আমার প্রিয় বই রচনা (Amar Priyo Boi Essay in Bengali) [PDF]

সিলেবাসের বই পড়তে ভালো না লাগলেও গল্পের বই বা উপন্যাস পড়ার প্রতি ভালোবাসা কম বেশি সবার মধ্যেই লুকিয়ে থাকে। কেউ ভূতের গল্পের বই পড়তে ভালোবাসে কেউ বা রহস্য রোমাঞ্চ ভরা উপন্যাস। এ নিয়ে আজকের রচনা আমার প্রিয় বই। (এখানে আমার প্রিয় বই হিসেবে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আরন্যক উপন্যাসের বইকে তুলে ধরা হয়েছে)

আমার প্রিয় বই রচনা বৈশিষ্ট্য চিত্র

ভূমিকা:

আমি বই পড়তে ভালবাসি। বই পড়া আমার নেশা। শৈশবে আমার মা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলেন রঙিন ছবির বই। আজ আর ছবির বই নয়,নানান রকমের লেখার বই এর সঙ্গে আমার গভীর সম্পর্ক। আমি সিলেবাসের পড়ার বই এর কথা বলছিনা। যে বই প্রয়োজনের অতিরিক্ত মন ও মননকে অভিভূত করে আমি বলছি সেই বই এর কথা।

মাঝে মাঝে কিছু ইংরেজির বই পড়লেও আমি বাংলা বই পড়তেই ভালোবাসি। আমার প্রিয় বই এর তালিকায় রয়েছে বেশ কয়েকটি বই,তাদের মধ্যে একটি বেছে নেওয়া সত্যিই খুব কঠিন। কখনো মনে হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “রাজর্ষি”, কখনও মনে হয় বঙ্কিমচন্দ্রের “আনন্দমঠ”, কখনও বা বিভূতিভূষণের”আরণ্যক”।

এদের মধ্যে আমি প্রিয় বই হিসেবে বিভূতিভূষণের “আরন্যক” কেই বেছে নিলাম কারণ আমি এই বইটি যত বার পড়েছি প্রতিবার পেয়েছি নতুনত্বের আস্বাদ।

আরণ্যক উপন্যাসের বৈশিষ্ট্য:

এই উপন্যাসের রচয়িতা বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমরা সকলেই জানি। তাঁর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি “পথের পাঁচালী”। প্রকৃতির সাথে মানুষের সম্পর্ক নিয়ে বিভূতিভূষণের রচনা গুলি কালজয়ী। এধরনের রচনা গুলির মধ্যে আমাকে সবচেয়ে বেশি অভিভূত করেছে ” আরণ্যক”। “আরণ্যক” কাহিনীর কোনো ধারাবাহিকতা নেই।

সমাজের দরিদ্র মানুষের টুকরো টুকরো কাহিনীকে তিনি প্রকৃতির পেক্ষাপটে রূপময় করে তুলেছেন।মানুষ তার লোভের কারণে অরণ্যময় সুন্দর প্রকৃতিকে ধীরে ধীরে নষ্ট করেছে। কৃষিক্ষেত্র তৈরি হয়েছে।জীবিকার তাগিদে এসেছে কিছু গরীব মানুষ।

এদের নিয়েই “আরণ্যক”এর কাহিনী। চরিত্র গুলি কিছু সময়ের জন্য দেখা দিয়ে জনারণ্যে হারিয়ে গেছে।এই উপন্যাসে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় তুলে ধরেছেন গরীব মানুষের সুখ দুঃখের কাহিনি। মানুষকে নিয়ে লেখা এই উপন্যাসের কেন্দ্র বিন্দু কিন্তু অরণ্য।

আরণ্যক এ প্রকৃতি:

বাংলা সাহিত্যে আরণ্যক উপন্যাসের কোনো জুড়ি নেই। প্রকৃতির রূপের এমন বর্ণনা আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না।এই উপন্যাসের মধ্যে কোনো প্রথাগত নায়ক নায়িকা নেই।তবে প্রকৃতিকেই নায়িকা হিসেবে ধরে নেওয়া যেতে পারে।

