গরু রচনা বা গৃহপালিত পশু গরু রচনা (Cow Essay In Bengali)[PDF]

গৃহপালিত পশু গুলির মধ্যে গরু একটি অন্যতম প্রাণী। সভ্যতার আদিলগ্ন থেকে মানুষের নানান উপকার করে এসেছে গরু। ছোটদের জন্য গৃহপালিত পশু গরু রচনাটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা। তাই ছোটদের জন্য একদম সহজ ভাষায় লেখা আমাদের আজকের উপস্থাপন গরু/ গৃহপালিত পশু গরু প্রবন্ধ রচনা

একটি গরুর ছবি

ভূমিকা:

সভ্যতার শুরু থেকেই পৃথিবীতে জন্তু জানোয়ার এবং মানুষ একে অপরের উপর নির্ভরশীল হয়েই বেঁচে আছে। সেই অতীতকাল থেকে যে সমস্ত প্রাণী মানুষের পোষ মেনে মানুষের ঘরে পালিত হয়েছে এবং জীবনের বহু ক্ষেত্রে মানুষকে প্রতিনিয়ত সাহায্য করেছে তাদেরকে আমরা গৃহপালিত পশু বলে জানি। ইতিহাসে আমরা দেখেছি গাধা, ঘোড়া, কুকুর প্রভৃতি প্রাণীরা জীবনের বিভিন্ন কাজে মানুষকে সাহায্য করেছে।

ঘোড়া যেমন প্রধানত যাতায়াতের কাজে মানুষের বাহন হয়েছে, তেমনই গাধাকে দিয়ে মানুষ নিজের মাল বইয়েছে। গৃহপালিত পশুদের এই তালিকায় একটি অন্যতম উল্লেখযোগ্য নাম হল গরু। সেই প্রাচীনকাল থেকে মানুষের জীবনে এমন কোনো ক্ষেত্র পাওয়া দুষ্কর যেখানে গরুর ভূমিকা নেই। তাই গরু হল এই পৃথিবীর সকল মানুষের কাছে সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গৃহপালিত পশু।

প্রাণীরূপে গরু:

গরু হল একটি স্তন্যপায়ী প্রাণী। এর দুই জোড়া পা ও একটি লেজ থাকে। এই প্রাণীটির পুরুষ রূপকে আমরা ষাঁড় বলে চিনি। ষাঁড়ের পিঠে সাধারণত কুঁজ থাকে এবং তাছাড়া এই প্রাণীটির মাথার উপরে একজোড়া শিং আমরা দেখতে পাই।

গরু মূলত একটি তৃণভোজী প্রাণী। মাঠের সবুজ ঘাস এর প্রিয় খাদ্য। তাছাড়া এই প্রাণীটিকে খড় কিংবা বিচুলিও খাওয়ানো হয়ে থাকে। গরুর পেটে চারটি পাকস্থলী বর্তমান। এইগুলি গরুর খাবার হজমে সাহায্য করে। প্রাণী হিসেবে গরু খুবই শান্ত প্রকৃতির।

মানুষের জীবনে গরু:

মানুষের জীবনে গরুর ভূমিকা এককথায় অপরিসীম। ইতিহাসের কোনো না কোনো পর্যায়ে জীবনের কোন না কোন ক্ষেত্রে এই প্রাণীটি আমাদের সাহায্য করেছে। এখনো অবধি পৃথিবীর কোনায় কোনায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে মানুষের জীবনে গরু এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী।

সেজন্যই এই প্রাণীটি অন্যান্য গৃহপালিত পশুদের থেকে অনেকখানি আলাদা। ভারতীয় উপমহাদেশের গ্রামাঞ্চলে বিভিন্ন গৃহস্থের বাড়িতে গরু পরিবারেরই এক অবিচ্ছিন্ন অংশ হিসেবে পালিত হয়ে থাকে। গ্রামের মানুষ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই প্রাণীটির সাথে একরকম আবেগের বন্ধনে জড়িয়ে যান।

কৃষিকাজে গরুর ভূমিকা:

