পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা (Paribesh Dushan o Tar Protikar) [PDF]

পরিবেশ আমাদের উজাড় করে দিয়েছে তাজা বায়ু,বিশুদ্ধ জল,উর্বর ভূমি ইত্যাদি।সৃষ্টির আদিলগ্ন থেকেই পরিবেশ ও প্রাণী জগৎ একসূত্রে গাঁথা।কিন্তু আমরা যতই উন্নতির পথে অগ্রসর হয়েছি ততই পরিবেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে খারাপ করেছি।

পরিবেশের তাজা বাতাসে মিশিয়ে দিয়েছি কলকারখানার কালো ধোঁয়া। ক্রমবর্ধমান এই পরিবেশ দূষণ করার মধ্য দিয়ে আমরা নিজেদের বিপদ নিজেরাই ডেকে আনছি।আমাদের নিজেদের স্বার্থে, সমস্ত প্রাণী জগতের স্বার্থে পরিবেশকে দূষণমুক্ত সুস্থ রাখা আমাদের সকলের কর্তব্য।এ নিয়ে আজকের বিষয় পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা।

পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা

ভূমিকা:

বিশুদ্ধ জল আর দূষণমুক্ত তাজা বায়়ু সুস্থ জীবনের প্রধান উৎস। পৃথিবীর বুকে প্রথম মানুষ শিশুটির বুক ভরে টেনে নেওয়া বাতাস ছিল দূষণ মুক্ত নির্মল তাজা। মানুষ ও পরিবেশ তখন একইসূত্রে গাঁথা ছিল।

কারণ তখনও মানবজাতির বিবেকহীন অপকর্ম বায়ুকে বিষাক্ত করেনি। আজ আমাদের জননী বসুন্ধরা ভালো নেই। দূষণের ভারে ক্রমশ জর্জরিত। ক্রমশ এগোচ্ছে কঠিন অসুস্থতার দিকে।তাই রব উঠেছে “বসুন্ধরা বাঁচাও”।

এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষন করে সতর্ক ব্যবস্থাদি গ্রহণের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রসঙ্ঘ প্রতিবছর ৫ ই জুন “বিশ্ব পরিবেশ দিবস” হিসেবে ঘোষণা করেছে।

পরিবেশ দূষণ কী:

মানুষের কর্মকাণ্ডের ফলে পরিবেশ ও তার উপদানের অস্বাভাবিক পরিবর্তন ও বিপর্যয়ই হলো পরিবেশ দূষণ। আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে তা নিয়েই আমাদের পরিবেশ।

আমাদের চারপাশের ভৌত অবস্থা, জলবায়ু ও বিদ্যমান সকল জীব এবং জৈব পদার্থর সমন্বয়ই হলো পরিবেশ। কোনো কারনে যদি পরিবেশের কোনো উপাদানের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয় তাহলেই তাকে পরিবেশ দূষণ বলে। বস্তুত মানব সৃষ্ট বিভিন্ন কারণেই পরিবেশ দূষণ হয়।

পরিবেশ দূষণের কারণ:

অসুস্থ বিশ্ব-পরিবেশের জন্যে প্রকৃতপক্ষে মানুষই দায়ী। নির্বিচারে অরণ্য উচ্ছেদের কাজে বিবেচক মানুষের হাতে উঠেছে নিষ্ঠুর কুঠার। যা পরিবেশ ভারসাম্য হারিয়ে ফেলার অন্যতম কারণ। ক্রমবর্ধমান মানুষের চাহিদার কারণে ঘরবাড়ি শিল্প কারখানা আসবাবপত্র তৈরির কাজে ব্যাপক হারে বাড়ছে বৃক্ষ নিধন।

এছাড়াও দৈনন্দিন জীবনে কলকারখানা, যানবাহনে প্রতিমুহূর্তে পুড়ছে কাঠ, তেল, কয়লা। শিল্প কারখানা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া ও বর্জ্য পদার্থ পরিবেশকে দূষিত করে। রাসায়নিক সার থেকে শুরু করে পলিথিন জল ও মাটিকে দূষিত করছে। যুদ্ধে ব্যবহৃত পারমাণবিক অস্ত্র বোমা পরিবেশের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

প্রাকৃতিক ভাবেও পরিবেশ দূষণ হয়, প্রাকৃতিক কারণের অন্তর্ভুক্ত হলো দাবানল, আগ্নেয়গীরি ইত্যাদি। তবে প্রকৃতি সৃষ্ট দূষণের শোধনকত্রী প্রকৃতি নিজেই অপরপক্ষে, মানবসৃষ্ট দূষণ এতো বেশি যে প্রকৃতি তা শোধনে অক্ষম এবং মানুষেরও নাগালের বাইরে।

বায়ু দূষণঃ প্রাকৃতিক সম্ভারের অন্যতম উপদান বায়ু। কার্বন কণা থেকে উৎপাদিত ভারী ধাতু, জটিল জৈব যৌগের আবর্জনা, জীবাশ্ম জ্বালানি অর্থাৎ তেল, কয়লা ইত্যাদি পোড়ানোর ফলে উৎপাদিত কার্বন ডাই অক্সাইড এগুলোই হলো বায়ু দূষণের প্রধান উপকরণ। এছারা ঘর-বাড়ি, কলকারখানা, মোটর গাড়ির কালো ধোঁয়া বায়ু দূষণের অন্যতম বড় কারণ।

পানি দূষণঃ পরিবেশের আরেকটি অন্যতম গুরুত্যপূর্ণ উপাদান হলো পানি। নদী-নালা, পুকুর, হ্রদ ইত্যাদির পানি প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে। শহরের নির্গমননালি বেয়ে আসা দূষিত তরল, ভারী ধাতু, জলযান থেকে নির্গত তেল, হ্যালোজেন নিঃসৃত হাইড্রোকার্বন পানি দূষণের জন্য দায়ী। মূলত নদীর তীড়েই গড়ে ওঠে কাপড় কল, পাটকল, কাগজের কল, চিনি কলের মতো বিভিন্ন কলকারখানা। এসব কারখানার আবর্জনা প্রতিনিয়ত পানিকে দূষিত করে যাচ্ছে।

মাটি দূষণঃ ভূত্বকের আবরণ হলো মৃত্তিকা বা মাটি। ভূমিক্ষয়, গাছকাটা, বন উজাড়, এসিড বৃষ্টি, জমিতে অত্যাধিক রাসায়নিক সার প্রয়োগের ফলে মাটির গুনগত মান নষ্ট হয় এবং বায়ু দূষণ ঘটে।

শব্দ দূষণঃ পরিবেশ দূষণের একটি অন্যতম কারণ হলো শব্দ দূষণ। বিভিন্ন কারণে শব্দ দূষণ হয়ে থাকে, যেমন- মোটর গাড়ি বা নৌযানের শব্দ, কলকারখানার শব্দ, বাজি-পটকার শব্দ, মাইকের আওয়াজ, রেডিও-টেলিভিশনের আওয়াজ ইত্যাদি।

তেজস্ক্রিয়জনিত দূষণঃ বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে তেজস্ক্রিয় দূষণের পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন ধরণের ইলেট্রনিক দ্রব্য, পারমানবিক অস্ত্রের বিস্ফোরণ ও পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে এই ক্ষতিকর তেজস্ক্রিয়তার অধিকাংশ বিকরিত হয়, যা আমাদের পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করে ও পরিবেশ দূষণ ঘটায়।

দূষিত পরিবেশ ও মানব জীবন:

আদিম কালে মানুষ যখন আগুন জ্বালাতে শেখে তখনই মানুষের দ্বারা দূষণের সূচনা হয়। তারপর মানব সভ্যতার উন্নতির সাথে সাথে বাড়তে থাকলো দূষণ। কলকারখানা যানবাহনের সাথে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে গাছ কাটার হারও বাড়তে লাগলো। শিল্পাঞ্চল ও নগর-নগরীগুলিই হলো পরিবেশ দূষণের মূল কেন্দ্র।