লেখক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এসেছেন বিহারের এক জঙ্গল মহালে।যার স্থানীয় নাম আজমাবাদ, লবটুলিয়া,ফুলকিয়া, নাড়া বইহার, ইসলামপুর। দিগন্তে মহালিখাহরের পাহাড়। রিজার্ভ ফরেস্টের সীমানা পর্যন্ত এক রহ্যময় আরণ্যক ভূখণ্ড।

বিচিত্র লতাপাতা আর বনস্পতির নিবিড় সমাবেশ।এই সুন্দর প্রকৃতিকে ধ্বংস করে জনপদ বসানোর উদ্দেশ্যে লেখকের আগমন।একটু একটু করে প্রকৃতি ধ্বংস হয়েছে।এর সাথেই প্রকাশিত হয়েছে লেখকের বেদনা।

আরণ্যক এ মানুষ:

আরণ্যক বলতে শুধু জনমানব শূন্য বনভূমি নয়, জনতারও সমাবেশ ঘটেছে। জমিদারের লোভে কারণে ধ্বংস হচ্ছে বিশাল অরণ্য ভূমি। জনপদ পত্তনের আয়োজন চলেছে জঙ্গলমহলে আর এই আয়োজন পূর্ণ করতে এসেছে বিচিত্র ধরনের সব মানুষ জন। অরণ্যের পটভূমিতে এরা প্রত্যেকেই জীবন্ত হয়ে উঠেছে।

এই সব মানুষ গুলিকে নগর জীবনের পটভূমিকায় তুলে ধরলে তাদের স্বরূপ ঠিক বোঝা যাবেনা।এই মানুষ গুলি হলো ধাওতাল সাহু, ভানুমতি, কুন্তা, মঞ্চী,, ধাতুরিয়া। এছাড়াও উল্লেখযোগ্য মজুরের দল শুধুমাত্র নাম উল্লেখ করে এদের বোঝানো যাবে না,এরা প্রত্যেকেই স্বতন্ত্র সত্তার অধিকারী।

উপসংহার:

বার বার পড়েও পুরোনো হয়নি এই বইটি আমার কাছে। তাই বইটি আমার এত্ত প্রিয়। ভাষা, বর্ণনা ও চরিত্রের উপস্থাপন এতো সুন্দর যে সব মিলিয়ে এক বিস্ম়কর সৃষ্টি। আমাদের পরিচিত ভুবনে আর এক ভুবন।

লোবটুলিয়া তার প্রাকৃতিক সম্ভার নিয়ে লুপ্ত হয়ে গেছে পৃথিবী থেকে। হারিয়ে গেছে রাজু পাড়ে,ভানুমতির মতো মানুষেরা। কিন্তু এই উপন্যাস টিতে তারা অনাগত কালের পাঠক পাঠিকার জন্যে চিরজীবী হয়ে আছে।


আমার প্রিয় বই প্রবন্ধ রচনাটি পড়ে আপনার কেমন লাগলো আপনার ব্যাক্তিগত মতামত কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানান।আমরা সব সময় সচেষ্ট থাকি সবার থেকে সুন্দর ও আপনার মনের মতো করে একটি রচনা তুলে ধরার।

এখানে নেই এমন রচনা পাওয়ার জন্য রচনাটির নাম কমেন্ট করে জানান।দ্রুততার সঙ্গে আমরা উক্ত রচনাটি যুক্ত করার চেষ্টা করবো।সম্পূর্ণ রচনাটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

উল্লেখ: https://www.scribd.com/doc/88610366/Amar-Priyo-Boi

Print Friendly, PDF & Email

“আমার প্রিয় বই রচনা (Amar Priyo Boi Essay in Bengali) [PDF]”-এ 2-টি মন্তব্য

Rakesh Routh শীর্ষক প্রকাশনায় মন্তব্য করুন জবাব বাতিল