শিক্ষা বিস্তারে গণমাধ্যম রচনা (Shiksha Bistare Ganamadhyam) [PDF]

সাধারণ মানুষের শিক্ষার ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।সমাজে যারা অশিক্ষিত বলে গন্য তাদের মধ্যেও শিক্ষার বিস্তার হয় দূরদর্শনের মতো গণমাধ্যমের মধ্য দিয়ে।রেডিও শুনে কৃষক বন্ধুরা সার কীটনাশক সহ উন্নত চাষের পদ্ধতি থেকে শুরু করে জানতে পারেন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি।গণমাধ্যম গুলি শিক্ষা বিস্তারে কতখানি সার্থক সে নিয়েই আজকের উপস্থাপন শিক্ষা বিস্তারে গণমাধ্যম প্রবন্ধ রচনা।

শিক্ষা বিস্তারে গণমাধ্যম রচনা বৈশিষ্ট্য চিত্র

ভূমিকা:

“কত অজানারে জানাইলে তুমি,
কত ঘরে দিলে ঠাঁই
দূরকে করিলে নিকট, বন্ধু,
পরকে করিলে ভাই।”

সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে মানুষের ব্যাবহারিক জীবনেও ঘটে চলেছে নানা ধরনের পরিবর্তন।শিক্ষা পদ্ধতিতে যুক্তি নতুন নতুন প্রয়োগ কৌশল।

অতীতে শিক্ষার প্রধান মাধ্যম ছিল গ্রন্থ ও গুরুকৃত উপদেশ নির্দেশাবলী।এই মাধ্যমে মানুষ আমোদ প্রমোদ ও চিত্র বিনোদনের সুযোগ পেয়েছে অন্য দিকে এগুলির মাধ্যমে নীতিবোধ,বিবেকবোধ ইত্যাদি পরোক্ষ শিক্ষাও লাভ করেছে।কিন্তু এই সমস্ত উপায়ে সুপরিকল্পিত ভাবে গণ শিক্ষার কোনো সম্ভাবনা ছিলনা।

বর্তমান যুগে বিশ্ব বিজ্ঞানের অনন্য বিজয়ের ফলে সংবাদ পত্র,বেতার,দূরদর্শন ইত্যাদির আগমন ঘটেছে।গণশিক্ষা আধার হিসেবে এগুলির গুরুত্ব আজ সার্বজনীন স্বীকৃত।

গণমাধ্যমের স্বরূপ:

“গণ” কথাটির অর্থ হলো আপামর জনসাধারণ।ভারতের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে এই সাধারণ মানুষের এক বিরাট অংশ অক্ষর জ্ঞানহীন।

জ্ঞান অর্জনের জন্য তাদের গ্রন্থ পাঠের কোনো সুযোগ নেই।ফলে এই সব সাধারণ মানুষের কাছে শিক্ষার জন্য সংবাদ মাধ্যমের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।এই সমস্ত মাধ্যম গুলিই এক কথাই গণমাধ্যম। শোনা ও দেখা উভয়ের সংযোগে দূরদর্শন।এই দুই মাধ্যম মানুষের মনে সর্বাপেক্ষা গভীর ছাপ ফেলার ক্ষমতা রাখে।

গণমাধ্যম ও শিক্ষা:

সামাজিক পরিস্থিতিতে পিছিয়ে থাকা সর্বাধিক জনসমষ্টির মধ্যে চিন্তা ভাবনা ও বিশ্লেষণের বীজ রোপন করতে গণমাধ্যম গুলি সর্বাপেক্ষা ক্ষমতাবান।গণমাধ্যম গুলিই অর্ধশিক্ষিত মানুষের মনের অন্ধকার দুর করে।

গণমাধ্যম গুলির সাহায্যে নিরক্ষর সাধারণ মানুষ দেশ বিদেশের মানুষ ও প্রকৃতির সাথে পরিচিত হয়।তাদের বিচিত্র ধরনের রীতি নীতি,আচার আচরণ ও ভাষা শুনতে পায়।তাদের সংকীর্ণ মন মুক্তি পায় বিশাল বিশ্বে।বিভিন্ন পেশার মানুষ গণমাধ্যমের সাহায্যে উপকৃত হয়।একজন সাধারণ কৃষক জানতে পারে উন্নত সার ও কীটনাশকের খবর, আবহাওয়া সম্পর্কে নানা প্রয়োজনীয় খবর।

বিভিন্ন গণমাধ্যম ও তাদের ভূমিকা:

বর্তমান সময়ে শিক্ষা বিস্তারে প্রধান গণমাধ্যম গুলি হল সংবাদপত্র,বেতার, দূরদর্শন।এই জ্ঞান নির্ভর যুগে শিক্ষিত জন মানুষে সংবাদ পত্র জীবনের দর্পণ স্বরূপ রাজনীতি, সংস্কৃতি,অর্থনীতি,ইত্যাদির সম্পর্কে পরিচয় লাভের ফলে মানুষ দেশ বিদেশ সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান লাভ করে।