সেই সুপ্রাচীন কাল থেকে মানুষের কৃষিকাজে গরু এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এই প্রাণীটিকে ব্যবহার করেই মানুষ জমিতে লাঙ্গল এর সাহায্যে চাষ করে, শষ্যদানার বীজ রোপন করেন এবং সেই বীজ মানুষকে জীবনধারণের অন্ন জোগায়। তাছাড়া গরুরই অপর রূপ ষাঁড় এবং বলদকে ব্যবহার করে মানুষ ঘানি থেকে তেল উৎপাদন করে।

দুধের জোগান:

মানুষের জীবনে হয়তো গরুর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হল দুধের জোগান দেওয়া। গরুর দুধ মানুষের কাছে একটি অন্যতম সহজলভ্য পুষ্টিকর খাদ্য। চিকিৎসকেরা গরুর দুধকে শিশুদের জন্য সুষম খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তাছাড়া আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা নির্বিশেষে সকলে গরুর দুধকে প্রতিদিনকার খাদ্য রূপে গ্রহণ করে থাকেন।

এই দুধ পৃথিবীর অন্যান্য বিভিন্ন দ্রব্য তৈরিতে কাজে লাগানো হয়। দুগ্ধজাত দ্রব্য ওপর ভিত্তি করে পৃথিবীজুড়ে নানা বৃহৎ বৃহৎ শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠেছে। সর্বোপরি আমাদের সবার অত্যন্ত পছন্দের সুস্বাদু মিষ্টি উৎসও হলো এই দুধ।

গোবরের উপযোগিতা:

এই পৃথিবীতে সম্ভবত গরুই একমাত্র প্রাণী যার ত্যাগ করা বর্জ্য পদার্থটুকুও মানুষের জন্য বিশেষ প্রয়োজনীয় বলে গণ্য হয়। গরুর গোবর মানুষের জীবনে এক পরম উপযোগী বস্তু। গ্রাম ও শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে গোবর থেকে তৈরি ঘুঁটে অন্যতম প্রধান জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া গোবর গাছপালার সার তৈরীর জন্য অত্যন্ত উপযোগী।

গোবর সার কৃষি ক্ষেত্রের জন্য একান্ত প্রয়োজনীয় বস্তু। এই সার গাছপালা তথা কৃষি ক্ষেত্রের ফলন বৃদ্ধি করে এবং শস্যকে পুষ্টি যোগায়। তাছাড়া ভারতবর্ষের গ্রামাঞ্চলে আজও মানুষের বাড়ির আঙিনায় গোবর জলের ছিটা দেওয়ার প্রথা চালু রয়েছে।

গরুর অন্যান্য ব্যবহার:

উপরে উল্লিখিত ক্ষেত্রগুলি বাদেও গরু মানুষের জীবনে আরো নানা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সেই প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে কিছুদিন আগে অবধিও যাতায়াত ব্যবস্থার মাধ্যমে হিসেবে গরুর গাড়ি ব্যবহার করা হতো। এটি এমন এক প্রাণী যার শরীরের কোন অংশই মানুষের ব্যবহারের বাইরে থাকে না। গরুর শিং এবং হাড়ও জৈব সার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া গরুর চামড়া ঢাক ঢোল ইত্যাদি নানা বাদ্যযন্ত্র এমনকি জুতো তৈরিতেও কাজে লাগে। 

উপসংহার:

মানুষের জীবনে গরু এতটা প্রয়োজনীয় বলেই হয়তো ভারতবর্ষের মানুষ এই প্রাণীটিকে নিজের মায়ের মতো শ্রদ্ধা করে থাকেন। গ্রামের মানুষেরা নিজেদের পালিত গরুকে পরিবারের থেকে আলাদা করে দেখতে পারেন না। এই প্রাণীটিও তার সারা জীবনের দানে মানুষকে পূর্ণ করে দেয়। গৃহপালিত পশু হিসেবে গরু এবং মানুষের ভালোবাসার সম্পর্ক পৃথিবীর বুকে এভাবেই আবর্তিত হতে থাকে।


প্রিয় ছোট্ট বন্ধুরা গৃহপালিত পশু গুরু প্রবন্ধ রচনাটি পড়ে তোমাদের কেমন লাগলো আমাদের কমেন্ট করে জানাও। এরকম আরও রচনা পড়ার জন্য আমাদের সাথে যুক্ত থাকো। ভালো থেকো সুস্থ থেকো আর পড়তে থাকো banglarachana.com.

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন