বিদ্যালয়ের প্রথম দিন রচনা [সঙ্গে PDF]

আমাদের সকলের জীবনে এমন বেশ কিছু ঘটনা বা বিশেষ দিন থাকে যা কোনোদিনও ভোলা যায়না। এমন স্মরণীয় দিনগুলির মধ্যে আমাদের সকলেরই এক বিশেষ স্মরণীয় দিন হল বিদ্যালয়ের প্রথম দিন। প্রথমদিন বিদ্যালয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতাকে নিয়ে আমাদের আজকের আলোচ্য বিষয় বিদ্যালয়ের প্রথম দিন রচনা।

বিদ্যালয়ের প্রথম দিন রচনা

ভূমিকা:

বিদ্যালয় আমাদের সবার খুব পছন্দের একটি জায়গা। আমরা প্রতিদিন বিদ্যালয়ে পড়াশোনার সাথে সাথে নিজের বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা, গল্পগুজব ইত্যাদি নানা আনন্দের কাজ করে থাকি। আমি এখন আমাদের বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির খ বিভাগের ছাত্র। ছাত্ররা যখন বিদ্যালয়ের প্রথম দিন যায়, সেই দিনটি সবার কাছে খুব স্মরণীয় হয়ে থাকে।

এইদিন প্রথম আমরা আমাদের দীর্ঘ বিদ্যালয় জীবনের পথ চলা শুরু করি। আমার ক্ষেত্রেও বিদ্যালয়ের প্রথম দিনটি এর ব্যতিক্রম নয়। সেই দিন এই অচেনা জায়গাটায় একরাশ ভয় আর উত্তেজনা নিয়ে আমি পা রেখেছিলাম। আজ সেই দিনটির কথাই এই রচনার দ্বারা সবার সাথে ভাগ করে নেব।

নতুন জায়গার ভয়:

প্রাথমিক বিদ্যালয় স্তরের পড়াশোনা শেষ করে পঞ্চম শ্রেণীতে যখন এই বিদ্যালয়ে প্রবেশিকা পরীক্ষা দিতে আসি তখনই বাড়িতে মা বলেছিল এটি আমাদের জেলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি বিদ্যালয়। সেই দিন থেকেই এই বিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন আমার মনে দৃঢ় হয়। তারপর প্রবেশিকা পরীক্ষার ফল প্রকাশ হলে আমি জানতে পারি আমার সেই স্বপ্ন সফল হতে চলেছে।

তবে প্রাথমিক স্তরের ছোটদের বিদ্যালয় থেকে বড় দাদাদের স্কুলে পড়তে চলার বিষয়ে একটা অজানা ভয় সবসময় কাজ করতো। নতুন জায়গা, নতুন বন্ধুবান্ধব, নতুন শিক্ষকেরা কেমন হবেন; আমি বদলে যাওয়া নতুন পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে পারব কিনা সে বিষয়েও আমি আতঙ্কগ্রস্ত ছিলাম।

তবে একথাও সত্যি যে এই বিদ্যালয়ে পড়ার বিষয়ে প্রথম দিন থেকে আমার মনে একটা চাপা উত্তেজনা সব সময় কাজ করতো। সেই ভয় আর সুপ্ত উত্তেজনা নিয়েই দুরুদুরু বুকে প্রথম দিন আমার এই প্রিয় বিদ্যালয়ে পা রাখলাম।

প্রস্তুতিপর্ব:

এখানে প্রথম দিন আসার আগে থেকেই আমি মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিলাম। মা আমায় বলেছিল পরিবেশ যেমনই হোক আমি যদি নিজেকে মানিয়ে নিতে পারি তাহলে কোনভাবেই আমার খারাপ লাগবে না। অন্যদিকে নতুন বিদ্যালয়ে পড়তে যাওয়ার জন্য নতুন স্কুল ব্যাগ, বিদ্যালয়ের নতুন পোশাক, নতুন জুতো মোজা, নতুন বইপত্র সবই একে একে বাড়িতে আসতে থাকলো।

সেইগুলি নাড়াচাড়া করে দেখার মধ্যে যে অদ্ভুত অনুভূতি মনের মধ্যে কাজ করতো তা বলে বোঝানো যাবে না। বিদ্যালয়ের প্রথম দিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে স্নান করে নতুন পোশাক পরে, নতুন বই পত্র কাঁধে নিয়ে মায়ের সাথে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হলাম। মা আমাকে বিদ্যালয়ের গেটে ঢুকিয়ে দিয়ে বাড়ি ফিরে গেল।

বন্ধুদের সাথে আলাপ:

