পিতামাতার প্রতি কর্তব্য রচনা [সঙ্গে PDF]

যারা আমাদের এই পৃথিবীর আলো দেখিয়েছে, যথাযথ লালন পালনের মধ্য দিয়ে বড়ো করেছেন, যাদের স্নেহ, ভালোবাসা, শাসন আমাদের জীবনকে সঠিক মাত্রা দিয়েছে তারা আর কেউ না, তারা হলেন আমাদের মা-বাবা। সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার অবদান অনস্বীকার্য। তাই পিতামাতার প্রতি প্রত্যেক সন্তানদেরও অনেক দায়িত্ব, কর্তব্য থাকে। এই নিয়েই আমাদের ছোটোদের জন্য আজকের উপস্থাপন পিতামাতার প্রতি কর্তব্য রচনা।

একটি শিশু ও তার পিতামাতার ছবি

ভূমিকা:

পৃথিবীর যেকোন পিতা-মাতার কাছে সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হলো তাদের সন্তান। প্রত্যেক আদর্শ পিতা-মাতাই সন্তানকে তাদের শরীরের অংশ বলে গণ্য করে নিজেদের সবটুকু দিয়ে তাকে লালন পালন করেন। পিতা মাতার স্নেহ, মায়া-মমতা ও ভালোবাসায় আমরা ছোট থেকে বড় হয়ে উঠি। আমাদের জীবনে প্রতিমুহূর্তে পিতা মাতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষকের ভূমিকা পালন করেন।

আমাদের ছোট থেকে জীবনের ভালো-মন্দ, সুখ-দুঃখের কথা সবার প্রথমে তারাই দায়িত্ব সহকারে চিন্তাভাবনা করেন। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আমরা যেমন বড় হব এবং তেমনি পিতা-মাতার জীবনেও বার্ধক্য আসবে। সেই সময়ে আমাদের কর্তব্য হলো যে পিতা-মাতার সচেতন ছত্রছায়ায় আমরা বড় হচ্ছি, তাদের খেয়াল রাখা। তারা যে নিজেদের সবটুকু দিয়ে প্রতিদিন আমাদের খেয়াল রাখছেন, আমাদেরও দায়িত্ব নিজেদের সবটুকু দিয়ে পিতা-মাতার বার্ধক্য জীবনকে সুখের করে তোলা।

জীবনে পিতা-মাতার অবদান:

জীবনে পিতা-মাতা ছাড়া আমরা কিছুই নই। পিতা মাতার ছাড়া সন্তানের অস্তিত্ব কল্পনাই করা যায় না। মা সন্তানকে গর্ভে ধারণ করেন এবং জন্মের পর থেকে আমাদের জীবনের ন্যূনতম খুশিটুকুর খেয়াল রাখেন। অন্যদিকে পিতাকে সাধারণত আমরা আমাদের সুখের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানের সংস্থান করার উদ্দেশ্যে প্রতিনিয়ত ঘাম ঝরাতে দেখি। তাই মা যেমন আমাদের জীবনের সকল দুঃখের আশ্রয়, পিতা তেমন আমাদের জীবনের পরম গুরু।

পিতা-মাতাই আমাদের জীবনের সর্বপ্রথম ও প্রধান আদর্শ। আমরা যখন অসুস্থ হই, তখন পিতা-মাতা রাত জেগে হলেও সেবা শুশ্রূষা করে আমাদের আরোগ্য কামনা করেন। প্রত্যেক পিতা-মাতা চান তাদের সন্তান যেন জীবনে বিদ্বান, স্বাস্থবান এবং সফল হয়। তাদের অকৃপণ অবদানের কথা মাথায় রেখে আমাদের প্রাথমিক কর্তব্য হলো সর্বপ্রথম পিতা-মাতার এই স্বপ্নকে সফল করা। 

ছাত্রজীবনে কর্তব্য:

পিতা-মাতার জীবন জুড়ে অনেক ত্যাগ স্বীকার ও কষ্ট সাধনের ফলেই আমাদের জীবন সুখের হয়ে ওঠে। সেই দিক থেকে চিন্তা করলে বর্তমান ছাত্র জীবন থেকেই পিতা মাতার প্রতি আমাদের কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য থেকে যায়। তেমনি প্রাথমিক কর্তব্যটি হলো আমাদের নিয়ে পিতা-মাতা কি চায় তা চিন্তাভাবনা করা। ছাত্রজীবনে আমাদের দায়িত্ব আমাদের নিয়ে পিতা-মাতার সকল প্রকার স্বপ্নকে সফল করে তোলা।

মনে রাখা উচিত পিতা-মাতা সবসময়ই সন্তানদের সবচেয়ে ভালোর জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাই আমাদের উচিত পিতা-মাতার দেওয়া সেই সকল পরামর্শকে অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলা। তাছাড়া পিতা-মাতা হলো সন্তানের সবচেয়ে ভালো বন্ধু। আমাদের জীবনের সকল প্রকার সমস্যার কথা যদি আমরা সর্বপ্রথম পিতা-মাতাকে জানাই তাহলে তার সমাধান অনেক সহজ হয়ে যায়। 