তবে শিক্ষা বিস্তারে দুটি মাধ্যম বিশেষ অগ্রগণ্য — বেতার ও দূরদর্শন।গ্রামীণ কর্মক্লান্ত নিরক্ষর মানুষ সারাদিন হাড় ভাঙা খাটুনির পর সন্ধ্যায় রেডিওর সামনে বসে অবসর বিনোদন করেন। কৃষি কথার আসর ,পল্লিকথা, চাষী ভাইদের জন্য অনুষ্ঠান,নাটক, যাত্রা ইত্যাদির মাধ্যমে তারা জ্ঞান লাভ করে।

অন্যদিকে দূরদর্শন বস্তুকে মানুষের দৃশ্য পটে আনে এর ফলে মানুষ বাস্তব জ্ঞান লাভ করে নিজেদের জীবনকে সুন্দর করে সাজিয়ে তোলে।বর্তমানে চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন একভাবে teaching aid এর ভূমিকা পালন করে। চরিত্র গঠন, নীতি ,শিক্ষা, সাহিত্য বিজ্ঞান ,সাংস্কৃতিক বোধ গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও চলচ্চিত্রের ভূমিকা অস্বীকার করার অবকাশ নেই।

গণমাধ্যমের সীমাবদ্ধতা:

গণমাধ্যম গুলির অবদান কার্যকরী হয় তখনই,যখন পরিচালক মন্ডলী জনদরদী সৎ ও নিষ্ঠাবান হয়।সাধারণ মানুষের মেজাজ,মর্জি,মন,মানসিকতার দ্বারা পরিচালিত না হলে, উদ্দেশ্য কখনই সফল হতে পারেনা।

সাধারণের সাথে অন্তরের সংযোগ অনুভব করতে না পারলে এধরনের শিক্ষা প্রয়োগের কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করা সম্ভব হয়না।লোক শিক্ষার ক্ষেত্রে পরিবেশনা ভাষার ব্যবহার, বিষয় নির্বাচনের প্রশ্নটি অত্যন্ত গুরুতবপূর্ণ। গণমাধ্যম গুলির এসব দিকেও নজর রাখা দরকার — সেই সাথে যুক্ত হওয়া দরকার রাজনৈতিক প্ররোচনা থেকে নিরক্ষরতা অবশ্যই গণমাধ্যমের বিশ্বাস যোগ্যতাকে সুদৃঢ় করে।

উপসংহার:

নানা ধরনের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও গণ শিক্ষার ক্ষেত্রে গণমাধ্যম গুলির অবদান অনস্বীকার্য।ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে গণমাধ্যমের ভূমিকা আরও অনেক শক্তিশালী হওয়া দরকার।

যেহুতু টেলিভিশন এর মতো শক্তিশালী মাধ্যমটি এখনও বহুলাংশে বেসরকারি নিয়ন্ত্রণের অধীনে সেহুতু সেসব পক্ষকেও এব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। গণপেক্ষতার উপর নির্ভর করছে শিক্ষা বিস্তারের স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি।আমাদের সকলের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন পূরণ করতে তা অত্যন্ত জরুরি।


শিক্ষা বিস্তারে গণমাধ্যম রচনা-২ (৪০০-৪৫০ শব্দের মধ্যে)

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য ৪০০-৪৫০ শব্দের মধ্যে গুছিয়ে লেখা।

ভূমিকা:

বর্তমান যুগে সময় যতই এগোচ্ছে, শিক্ষা বিস্তারের প্রয়োজনীয়তা সমগ্র বিশ্বজুড়ে বেড়ে চলেছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু প্রথাগত প্রচলিত মাধ্যম দ্বারা পৃথিবীর সকল মানুষের কাছে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়া সবসময় সম্ভব হয় না। এই ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে আমাদের গণমাধ্যমগুলি। গণমাধ্যম বলতে বোঝায় সেই সকল মাধ্যম যা শারীরিক উপস্থিতি ছাড়াই প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষে মানুষে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে। প্রযুক্তিগত এই যোগাযোগের সাহায্য নিয়ে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে বর্তমানে শিক্ষার বিস্তার ঘটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। মনে করা হয় অদূর ভবিষ্যতে গণমাধ্যমই শিক্ষাপ্রচারের প্রধান অবলম্বন।

শিক্ষার প্রসারে গণমাধ্যমের গুরুত্ব:

সাধারণভাবে গণমাধ্যম বলতে প্রথমেই যা আমাদের মাথায় আসে তাহলে টেলিভিশন বা দূরদর্শন। তারও পূর্বে মানুষ গণমাধ্যম বলতে বেতারযন্ত্র বুঝত। তবে সময় যত এগিয়েছে গণমাধ্যমের সংজ্ঞাও ততোই বদলেছে। বিশেষ করে একবিংশ শতাব্দীতে বিশ্বজুড়ে ডিজিটাল এবং ইন্টারনেট রেভলিউশনের পরে মানুষ গণমাধ্যম বলতে প্রধানত স্মার্টফোন কিংবা ইন্টারনেট সংযোগসম্পন্ন ল্যাপটপ কিংবা ডেক্সটপ বুঝে থাকে। এই সকল যন্ত্রগুলি মানুষকে ইন্টারনেটের ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার প্রচার প্রসারের ব্যাপক সুযোগ করে দিতে পারে। বর্তমানে এই সকল গণমাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে সরকারি এবং ব্যক্তিগত স্তরে প্রচুর শিক্ষাবিস্তার সংক্রান্ত উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে। প্রথাগত এবং অপ্রচলিত শিক্ষা মাধ্যম দুইই গণমাধ্যমে শিক্ষার গুরুত্বের কেন্দ্র।

