অনলাইনে বাংলা প্রবন্ধ রচনার এক অন্যতম ঠিকানা banglarachana.com এ আপনাকে স্বাগত জানাই।পঞ্চম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বাংলা সিলেবাসের ব্যাকরণ, গুরুত্বপূর্ণ রচনা,নমুনা সহকারে পত্রলিখন pdf সহ পাওয়ার জন্য আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন।নিয়মিত নতুন নতুন লেখা আপডেট করা হয়।এখানে নেই এমন রচনা পাওয়ার জন্য রচনার নাম আমাদের কমেন্ট করে জানান। banglarachana.com এর পক্ষ থেকে আজকের নতুন উপস্থাপন – “বঙ্গে বর্ষা”/”বাংলার বর্ষাকাল” রচনা।
সূচি তালিকা
ভূমিকা:
“ওই আসে ওই অতি ভৈরব হরষে –
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
জলসিঞ্চিত ক্ষিতি সৌরভ রভসে
ঘন গৌরবে নবযৌবনা বরষা
শ্যামগম্ভীর সরসা।”
বাংলার বাকি ঋতু গুলির থেকে একেবারে ভিন্নরকম ঋতু হল বর্ষা।ঋতু রঙ্গমঞ্চে রুদ্র ভয়াল গ্রীষ্মের বিদায়ের পর শ্যামগম্ভীর বর্ষার আগমন।পঞ্জিকা অনুসারে আষাঢ় শ্রাবণ মাস বর্ষাকাল হিসেবে গণ্য হলেও আশ্বিনের প্রায় শেষ পর্যন্ত বিস্তৃত বর্ষার কাল সীমা। “আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে” ঘন গৌরবে নবযৌবনা বর্ষার যাত্রা শুরু।শ্রাবণ মাসের অবিরাম বর্ষনে “ঘন ঘন দেয়া গরজন” – এ বর্ষার পুর্নতা। ভাদ্র মাসে তার গতিমন্থরতা।আশ্বিনের শেষে উত্তুরে হিমেল হাওয়ায় বর্ষার বিদায়।
বর্ষার রূপমাধুরী:
‘ঘন গৌরবে আসে উন্মাদ বরষা।’ কালো মেঘ আকাশকে আচ্ছন্ন করে রাখে।মাঝে মাঝে এই কালো মেঘের বুক চিরে বিদ্যুৎ চমকায়।হালকা ঝড়ো হাওয়া বইতে থাকে সর্বক্ষণ।দিনরাত সমানে ‘ ধারা ঝরে ঝরঝর।’ বর্ষার অক্লান্ত বর্ষনে বাংলার মাঠ ঘাট,পুকুর, খাল,বিল ভরে ওঠে।সবুজ পাতায় বৃক্ষরাজি নবসাজে সজ্জিত হয়।
সজল মেঘের শ্যামকান্তি ও অতুলনীয় বিচিত্র রূপ বাংলার প্রকৃতিকে মহিমময় করে তোলে।বাংলার প্রকৃতি ঋতুতে ঋতুতে নতুন নতুন ফুলের সম্ভারে বদলায় তার অঙ্গসজ্জা।কদম্ব কেতকী,দোপাটি অপরাজিতা,কুমুদ কলহার ইত্যাদি পুষ্পের বাহারে নিজেকে সাজিয়ে তোলে বর্ষার প্রকৃতি।যুগে যুগে বর্ষার রূপের কত অপূর্ব চিত্র এঁকেছেন কবি ও শিল্পীরা। শ্রীধারার অভিসার পর্যায়ে বৈষ্ণব কবির ভাষায় বর্ষা বর্ণনা –
“তহি অতি দুরতর বাদর দোল।
বারি কি বার নীল নিচোল।”
বর্ষা ও গ্রামবাংলা:
আমাদের গ্রাম গুলো মূলত কৃষি নির্ভর।ফসলের সাথে বর্ষার সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়।বর্ষার বর্ষনের উপর নির্ভর করে কৃষির সাফল্য কিংবা ব্যার্থতা। বর্ষায় চাষের মাঠ ভিজে উঠলে কৃষকের ঘরে শোনা যায় আনন্দধ্বনি।শুরু হয় ফসল রোপণের আয়োজন।কিন্তু কখনও কখনও অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টি কৃষকদের সর্বনাশের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