অবশ্য পালনীয় কিছু দায়িত্ব:

পিতা-মাতা দীর্ঘ সচেতন পরিচর্যা, সদা জাগ্রত স্নেহদৃষ্টি এবং অজস্র ত্যাগ স্বীকার এর মধ্যে দিয়ে আমরা বড় হয়ে উঠি। বড় হয়ে যাওয়ার পর আমাদের মনে রাখা দরকার পিতা মাতাও তাদের বার্ধক্যে উপনীত হয়েছেন। তাই সেই সময় পিতা-মাতার দিকে সদা জাগ্রত স্নেহ দৃষ্টি রাখা আমাদেরও একান্ত কর্তব্য। আমরা যখন বড় হব তখন কাজের চাপে পিতা-মাতার কথা আমাদের ভুলে গেলে চলবেনা।

তাদের দীর্ঘ নিরলস প্রচেষ্টা ও অবদানে আমরা বড় হয়েছি এ কথা মাথায় রেখে প্রতিনিয়ত পিতা-মাতার সুখের কথা আমাদের চিন্তা করে যেতে হবে। আমাদের কারণে যাতে তাদের কখনো কষ্ট পেতে না হয় সেই খেয়াল রাখাও আমাদের কর্তব্য। তাছাড়া বার্ধক্যকালে তাদের শরীর যখন ভেঙ্গে পড়বে তখন পিতা-মাতার নিয়মিত পরিচর্যা করাও আমাদের পবিত্র দায়িত্বগুলির মধ্যে একটি।

মনীষীদের দৃষ্টান্ত:

যুগে যুগে পৃথিবীর ইতিহাসে যত বড় বড় মানুষ জীবনে সফল হয়েছেন, পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে তারা সকলেই তাদের পিতা-মাতার একান্ত অনুগত ছিলেন। বইতে আমরা পড়েছি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের পিতা মাতার প্রতি ভক্তি, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার কথা। রামায়ণে আমরা দেখেছি পিতার আদেশ পালনের জন্য শ্রী রামচন্দ্র দীর্ঘ ১৪ বছর বনবাসে কাটিয়েছিলেন।

এছাড়াও ভারতবর্ষের বাইরে পৃথিবী জুড়ে নানা মহান ব্যক্তিত্বদের পিতা মাতার প্রতি আনুগত্য ও ভালোবাসার কথা সুবিদিত। মনীষীরা আমাদের দেখিয়ে দিয়ে গেছেন  পিতা-মাতার অনুগত সন্তান সর্বদা এক সফল জীবনের অধিকারী হয়। তাই আমাদেরও জীবনে সাফল্য লাভ করতে হলে পিতা-মাতার প্রতি সকল প্রকার দায়িত্ব ও কর্তব্যকে যথাযথভাবে পালন করতে হবে।

উপসংহার:

সত্যি বলতে পিতামাতা তাদের সন্তানের জন্য যা অবদান রেখে যান, তার ঋণ শোধ করা এক জীবনে সম্ভব নয়। পিতা-মাতারা নিজেদের ঋণ ফেরত পাবার আশাও করেন না। তারা শুধুমাত্রই ভালোবাসায় এবং স্নেহের বন্ধনে আমাদেরকে বড় করে তোলেন।

তাই কেবলমাত্র ঋণ শোধ করবার চেষ্টা না করে আমাদের পরম কর্তব্য হলো পিতা-মাতার ইচ্ছাকে বোঝা এবং সেই ইচ্ছা যথাসম্ভব পালন করা। জীবনে যে কষ্ট তারা স্বীকার করেন তা শুধুমাত্র আমাদের ভালো রাখবার জন্যই। পিতা-মাতার স্বপ্ন পূরণ করে জীবনে সফল হয়ে প্রতিদানে তাদের খুশি রাখা, যথাসম্ভব সুস্থ রাখা এবং সার্বিকভাবে ভালো রাখাই একজন সন্তানের কর্তব্য হওয়া উচিত।


পিতামাতার প্রতি কর্তব্য রচনাটি পড়ে আপনার কেমন লাগলো আপনার ব্যাক্তিগত মতামত কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানান।আমরা সব সময় সচেষ্ট থাকি সবার থেকে সুন্দর ও আপনার মনের মতো করে একটি রচনা তুলে ধরার। এখানে নেই এমন রচনা পাওয়ার জন্য রচনাটির নাম কমেন্ট করে জানান। দ্রুততার সঙ্গে আমরা উক্ত রচনাটি যুক্ত করার চেষ্টা করবো। সম্পূর্ণ রচনাটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন