banglarachana.com এ আপনাকে স্বাগত জানাই।পঞ্চম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বাংলা সিলেবাসের সমস্ত ব্যাকরণ, গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা, পত্রলিখন pdf সহকারে পাওয়ার জন্য আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন। নিয়মিত নতুন নতুন লেখা আপডেট করা হয় এখানে।আমাদের পক্ষ থেকে আজকের নতুন প্রবন্ধ রচনা – কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
সূচি তালিকা
ভূমিকা:
বাংলা কথা সাহিত্যে বঙ্কিমচন্দ্রের পরেই যাঁর নামটি মনে পড়ে যায়, তিনি কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তাঁর সাহিত্য কর্মের জন্য তিনি পাঠকগণের কাছে কথা সাহিত্যিক হিসেবে পরিচিত।পাঠক হৃদয়ে তাঁর যথার্থ স্থান।সাহিত্য ক্ষেত্রে লক্ষ লক্ষ পাঠকদের মনে তিনি নিজ মহিমায় আসীন।বাংলা সাহিত্যে শরৎচন্দ্র হলেন অপরাজেয় কথাশিল্পী।
সংক্ষিপ্ত পরিচয়:
কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৫ সেপ্টেম্বর ১৮৭৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন হুগলি জেলার দেনানন্দপুর নামের এক গ্রামে।পিতা মতিলাল চট্টোপাধ্যায়, মাতা ভুবেনেশ্বরী দেবী।শরৎচন্দ্র শৈশবে তাঁর পিতার থেকেই বাংলা সাহিত্য সাধনার প্রেরণা পান। তাঁর শিক্ষা জীবনের প্রথম অংশ তাঁর নিজের গ্রামেই কাটে।পরবর্তীতে বাকি অংশ টুকু কাটে বিহারের ভাগলপুরে মামার বাড়িতে।
এনার অনেক রচনাতেই মামা বাড়ি ভাগলপুরের মানুষ, প্রকৃতি,অরণ্য,নদী যথেষ্ট স্থান অর্জন করে নিয়েছে।পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না তাই থাকার অভাবে এফ.এ. পরীক্ষা দিতে পারেননি তিনি।টাকার অভাবে উচ্চ শিক্ষার পথ একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। ভবঘুরে প্রকৃতির শরৎচন্দ্র যৌবনে জীবিকা অর্জন করার তাগিদে অনেকটা সময় কাটান ব্রহ্ম দেশের রাজধানী রেঙ্গুনে।বাংলা সাহিত্যে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর প্রবাস জীবন ত্যাগ করে কখনও হাওড়া,কখনও বা কলকাতায় বাস করেন।
শরৎ – সাহিত্যের বেশ কিছু দিক:
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যের একজন অমর কথাশিল্পী। তাঁর সাহিত্যের প্রধান বিষয় সমাজ ও পল্লী জীবন। অসহায় দুর্বল নারী ও পুরুষের নানা সমস্যার ছবি তুলে ধরেছেন তাঁর সাহিত্যের মধ্যে। তাঁর উপন্যাসের মধ্যে যেমন রয়েছে সমাজের নিপীড়ন ও নির্মম অত্যাচারের চিত্র,তেমনই রয়েছে অসহায় নারী জাতির প্রতি তাঁর মহান দরদি হৃদয়ের প্রকাশ।
বিধবা ও গ্রামের অবহেলিত বঞ্চিত নারীদের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা ও মমতা তুলনাহীন।নারীদের নির্যাতন,সামাজিক বৈষম্য ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন উচ্চকণ্ঠ।কাহিনী নির্মাণের অসামান্য দক্ষতা ও সাবলীল ভাষা তাঁর বাংলা সাহিত্যে জনপ্রিয়তা ও খ্যাতির কারণ।
রচনাবলী:
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম প্রকাশিত গল্প হল কুন্তলীন পুরস্কার প্রাপ্ত “মন্দির” গল্পটি।১৯০৭ সালে এনার প্রথম উপন্যাস “বড়দিদি” ভারতী পত্রিকাতে প্রকাশিত হওয়ার পরেই সাহিত্যজগতে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়তে একেবারেই সময় লাগেনি।এরপর একে একে চরিত্রহীন,দেবদাস,বিপ্রদাস,শ্রীকান্ত,দেনা পাওনা,শেষ প্রশ্ন, দত্তা,পথের দাবী,বামুনের মেয়ে,গৃহদাহ,স্বদেশ ও সাহিত্য, প্রভৃতি উপন্যাস ও উপন্যাসের মতো বড় গল্প রচনা করে আরও খ্যাতির অধিকারী হন।এগুলির মধ্যে শ্রীকান্ত, চরিত্রহীন, গৃহদাহ, দেনা-পাওনা এবং পথের দাবী ভীষণভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করে। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য ছোটগল্প অভাগীর স্বর্গ ও মহেশ।
বিষয়বস্তু ও পটভূমি:
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত উপন্যাসে যেমন অনেক বিচিত্র চরিত্রের সমাবেশ ঘটেছে, তেমনই দেখা গেছে বিষয় বৈচিত্র্যের প্রকাশ।সমস্যা মূলক উপন্যাস – শ্রীকান্ত, শেষপত্র,গৃহদাহ প্রভৃতি;পারিবারিক উপন্যাস – বিন্দুর ছেলে,বড়দিদি,মেজদি প্রভৃতি; দেশাত্মবোধক উপন্যাস – পথের দাবী;সামাজিক উপন্যাস – বামুনের মেয়ে,পল্লিসমজ ইত্যাদি।
একজন ব্যক্তিমানুষের মন পল্লীর সংস্কারাচ্ছন্ন মানসিকতার আঘাতে ঠিক কতখানি রক্তাক্ত হতে পারে, তারই রূপচিত্র তুলে ধরেছেন তিনি তাঁর রচনায়।তবে এনার উপন্যাস মূলত বাঙালি পরিবার ও সমাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
উপসংহার:
সমাজে বাস করা আপামর জনসাধারণকে নিয়ে লেখা সাহিত্যই গণসাহিত্য।গঙ্গাকে মর্তে নামিয়ে এনেছিলেন ভাগীরথ।কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ঠিক যেন গনসাহিত্য ধারার ভগীরথ।তিনি তাঁর রচনায় আপামর সাধারণ মানুষকে স্থান দিয়ে গনসাহিত্য ধারার পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন।১৯৩৮ সালের ১৬ জানুয়ারি কলকাতা শহরে এনার মৃত্যু হয়।শরৎচন্দ্রের মহাপ্রয়ানে কবিগুরু রবী ঠাকুর লেখেন –
“যাহার অমর স্থান প্রেমের আসনে
ক্ষতি তার ক্ষতি নয় মৃত্যুর শাসনে।
দেশের মাটির থেকে নিল যারে হরি
দেশের হৃদয় তারে রাখিয়াছে ধরি।”
“কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়” রচনাটি পড়ে আপনার কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।আমার প্রিয় লেখক/আমার প্রিয় গ্রন্থকার হিসেবে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কে নিয়ে এই রচনাটি লেখা যেতে পারে।
তথ্যগত কোনো ভূল বা বানান ভুল থাকলে কমেন্ট করে জানিয়ে ঠিক করে দেওয়ার সুযোগ করে দিন।নিয়মিত এরকম আরও নতুন নতুন লেখা পাওয়ার জন্য আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন।সম্পূর্ণ রচনাটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।