১৯৫২ সালে শিল্পনগরী লন্ডনে ধোয়াশার প্রকোপে হৃৎপিণ্ড ও শ্বাস সংক্রান্ত অসুস্থতার কারণে আকস্মিক মৃত্যু হয় প্রায় ৪০০ মানুষের। ১৯৮৪ সালে ভারতের ভোপালে মিথাইল আইসো সায়ানাইড গ্যাসে হাজার হাজার মানুষের যে মর্মান্তিক জীবনাবসান ঘটে, তা আমাদের সবার জানা। বিজ্ঞানীদের মতে, ইতিমধ্যে দুহাজার কোটি টন কার্বন ডাই অক্সাইড জমেছে আমাদের পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে।

যার ৭৭%, জ্বালানির জন্য এবং বাকি ২৩% অরণ্য উচ্ছেদের ফলে। ১৮৮০ সালের তুলনায় ১৯৮০ সালে একশো বছর পর পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে ০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যার অন্যতম প্রধাণ কারণ এই কার্বন ডাই অক্সাইড সহ বিভিন্ন গ্রীনহাউস গ্যাসের আকস্মিক বৃদ্ধি। দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত নানান রকমের রাসায়নিক সার, পলিথিন, প্লাস্টিক ও অন্যান্য পরিবেশ দূষণকারী পদার্থ পরিবেশ দূষণের কারণ।

পরিবেশ দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব:

বসুন্ধরা আজ সহনশীলতার শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে আমাদের সচেতনতার অভাবে দূষণের কারণে আমাদের পরিবেশ দিনদিন বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠেছে। মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার মাটি দূষিত করে মাটির উর্বরতা শক্তি কমিয়ে দিচ্ছে সাথে ফসলের গুণগত মানও হ্রাস পাচ্ছে।

কলকারখানা থেকে আসা দূষিত জল নদীর জলকে দূষণ করে যার ফলে জলের মাছেদের মৃত্যু হয়। জলজ প্রাণীর মৃত্যু কিন্তু মোটেও নতুন কিছু নয়। প্রায়শই আমরা সংবাদপত্রে দেখতে পাই সামুদ্রিক প্রাণীর মৃত্যুর খবর।

জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে একটি ভয়াবহ তথ্য তুলে ধরা হয়, যেখানে বলা হয়- প্রতি বছর প্রায় ৮০০ প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণী সমুদ্রযানের বর্জ্য পদার্থ দিয়ে আক্রান্ত হয়, আর এসবের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশই হচ্ছে প্লাস্টিক জাতীয় বর্জ্য।

গাছ কাটার ফলে বন্য প্রাণীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। অনেক প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদ বিলুপ্ত হয়ে পড়ছে। পরিবেশ দূষণের প্রভাব অত্যন্ত ভয়াবহ। বায়ু দূষণের ফলে যে এসিড বৃষ্টি হয় তা মাটি ও নদী-নালার পানির সাথে মিশে যাচ্ছে এবং মাটি ও পানিতে অম্লের পরিমান বৃদ্ধি করছে।

অধিক অম্লত্বের কারণে জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বায়ু দূষণের ফলে পরিবেশে কার্বণ ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং পরিবেশের তাপমাত্রা বাড়ছে। পরিবেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাচ্ছে এবং সাগরে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

মাটি, পানি ও বায়ু দূষণ মানুষের স্বাস্থ্যের জন্যও বেশ ক্ষতিকর। বায়ূ দূষণ মাথাধরা, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, ফুসফুসের ক্যান্সার, দীর্ঘিস্থায়ী ব্রংকাইটিস ইত্যাদির মতো শারীরিক সমস্যার কারণ। শব্দ দূষণের পরিণাম শ্রবণেন্দ্রিয় অকেজো হয়ে যাওয়া, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়া, অনিদ্রা ও নানা রকম স্নায়ুরোগের সৃষ্টি করে।

