banglarachana.com এ আপনাকে স্বাগতম।পঞ্চম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বাংলা সিলেবাসের সমস্ত ব্যাকরণ গুরুত্বপূর্ণ রচনা ভাবসম্প্রসারণ সমস্ত কিছু pdf সহ পাওয়ার জন্য আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন।পরীক্ষায় সম্ভাব্য গুরুত্বপূর্ণ সমস্ত প্রবন্ধ রচনা তুলে ধরার চেষ্টা করি আমরা।তাই এখানে নেই এমন রচনা পাওয়ার জন্য রচনার নাম অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
সমাজের কিছু লোভী মানুষ ও অসাধু ব্যবসায়ী দের কারণে দিন দিন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে,যার ফল ভোগ করতে হচ্ছে অতি সাধারণ দরিদ্র মানুষদের।সেই নিয়েই আজকের বিষয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও তার প্রতিকার প্রবন্ধ রচনা।

সূচি তালিকা
ভূমিকা:
ক্রমাগত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এখন বেশীরভাগ মানুষের গা-সওয়া ব্যাপার। একথা ঠিক “মন্বন্তরে মরিনি আমরা” কিন্তু সাম্প্রদায়িক নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য বৃদ্ধিতে আমরা আধমরা। কারোর বা পৌষ মাস, কারোর বা সর্বনাশ।
যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরোয় তাদের অবস্থা অসহনীয়, অন্যদিকে কিছু লোকের মুনাফা লাভ। প্রশাসনের গদাই লস্করি চাল, ঢাকঢাক গুড়গুড় ভাব, রাজনীতির চাপান-উতোর, বনধ-হরতাল, সংবাদপত্র গুলির ইস্যু খুঁজে পেয়ে যাওয়া- সবমিলিয়ে সাম্প্রদায়িক নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে বাজার সরগম।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ:
জীবন ধারণের জন্য মানুষের কিছু মৌলিক চাহিদা আছে, যা ব্যতীত সে জীবনধারণ করতে পারে না। সারা বিশ্বের মতাে আমাদের দেশেও জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে; সেই সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে চাহিদার পরিমাণও। সুতরাং ক্রমবর্ধমান জনগােষ্ঠীর চাহিদা মেটানাে দুরুহ বলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ঘটনাও স্বাভাবিক বলে বিবেচনার যােগ্য।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণগুলো হলো:
- যে দেশে যথার্থ পরিকল্পনা ও মূল্যায়নের অভাব সে দেশে মূল্য বৃদ্ধি তো ঘটবেই। পরিকল্পনামাফিক রাজনীতিটাই হয় অন্যের বেলা অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা অবস্থা।
- একবার এলোমেলো করে দে মা লুটেপুটে খাই- এটি মূলত কালো বাজারীদের প্রার্থনা করা হয় এবং সেই প্রার্থনা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যদি নেতারা পূরণ করার পর বের করে দেন, তাহলে দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি ঘটবেই। ভোট ভিক্ষা করার সময়ে কত সুন্দর ভাবে চান, কি বিচিত্র বিনয় ও আশ্বাস। আর এই ভোট ফুরিয়ে গেলে তারা ডুমুরের ফুল হয়ে ওঠে, এই দেশে তাই মূল্যবৃদ্ধি তো ঘটবেই।
- শুধু নেতারাই দোষী হন কেন, সাধারণ মানুষের ও কোনো প্রতিকারের ইচ্ছা নেই।
- গুজব ছড়িয়ে আছে যে মানুষের মনে ত্রাস সৃষ্টি করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করাটাই আজকের সবচেয়ে বড় ব্যাপার।
- তবে অবশ্যই কাঁচা মাল তরি তরকারির দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি বা বন্যা।
- জনসংখ্যা বৃদ্ধি, মজুতদারদের অন্ধ স্বার্থসিদ্ধি, প্রশাসনের নিস্পৃহতা, পরিবহন ব্যয়বৃদ্ধি, উপযুক্ত পরিকল্পনার অভাব প্রভৃতি পন্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য অনেকাংশে দায়ী।
দরিদ্র মানুষের উপর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রভাব:
ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পরিণাম খুবই ক্ষতিকর। একজন ক্রেতাকে বাঁচার তাগিদে কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে প্রয়ােজনীয় জিনিসপত্র কিনতে হয়। তবে দেশের বেশির ভাগ মানুষ স্বল্প আয়ের মধ্যে জীবনযাপন করে।
কাজেই তাদের দ্বারা অতিরিক্ত মূল্যে প্রয়ােজনীয় জিনিস ক্রয় করা প্রায় অসম্ভব। তাই বাজারে যখন জিনিসপত্রের দাম বাড়ে তখন তাদের ব্যয় সংকুচিত হয়ে যায়। দেশের অধিকাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে ও সাধারণ জীবন যাপন করে। সুতরাং তারা অতিরিক্ত দামে যখন দ্রব্য কিনতে চায় তখন তাদেরকে দারুণ অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়।
বাজেট ঘাটতির কারণে অনেক পরিবার শিশুপণ্য ও ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যয়ভার সঙ্কুচিত করে ফেলতে বাধ্য হয়। ফলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি হলে শিশুর পুষ্টিহীনতা ও ছাত্র-ছাত্রীর শিক্ষা জীবন ব্যাহত হয়। আবার অনেকে আর্থিক সংকট কাটানাের জন্য অবৈধ উপার্জনের দিকে মনােযােগী হয়। ফলে সমাজে নৈতিক অবক্ষয় নিশ্চিত বলা যায়।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিকার:
এ সমস্যার সমাধান করতে হলে-
- অত্যাবশকীয় জিনিসের উৎপাদন বাড়াতে হবে। এজন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার প্রয়োজন এবং শুধু পরিকল্পনা বা মিটিং করে কিছু হবে না, বাস্তবে তাকে রূপায়ণ করানোর জন্য পরিকাঠামো উন্নয়ন একান্ত প্রয়োজন।
- আমাদের দেশের বহু অসাধু ব্যবসায়ী রয়েছে। যাদের জন্য অভাব সৃষ্টি হয়ে চলেছে। তারা অনেক সময় বেশী পরিমাণ পন্যদ্রব্য গুদাম ঘরে মজুত রাখে এবং তারপর দেশে পন্যের জন্য যখন হাহাকার শুরু হয় তখন অতিরিক্ত দামে মজুত করা পন্য বাজারে বিক্রি করে। এতে ওদের মুনাফার অঙ্কটা রাতারাতি বৃদ্ধি পায়। এরা যাতে অতিরিক্ত পন্য ক্রয় করে মজুত না রাখতে পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- যে সমস্ত রাজনৈতিক নেতারা এই সব দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, মজুতদারদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ভোট লড়েন। তারা দেশের শত্রু, এদেরকে চিহ্নিত করা প্রয়োজন।
- সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে, আইন ও বিচার ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে, শুধুমাত্র কথার বলি ফোটালে হবে না।
- সাধারণ মানুষকেও এব্যপারে সচেতন হতে হবে, কারণে-অকারণে আতঙ্কে পড়লে হবে না।
উপসংহার:
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে যদি সবচেয়ে বেশি ক্ষতির ও কষ্টের সম্মুখীন হয় কাউকে তারা হল স্বল্প আয়ের মানুষরা। সুতরাং এদের স্বার্থ রক্ষার জন্য নিত্য প্রয়ােজনীয় দ্রব্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। তবে অতি দুঃখের সাথে জানাতে হয় যে, আমাদের দেশে নিত্য প্রয়ােজনীয় সব দ্রব্যের উপর তথা বাজারের ওপর সরকারের বিশেষ কোনাে নিয়ন্ত্রণ নেই।
অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে তাদের ইচ্ছামতাে দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি করতে না পারে সে জন্য দেশের জনগণকে সচেষ্ট থাকতে হবে। তাই অর্থনীতির চাকা যদি সচল রাখতে হয় তবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সম্পূর্ণ রূপে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও তার প্রতিকার প্রবন্ধ রচনাটি পড়ে আপনার কেমন লাগলো কমেন্ট করে জানাবেন।আপনার একটি কমেন্ট আমাদের অনেক উৎসাহিত করে আরও ভালো ভালো লেখা আপনাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ায় জন্য।বানান ভুল থাকলে কমেন্ট করে জানিয়ে ঠিক করে দেওয়ার সুযোগ করে দিন।সম্পূর্ণ রচনাটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।