পরিমিত বৃষ্টি শস্য প্রাচুর্যে কৃষকদের গোলা ভরে।তাই গ্রাম বাংলার আর্থিক জীবনে বর্ষার প্রভাব সুদুরপ্রসারী। বর্ষা গ্রাম বাংলার প্রকৃতির রুপকেও সাজিয়ে তোলে।মুছে ফেলে প্রকৃতির ধুলিমলিন বিবর্ণতা।নবজীবনের আশ্বাসে সবুজ সাজে সেজে ওঠে প্রকৃতি।
শহরে বর্ষা:
অসহ্য গরমকে বিদায় জানিয়ে গ্রামের মতো শহর জীবনেও বর্ষা নিয়ে আসে সস্থির আশ্বাস।তবে গ্রামের মতো বর্ষার সবুজ শ্যামল পরিবেশ শহরের আকাশ ছোয়া বিল্ডিং ও ঘিঞ্চি গলির মাঝে প্রত্যাশা করা যায় না।বর্ষার বারিধারায় জল জমে যায় রাস্তা ঘাটে।ব্যাস্ত রাস্তায় থমকে যায় যানবাহন,বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে স্বাভাবিক জীবনধারা।জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ঠিকঠাক না থাকায় নালা নর্দমার আবর্জনা বর্ষার জলের সাথে মিশে যায়।শহরের জনজীবনে একপ্রকার অবকাশ যাপনের ইচ্ছা জাগরিত হয়।ইচ্ছে করে স্কুল,কলেজ,অফিস,আদালত না গিয়ে ঘরে বসে দিন কাটাতে।
বর্ষার বিধ্বংসী রূপ:
কৃষি প্রধান বাংলার প্রয়োজনের ঋতু বর্ষাকাল।বর্ষাকাল বাংলার পরম আকাঙ্ক্ষিত ঋতু হলেও সে প্রতিবছর ঠিক কোথাও না কোথাও জনজীবনে নিয়ে আসে দুর্ভোগ আর বিপর্জয়। নবযৌবনা সুন্দরী বর্ষাও সময় বিশেষে হয়ে ওঠে নিষ্ঠুরা ভয়ংকরি।অতি বর্ষনের কারণে নদীমাতৃক বাংলার পলি জমে থাকা নদী গুলোতে জল ফুলে ফেঁপে ওঠে।পথ না থাকায় ভাসিয়ে দেয় আশেপাশের জনবসতিকে। ভয়াবহ বন্যার ক্ষুধা গ্রাস করে চাষের ফসল,জন ধন সম্পদসহ মাথা গোঁজার ঠাঁই টুকুও। বন্যায় প্লাবিত মানুষদের দুঃখ কষ্ট আর দুর্ভোগের সীমা থাকেনা।দেখা দেয় নানা ধরনের জটিল অসুখ বিসুখ।বন্যার ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেলে তা জাতীয় জনজীবনে ক্ষেত্রে বড়ো সমস্যা সৃষ্টি করে।
উপসংহার:
বর্ষা যতই ভয়ংকর রূপ ধারণ করুক না কেন কৃষি প্রধান বঙ্গ বাঙালির জীবনে জীবনে বর্ষা বিধাতার আশির্বাদ।বর্ষা বাংলার আর্থিক সমৃদ্ধির বুনিয়াদ গড়ে তোলে।একদিকে বর্ষার কল্যাণময়ী রূপ,অন্যদিকে তার ভয়ঙ্কর প্লাবন চিত্র। তবুও সব কিছু মিলিয়ে বর্ষা বাংলার রূপ মাধুর্য কে যতখানি বৈচিত্র্যময় করে তোলে ঠিক তেমনটি আর অন্য কোনো ঋতুতে দেখা যায় না।
“বঙ্গে বর্ষা”/ “বর্ষাকাল ” রচনাটি পড়ে আপনার কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।পরবর্তীতে এরকম আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ রচনা পাওয়ার জন্য আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন।ধন্যবাদ।।