ডিজিটাল বাংলাদেশ ও প্রযুক্তি ভিত্তিক সেবা রচনা [সঙ্গে PDF]

প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে সারা বিশ্ব যখন অসাধ্য সাধনে ব্যাস্ত তখন বাংলাদেশ- ই বা পিছিয়ে থাকবে কেন? পৃথিবীর অন্যান্য উন্নত দেশগুলির মতো বাংলাদেশও বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ডিজিটালাইজেশনের মতো অত্যাধুনিক পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। এ নিয়েই আমাদের আজকের উপস্থাপন ডিজিটাল বাংলাদেশ ও প্রযুক্তি ভিত্তিক সেবা রচনা।

ডিজিটাল বাংলাদেশ ও প্রযুক্তিভিত্তিক সেবা রচনা বৈশিষ্ট্য চিত্র

ভূমিকা:

প্রযুক্তি হল মানব সভ্যতার কাছে বিজ্ঞানের এমন এক আশীর্বাদ যাকে কাজে লাগিয়ে আজ বিভিন্ন অসাধ্য সাধন করা সম্ভব হচ্ছে। পৃথিবীর বহু দেশ এক্ষেত্রে চূড়ান্ত সাফল্যের নিদর্শন রেখেছে। তবে পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর তুলনায় এখনো এ বিষয়ে আমাদের বাংলাদেশ বেশ খানিকটা পিছিয়ে রয়েছে। তবে দক্ষিণ এশিয়ার বিপুল জনসংখ্যা বিশিষ্ট ছোট একটি দেশ হিসেবে পৃথিবীর বুকে যে প্রযুক্তিগত উন্নতি বাংলাদেশ করেছে তা কোনোভাবেই অবহেলা করার মতন নয়।

২০০৭ সাল পর্যন্ত যেখানে বাংলাদেশকে প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে একটি সম্ভাবনাহীন দেশ বলে মনে করা হতো সেই চিত্র বর্তমানে আমূল বদলে গেছে। প্রযুক্তির অনন্ত সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশ সর্বব্যাপী ডিজিটালাইজেশনের মতন অত্যাধুনিক পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। গোটা দেশজুড়ে এখন প্রকৃত অর্থেই সার্থক হচ্ছে স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের সেই বিখ্যাত উদ্ধৃতি-

“দিনবদলের বইছে হাওয়া, ডিজিটাল বাংলাদেশ আমাদের প্রথম চাওয়া।”

ডিজিটাল বাংলাদেশ ও প্রযুক্তি ভিত্তিক সেবা:

২০০৯ সাল নাগাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের জাতীয় প্রযুক্তিগত উন্নতি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সার্বিক বিকাশের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ: ভিশন-২০২১’ -এর কথা ঘোষণা করার পর থেকেই জাতীয় স্তরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিগত উন্নতির ক্ষেত্রে বিভিন্ন উদ্যোগ গৃহীত হতে থাকে।

সহজ ভাষায় বলতে গেলে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন হলো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে বিশ্বমানের পরিষেবাদানকারী এমন এক দেশের স্বপ্ন যেখানে স্বল্প ব্যয়ে, স্বল্প পরিশ্রমে, তথা স্বল্প সময়ে মানুষের হাতের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য ও বিভিন্ন সেবা পৌঁছে যাওয়ার নিশ্চয়তা থাকবে।

ঘোষণার প্রথম পর্যায়ে সমাজের বিভিন্ন স্তর থাকে নানা সমালোচনা এবং বিরোধিতা এলেও বর্তমানে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রকল্প একটি চরম বাস্তবতা। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যাপক সম্প্রসারণের মাধ্যমে মানুষ এখন দেশের যেকোন প্রান্তে বসে অনলাইন সেবা উপকারিতা ভোগ করতে পারছে। 

সেবামূলক তালিকা:

দেশব্যাপী তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতির ফলে বর্তমানে বিভিন্ন দৈনন্দিন অত্যাবশ্যক প্রযুক্তি ভিত্তিক পরিষেবা ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে অতি সহজে মানুষের হাতের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। এগুলির মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো ই-ব্যাংকিং, ই-কমার্স, ই-লার্নিং, ই-এগ্রিকালচার, ই-হেলথ ইত্যাদি।

ব্যাপক ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে এখন সরকারি বিভিন্ন পরিষেবাও ই-গভর্নেন্স-এর আকারে মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। এই পরিষেবা দানের উদ্দেশ্যে জাতীয় স্তরে বিভিন্ন উদ্যোগও গৃহীত হচ্ছে। ইন্টারনেটের ব্যাপক সম্প্রসারণ, ডিজিটাল ডিভাইস-এর বিপণন বৃদ্ধিতে উৎসাহ ইত্যাদি এ প্রসঙ্গে বিশেষভাবে উল্লেখ্য। 

প্রযুক্তি সেবার গুরুত্ব:

সমগ্র দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা তথা আন্তর্জাতিক সম্মাননার মানচিত্রে দেশের অবস্থানগত উন্নতিকরণ ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই ব্যাপক প্রযুক্তিভিত্তিক সেবার বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। জাতীয় স্তরে তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক সম্প্রসারণ-এর ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে কর্মসংস্থানের সুযোগ।

তাছাড়া সর্বব্যাপী ডিজিটালাইজেশনের ফলে প্রশাসনিক কাজকর্ম অনেক বেশি দ্রুতগতিসম্পন্ন, স্বচ্ছ এবং দুর্নীতিমুক্ত হয়েছে। ব্যাপক ডিজিটাইজেশন প্রত্যক্ষভাবে ছাড়াও পরোক্ষভাবেও বহু মানুষের জীবন ও জীবিকা নির্ধারণের সুযোগ করে দিচ্ছে। মানুষকে আগের মতন এখন আর দীর্ঘ সময় কোন নির্দিষ্ট পরিষেবা পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয় না।

নিজের সুবিধামতো ঘরে বসেই বর্তমানে পরিষেবা লাভ সম্ভব। এছাড়া রাজনীতি, চিকিৎসা ও জাতীয় নিরাপত্তাগত বিভিন্ন ক্ষেত্রেও প্রশাসনিক কাজকর্ম ব্যাপক ডিজিটালাইজেশনের ফলে অত্যন্ত সহজ ভাবে সম্পাদন করা সম্ভব হচ্ছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির এই অভাবনীয় উন্নতি এবং ডিজিটালাইজেশনের ব্যাপক সম্প্রসারণ-এর ফলে ডিজিটাল বাংলাদেশ দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামোর প্রধান মেরুদন্ড হিসেবে উদ্ভূত হয়েছে।

সতর্কতার প্রয়োজনীয়তা:

তথ্যপ্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি ও ডিজিটালাইজেশনের বিপুল সুফল থাকা সত্বেও এর ক্ষতিকর দিকগুলি সম্পর্কেও সমাজের সকল স্তরে সচেতন থাকা প্রয়োজন। কারণ উন্নত বিশ্বে যেখানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নতি দেখা গেছে, সেসব জায়গায় এই উন্নতির পাশাপাশি অপসংস্কৃতি এবং ডিজিটালাইজেশনের বিভিন্ন কুপ্রভাবও পরিলক্ষিত হয়েছে।

একথা অনস্বীকার্য যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সর্বব্যাপী উন্নতির প্রয়োজন আছে, কিন্তু সরকারকে এও খেয়াল রাখতে হবে যাতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রসার এবং উন্নতিকে সঠিক ও যথাযথরূপে সমাজের উন্নতিকল্পে ব্যবহার করা যায়। ডিজিটালাইজেশনের ফলে উন্নত দেশগুলির মতন অপসংস্কৃতি ও কালোবাজারির রমরমা যেন ডিজিটাল বাংলাদেশেও শুরু না হয়।

উপসংহার:

বিভিন্ন ক্ষতিকারক দিকের উদ্ভব সংক্রান্ত আশঙ্কা ও সম্ভাবনা থাকলেও বর্তমানে আর ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নকে অস্বীকার করে উন্নতির পথ থেকে সরে আসা যায়না। বরং কিভাবে সেই সকল ক্ষতিকারক সম্ভাবনাগুলিকে এড়িয়ে সমাজ তথা দেশের অগ্রগতিতে একে ব্যবহার করা যায় সেদিকে নজর দেওয়াই আমাদের বর্তমান কর্তব্য হওয়া উচিত।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন এই বিশের দশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ পৃথিবীর কাছে একটি মডেল হিসেবে পরিচিতি পাবে। বিশেষজ্ঞদের এই ধারণা যাতে সার্থক হয়ে ওঠে সেই উদ্দেশ্যে প্রথমে দেশের প্রযুক্তি মন্ত্রীর স্লোগানকে সাফল্যমন্ডিত করে তুলতে হবে- “প্রযুক্তি প্রগতির পথ হিসাবে গণ্য, ডিজিটাল বাংলাদেশ হতে হবে সকলের জন্য।”


ডিজিটাল বাংলাদেশ ও প্রযুক্তি ভিত্তিক সেবা রচনাটি পড়ে আপনার কেমন লাগলো আপনার ব্যাক্তিগত মতামত কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানান।আমরা সব সময় সচেষ্ট থাকি সবার থেকে সুন্দর ও আপনার মনের মতো করে একটি রচনা তুলে ধরার।এখানে নেই এমন রচনা পাওয়ার জন্য রচনাটির নাম কমেন্ট করে জানান।দ্রুততার সঙ্গে আমরা উক্ত রচনাটি যুক্ত করার চেষ্টা করবো।সম্পূর্ণ রচনাটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

আরও পড়ুন:

ইন্টারনেট রচনা
প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্ব রচনা

তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি রচনা
করোনাকালে ই- লার্নিং এর ভূমিকা রচনা
Print Friendly, PDF & Email

“ডিজিটাল বাংলাদেশ ও প্রযুক্তি ভিত্তিক সেবা রচনা [সঙ্গে PDF]”-এ 1-টি মন্তব্য

Md.Mahmud Hossain Mukit শীর্ষক প্রকাশনায় মন্তব্য করুন জবাব বাতিল