দূষণ প্রতিকারের উপায়:

জল আর বায়ুর ক্রমবর্ধমান দূষণ নিয়ে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা ভীষণভাবে চিন্তিত। বিশাল মানবগোষ্ঠী সহ প্রাণী জগৎ কিভাবে এ অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে পারে সে উপায় নির্ধারণে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা অবিরাম কাজ করে চলেছে।

বায়ু দূষণে অন্যতম স্থান অধিকারী বিদ্যুত, কাগজ, সিমেন্ট, ইস্পাত কারখানা সমূহ। দূষণের তারতম্য অনুসারে শিল্প কেন্দ্র গুলিকে শ্রেণীকরণ করে দূষণ নিয়ন্ত্রণের উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক। তাই বিজ্ঞানীদের নির্দেশে এইসব কারখানা গুলিতে দূষণ নিয়ন্ত্রক সরঞ্জাম বসানোর ব্যাবস্থা নেওয়া হয়েছে।

প্রযুক্তিবিদ্যার সাম্প্রতিক অগ্রগতিতে এমন কতকগুলো পদ্ধতির উদ্ভাবন হয়েছে, যাতে পরমাণু চুল্লির আবর্জনা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়েছে। এর ফলে নিউক্লিয় বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিবেশে কোনো তেজস্ক্রিয় থাকবে না।

কলকারখানা থেকে নির্গত হওয়া দূষিত জল, শহরের মল, আবর্জনা, যাতে নদী কিংবা হ্রদের জলকে দূষণ না করে সে ব্যাপারে সচেতন হওয়া দরকার। কীটনাশক, পলিথিন পুরনো যানবহন ব্যবহার কমাতে হবে সেই সাথে জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধে সচেতন হওয়া দরকার।

পরিবেশের ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র রক্ষায় বৃক্ষের গুরুত্ব অপরিসীম। দূষণ রোধের সহজতম উপায় বৃক্ষরোপণ ও বৃক্ষ সংরক্ষণ। আমাদের অস্তিত্ব রক্ষায় সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশ পেতে দেশের প্রতিটি নাগরিককে বেশি করে বৃক্ষরোপণ ও সংরক্ষণের দায়িত্ব নিতে হবে। পরিবেশ দুষণ কমাতে প্রত্যেকটি দেশের আয়তনের ২৫% বনভূমি নিশ্চিত করতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের আগে গাছকাটা নিষিদ্ধ করতে হবে।

কৃষিজমিতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে জৈব সারের ব্যবহার বাড়াতে হবে। কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে। কীটনাশকের পরিবর্তে সমন্বিত বালাই দমন ব্যবহার করতে হবে। সর্বোপরি পরিবেশ দুষণের ভয়াবহতা সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে হবে। পরিবেশ দূষণ রোধকে জাতীয় আন্দোলনে পরিণত করতে হবে।

এককালে মানুষের ধারনা ছিল পরিবেশের উপর আধিপত্য বিস্তার করতে পারলেই মঙ্গল। কিন্তু এখন এই ধারণার পরিবর্তন ঘটেছে। কারণ মানুষ বুঝতে পেরেছে যে আধিপত্য বিস্তার করতে মানুষ বন উজাড় করে, নদীপ্রবাহ বন্ধ করে, পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট করে আসলে তারা নিজের জন্যই সমূহ বিপদ ডেকে আনছে।

তাই আর পরিবেশের উপর আধিক্য নয় বরং তারা আজ পরিবেশের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলতে চেষ্টা করছে। এই চেষ্টা সার্থক হলেই কেবল পরিবেশ দূষণ কমিয়ে আমরা আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর পৃথিবী তৈরি করতে পারবো।

উপসংহার: 

আমাদের মনে রাখা দরকার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ আমাদের দেয় নীরোগ স্বাস্থ্য ও অক্ষয় দীর্ঘায়ু। পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখার দায়িত্ব শুধুমাত্র সরকার,সংস্থা বা কোনো ব্যক্তি বিশেষের নয়, এ দায়িত্ব আমাদের সকলের।

ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ পৃথিবী গড়ে তোলার লক্ষ্যে যেকোনো মূল্যে পরিবেশ দূষণ রোধ করার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। আমরাই আমাদের পরিচ্ছন্ন পরিবেশের রক্ষী। আমাদের সকলের সক্রিয় প্রচেষ্টায় দূষণের নিয়ন্ত্রণ নিশ্চই সম্ভব।

তাই কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে আমাদের অঙ্গিকার হোক- ” যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ প্রাণপণে সরাবো জঞ্জাল এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি … ” ।


একই রচনা অন্যভাবে উপস্থাপন করা।


“এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।”

কবি সুকান্ত।

ভূমিকা:

পরিবেশ দূষণ আধুনিক বিশ্বের এক অগ্নিগর্ভ বিষয় ও সমস্যা। আধুনিক যন্ত্র সভ্যতার বিষবাষ্পে দিশেহারা মানুষের এখন একটাই প্রার্থণা _’বাঁচো এবং বাঁচাও’। একসময় মানুষ সবুজ পৃথিবী মায়ের কোলে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে দিনযাপন করেছে।কিন্তু আজ সে মা অসহায়,সে মা হয়েছে দূষণের অক্টোপাসে বন্দি। আমাদের সকলের সুন্দর পরিবেশ দূষণ হয়েছে মূলত দুই ভাবে:

  1. প্রাকৃতিক দূষণ
  2. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দূষণ

আগামীদিনে মানুষকে পরিবেশের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে,তাকে বাঁচতে হলে এই পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।

পরিবেশ দূষনের ইতিহাস:

আদিম কালে মানুষ পরিবেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতো বলে সে দিনের পরিবেশ তার কাছে ছিল বসবাসের উপযোগী।কিন্তু যেদিন মানুষ পাথরে পাথরে ঘষা লাগিয়ে আগুন জ্বালাতে শিখেছে সেদিন থেকে শুরু হয়েছে পরিবেশ দূষণের জয়যাত্রা।

পরিবেশের উপর এভাবে মানুষ যতই অত্যাচার করতে থাকলো, ততই দূষণ যাত্রার পথ প্রশস্ত হতে থাকলো। উত্তরাধিকার সূত্রে সেই পাপের ভাগীদার আজ আধুনিক মানুষ।
জ্ঞান বিজ্ঞানে তারা যতই উন্নত হচ্ছে, ততই বেড়ে চলেছে দূষণের অভিশাপ। বর্তমানে এই পরিবেশ ভাবনা পরিবেশ বিজ্ঞানীদের কাছে এক গভীর উদ্বেগের বিষয়।

প্রাকৃতিক উপায়ে পরিবেশ দূষণ:

প্রাকৃতিক উপায়ে পরিবেশ দূষণে অন্যতম কারণ গুলি হল জনসংখ্যা বৃদ্ধির তাগিদে জল মাটি বায়ুর উপর পড়ছে প্রচন্ড চাহিদার চাপ ফলত প্রকৃতি ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে।প্রতিদিন কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ গৃহস্থের বাড়ির আবর্জনা, কীটনাশক ও রাসায়নিক পদার্থ,নদী কিংবা হ্রদের জলে মিশে প্রতিনিয়ত দূষণ বাড়িয়ে চলেছে।

কলকারখানা থেকে নির্গত হওয়া ধোয়া পরিবেশ দূষণের এক অন্যতম কারণ।খনি থেকে নির্গত কয়লা,খনিজ তেল ইত্যাদি এবং বৃক্ষ ছেদনের ফলে ভূমিক্ষয় ও ভূমি দূষণ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দূষণ:

মানুষকে কেন্দ্র করে আবর্তিত সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক গুলিও পরিবেশের আলোচ্য বিষয়।সমাজে আজও সুখে দুঃখে উৎসবে আনন্দে মানুষে মানুষে প্রীতির সম্পর্ক থাকলেও সেখানে আন্তরিকতার দিক গুলো ক্রমাগত লোপ পাচ্ছে। রুচিহীন আমোদ প্রমোদ, আশ্লিল সাহিত্য, অশ্লীল ছায়া ছবি আমাদের শিক্ষা সংস্কৃিবিষয়ক পরিবেশকে সম্পূর্ণ গ্রাস করেছে।

রাজনৈতিক দলীয় স্বার্থ, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয় আজকের তরুণ সমাজকে বিপথগামি করে তুলেছে বর্তমানে। পবিত্র শিক্ষায়তন গুলি রাজনৈতিক দলের আখরাই পর্যবসিত হয়েছে।বাস্তব সত্য হলো সাংস্কৃতিক পরিবেশের এই দূষণের কারণে- ই তীব্র হতাশা ও অনিশ্চয়তার শিকার হয়েছে আজকের তরুণ সমাজ।

পরিবেশ রক্ষার উপায়:

প্রাকৃতিক পরিবেশকে উপযুক্ত ভাবে গড়ে তোলার স্বপ্নে পরিবেশ প্রেমী সচেতন মানুষকে নতুন চেতনালোকের জোয়ারে ভেসে উঠতে হবে। বিদ্যালয়ে শিশুকে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হবে।যুব সমাজকে যে ভাবেই হোক ফিরিয়ে আনতে হবে অপসংস্কতির পথ থেকে।

সমাজে শিশু দের লাইবেরী ও পুনাঙ্গ পাঠাগার প্রকল্প বেশি করে গড়ে তুলতে হবে উপযুক্ত দূষণমুক্ত পরিবেশ গঠনে সমাজের সকলস্থরের মানুষকে দৃঢ় সংকল্প বদ্ধ হতে হবে। বিদ্যালয়ের পাঠক্রমে পরিবেশ বিদ্যার বিষয় বাধ্যতামূলক ভাবে অন্তর ভুক্ত করতে হবে।

উপসংহার:

জীবনধারণের উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলতে ও পরিবেশকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করতে না পারলে আমাদের জীবনে নেমে আসবে মৃত্যুর কালো মেঘ।সুস্থ পরিবেশ দেয় সুন্দর জীবনের পরিশ্রুতি তাই প্রকৃতি ,পরিবার,বিদ্যালয়, এমনকি সমাজ – সর্বত্রই পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা দরকার।

এ বিশ্বকে ” এ শিশুর বাসযোগ্য করে” তুলতে সরকার,সমাজসেবক,কবি,শিল্পীরা নয়,আমাদের সকলেই পরিবেশ রক্ষার জন্য দৃঢ় অঙ্গীকার বদ্ধ হতে হবে।


পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার প্রবন্ধ রচনাটি পড়ে আপনার কেমন লাগলো আপনার ব্যাক্তিগত মতামত কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানান।আমরা সব সময় সচেষ্ট থাকি সবার থেকে সুন্দর ও আপনার মনের মতো করে একটি রচনা তুলে ধরার।


এখানে নেই এমন রচনা পাওয়ার জন্য রচনাটির নাম কমেন্ট করে জানান।দ্রুততার সঙ্গে আমরা উক্ত রচনাটি যুক্ত করার চেষ্টা করবো।সম্পূর্ণ রচনাটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

উল্লেখ: দূষণ – উইকিপিডিয়া | পানি দূষণ – উইকিপিডিয়া

Print Friendly, PDF & Email

“পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা (Paribesh Dushan o Tar Protikar) [PDF]”-এ 2-টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন