপ্ত প্রচেষ্টা করা হলো। তাছাড়া বাংলা ভাষায় বাক্যের বন্ধনীতে কিভাবে এই সকল শব্দের প্রয়োগ ঘটাতে হয় সে সম্পর্কেও কিছু উদাহরণ এখানে দেওয়া হলো। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বাংলা ভাষায় উপরে উল্লেখিত শব্দ ও তাদের প্রতিশব্দ গুলি ছাড়াও অন্যান্য অসংখ্য শব্দ ও তাদের সমার্থক শব্দের ব্যবহার বর্তমান রয়েছে।

আশাকরি, আমাদের এই উপস্থাপনা আজকের সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ছাত্র-ছাত্রীদের সকল বিভ্রান্তি দূর করে একটি সার্বিক ধারণা দানে সক্ষম হবে। তাছাড়া এই উপস্থাপনা সম্পর্কে আপনার মতামত নিচে কমেন্টের মাধ্যমে বিশদে আমাদের জানান। আপনাদের মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চেষ্টা করব আপনাদের মতামত অনুযায়ী আমাদের লেখনীকে আরও উন্নত করে তোলার। তাছাড়া যদি এমনই অন্য কোন বিষয় সম্পর্কে পড়তে চান সে ব্যাপারেও আমাদের অবগত করুন। আমরা অতি সত্বর আপনার সেই অনুরোধের বিষয়টি পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করব। ধন্যবাদ।

Print Friendly, PDF & Email

রাকেশ রাউত

রাকেশ রাউৎ বাংলা রচনা ব্লগের নির্বাহী সম্পাদক। ইনি শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী একজন মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার। ইনি বাংলা রচনার সম্পাদকীয় দলকে লিড করেন। রাকেশ দীর্ঘ ৫ বছর যাবৎ বাংলা কনটেন্ট এডিটিং এর সাথে যুক্ত আছেন। ইনি বাংলা রচনা ছাড়াও নামকরণ এবং বাংলা জীবনীর মতো নামকরা সাইটের সম্পাদকীয় দলের একজন অন্যতম সদস্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক পোস্ট