সমাজ সচেতনতার প্রসার:

আমরা সকলেই জানি শিক্ষার আলো যতই মানুষের কাছে পৌঁছবে মানুষ ততই অবচেতন মনের অন্ধকার থেকে আলোর দিকে উঠে আসবে। গনমাধ্যমের দ্বারা শিক্ষায় সমাজের সর্বস্তরের কাছে শিক্ষার আলো এমনভাবেই পৌঁছে দেওয়া সম্ভব যাতে সমাজের সকল মানুষের মধ্যে শিক্ষার বিকাশ সার্বিকভাবে হতে পারে। বিশ্বব্যাপী গৃহীত এইরকমই বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে পৃথিবীর অসংখ্য উন্নত দেশগুলির মানুষের মন থেকে কুসংস্কার এবং সংকীর্ণ মানসিকতার দূরীকরণ ঘটানো সম্ভব হয়েছে। আমাদের উপমহাদেশেও শিক্ষা প্রসারের নিমিত্ত গনমাধ্যমের ব্যবহার শুরু হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট অপ্রতুল। তবে যথাযথ উদ্যোগ নিয়ে যদি গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে শিক্ষার প্রসার ঘটানো যায়, তাহলে তার পাশাপাশি সমাজ সচেতনতার প্রসারও ঘটবে।

গণমাধ্যমে শিক্ষার সুবিধা এবং অসুবিধাসমূহ:

গণমাধ্যমে শিক্ষার অসংখ্য সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে। প্রথমত গণমাধ্যম দ্বারা শিক্ষাবিস্তার হলে শিক্ষা কোন একটি নির্দিষ্ট বয়সের গণ্ডির মধ্যে আটকে থাকে না। সমাজের সকল স্তরে শিক্ষার বিস্তার ঘটায় একইসাথে সমগ্র সমাজের উত্তরণ ঘটে। এছাড়া গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে বিভিন্ন দুর্যোগের সময়েও নিরবিচ্ছিন্নভাবে সুচারু শিক্ষাদান করা যায়। তার সাম্প্রতিকতম উদাহরণটি পাওয়া গেছে করোনা মহামারীর সময়ে। অন্যদিকে অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলির মোট জনসংখ্যার একটি বড় অংশ এখনো গণমাধ্যমকে বিলাসিতা বলে মনে করায় এইসব স্থানে শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমকে ব্যবহারের পথে বিভিন্ন প্রতিকুলতা রয়েছে। তাছাড়া গণমাধ্যম শিক্ষাকালীন সময়ে মনোযোগে বিচ্যুতি ঘটাতে পারে বলেও অনেকে মনে করেন।

উপসংহার:

গণমাধ্যম হল শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতের অন্যতম অবলম্বন। তাই গণমাধ্যমে শিক্ষা বিস্তারের জন্য যাবতীয় প্রতিকূলতাকে দূর করে পৃথিবীর প্রতিটি দেশকে এই আধুনিক মাধ্যমের উপযোগী হয়ে উঠতে হবে। সমাজে শিক্ষার সার্বিক বিস্তারের মাধ্যমে সর্বাত্মক উন্নতির কথা চিন্তা করলে গণমাধ্যমে শিক্ষার বিকল্প কিছু হতে পারে না। তার কারণ গণমাধ্যমের প্রধান বৈশিষ্ট্যই হলো কবির ভাষায়-

“কত অজানারে জানাইলে তুমি
কত ঘরে দিলে ঠাঁই
দূরকে করিলে নিকট বন্ধু
পরকে করিলে ভাই।”


শিক্ষা বিস্তারে গণমাধ্যম রচনাটি পড়ে আপনার কেমন লাগলো আপনার ব্যাক্তিগত মতামত কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানান। আমরা সব সময় সচেষ্ট থাকি সবার থেকে সুন্দর ও আপনার মনের মতো করে একটি রচনা তুলে ধরার। এখানে নেই এমন রচনা পাওয়ার জন্য রচনাটির নাম কমেন্ট করে জানান।দ্রুততার সঙ্গে আমরা উক্ত রচনাটি যুক্ত করার চেষ্টা করবো। সম্পূর্ণ রচনাটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

Print Friendly, PDF & Email

“শিক্ষা বিস্তারে গণমাধ্যম রচনা (Shiksha Bistare Ganamadhyam) [PDF]”-এ 5-টি মন্তব্য

  1. হ‍্যা্ঁ,ভাই আপনার একটি রচনা পড়েছি -ভাল লাগলো। ছোটদের উপযোগী দারুন লেখা সন্দেহ নেই।আপনার লিঙ্ক টা আমাকে দিলে আরো সুবিধে হয়।ধন‍্যবাদ।

    জবাব

মন্তব্য করুন