বিদ্যালয়ের গেট থেকে আমাদের স্কুলের চারজন অশিক্ষক কর্মচারী আমাদের সকল নতুন ছাত্রদের পঞ্চম শ্রেণীর সংশ্লিষ্ট বিভাগে নিয়ে গেলেন। সেখানে গিয়েই দেখতে পেলাম আমার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেশ কিছু পুরোনো বন্ধু বান্ধব এই স্কুলেই ভর্তি হয়েছে। তাদের দেখেই মন আনন্দে নেচে উঠলো। ওদের সঙ্গে গল্প করতে করতে আলাপ হলো আরো নতুন দু’তিন জনের সঙ্গে।

এদের মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু হল দেবাঙ্গন। সেই প্রথম দিন থেকে এখন অব্দি ওর সঙ্গেই আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধুত্ব। খানিকক্ষণ পরে উঁচু ক্লাসের কয়েকজন দাদাও আমাদের সাথে এসে আলাপ করে বলে গেল কোনরকম সমস্যা হলে দাদাদের জানাতে। বিদ্যালয় প্রবেশের পরই অচেনা পরিবেশের এমন অভ্যর্থনা আমার নতুন পরিবেশ সম্পর্কে আতঙ্ককে একেবারে দূর করে দিলো।

শিক্ষকদের সঙ্গে পরিচয়:

নতুন পরিবেশ সম্পর্কে অজানা আতঙ্ক দূর হয়ে গেলেও শিক্ষকরা কেমন হবেন সে বিষয়ে ভয় তখনও দূর হয়নি। বিদ্যালয়ের প্রথম দিন আমাদের মোট পাঁচটি ক্লাস হয়েছিল। প্রথম ক্লাসটি নিতে এসেছিলেন শান্তনু স্যার। তিনি এসে আমাদের সবার সঙ্গে আলাদা আলাদা করে আলাপ করলেন, নিজের পরিচয় দিলেন এবং জানালেন তিনি আমাদের বাংলা পড়াবেন।

প্রথম ক্লাসে শান্তনু স্যার আমাদের বইয়ের পড়া না পড়িয়ে একটি অত্যন্ত সুন্দর গল্প বললেন। তারপর একে একে আরও ৪ জন শিক্ষক পরপর আমাদের ক্লাস নিলেন। এদের সকলকেই আমার খুব ভালো লাগলো। যদিও সবার মধ্যে অতনু স্যারকে একটু রাগী প্রকৃতির বলে মনে হয়েছিল। তিনি আমাদের অঙ্কের শিক্ষক। অত্যন্ত সহজ সরল ভঙ্গিতে অল্প বুঝিয়ে দেওয়ার ভঙ্গিমা অতনু স্যারের প্রতি প্রথম দিনই আমার মন কেড়ে নিয়েছিল।

আমার বিদ্যালয় ঘুরে দেখা:

চারটি ক্লাস শেষ হলে টিফিন পিরিওডে আমরা সকল বন্ধুরা মিলে আমাদের সমগ্র বিদ্যালয়টি ঘুরে দেখলাম। এত বড় বিদ্যালয়ের সব জায়গাটুকু প্রথমদিন দেখা সম্ভব না হলেও যতটুকু দেখেছিলাম তাতে আনন্দে ভরে উঠেছিল।

সেদিনই প্রথম জানতে পেরেছিলাম আজ থেকে প্রায় দুইশত বছর আগে আমাদের এই বিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছিল। আমাদের একজন অশিক্ষক কর্মচারীর থেকে সেদিন জেনেছিলাম সুভাষচন্দ্র বসু, ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মতন মহান ব্যক্তিদের পদধূলি আমাদের এই বিদ্যালয়ে পড়েছে। মনের মধ্যে সবচেয়ে রহস্য সঞ্চার করেছিল আমাদের বিদ্যালয়ের দোতালার দরজা বন্ধ ঘরগুলি। 

উপসংহার:

আজ প্রায় দুবছর কেটে গেছে আমি এই বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছি। তবুও এই বিদ্যালয় সম্পর্কে আমার আনন্দ ও উত্তেজনায় একটু খামতি আসেনি। দোতালার দরজা বন্ধ ঘরগুলো আমায় আজও সেই প্রথম দিনের মতোই রোমাঞ্চিত করে। এই বিদ্যালয়ে পা রাখলে আমি এখনো প্রথম দিনের মতই গর্ব অনুভব করি। এরকম একটি ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়ে আমি নিজের ছাত্র জীবনকে সার্থক বলে মনে করে থাকি। 


বিদ্যালয়ের প্রথম দিন রচনাটি পড়ে আপনার কেমন লাগলো আপনার ব্যাক্তিগত মতামত কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানান।আমরা সব সময় সচেষ্ট থাকি সবার থেকে সুন্দর ও আপনার মনের মতো করে একটি রচনা তুলে ধরার।এখানে নেই এমন রচনা পাওয়ার জন্য রচনাটির নাম কমেন্ট করে জানান।দ্রুততার সঙ্গে আমরা উক্ত রচনাটি যুক্ত করার চেষ্টা করবো।সম্পূর্ণ রচনাটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

আরও পড়ুন:

আমাদের বিদ্যালয় রচনা
Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন