আমার প্রিয় চলচ্চিত্র রচনা বা তোমার প্রিয় চলচ্চিত্র রচনা [সঙ্গে PDF]

সিনেমা বা চলচ্চিত্র শুনলেই সত্যজিৎ রায়ের কালজয়ী সব চলচ্চিত্র গুলির কথা মনে ভেসে ওঠে। এই সমস্ত চলচ্চিত্র গুলির মধ্যে একটিকে প্রিয় সিনেমা হিসেবে বেছে নেওয়া যথেষ্ট কঠিন। তবে আমার দেখা সবচেয়ে প্রিয় চলচ্চিত্র বলতে হলে তা হল গুপি গাইন বাঘা বাইন। এ নিয়ে আমাদের আজকের উপস্থাপন আমার প্রিয় চলচ্চিত্র রচনা

আমার প্রিয় চলচ্চিত্র রচনা বৈশিষ্ট্য চিত্র

ভূমিকা:

যে কোন শিল্পের মত চলচ্চিত্রও একটা বোধের প্রকাশ। আমরা যা দেখি, যা শুনি, যা অনুভব করি, তারই একপ্রকার বহিঃপ্রকাশ হলো সিনেমা বা চলচ্চিত্র। আবার তেমনি অলৌকিক কোন ভাবনার রেলগাড়ি চেপে সুদূর নিশ্চিন্দিপুরে নিয়ে দাঁড় করায় এই সিনেমাই। কখনো আকাশ থেকে ঝুপ করে মাটিতে, আবার কখনো মাটি থেকে আকাশে, এই অনন্যতা চলচ্চিত্র ছাড়া অন্য কোথাও আছে বলে আমার জানা নেই।

কিছু কিছু সিনেমা থাকে যা জ্ঞান বুদ্ধি হওয়ার অপেক্ষা না করেই দেখে ফেলা যায়। যেখানে রয়েছে এক শীতের দুপুরের ওমের স্পর্শ আর ঠাকুমার এক গাল গল্পের ঝুড়ি। ঠিক এভাবেই সাজিয়েছিলেন খুব যত্ন করে সত্যজিৎ রায় তার সাধের “গুপী গাইন বাঘা বাইন”। এটি আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে প্রিয় চলচ্চিত্র বলে আমি মনে করি।

সত্যজিৎ রায় ছিলেন কালজয়ী এমন এক প্রতিভা যিনি শুধুই সিনেমা দেখাতেন না, বরং তিনি মনের মধ্যে চলচ্চিত্র নিয়ে নিয়ে এক গভীর ভাবনার অবকাশ তৈরি করে দিতেন। ছেলেবেলায় দেখা এই অদ্ভুত সুন্দর চলচ্চিত্রটি এখনো দেখার সময় যেন পুরনো গল্পের বইয়ের পৃষ্ঠার মতন গন্ধ নাকে ভেসে আসে।

চলচ্চিত্রটির প্রেক্ষাপট:

শোনা যায় “গুপী গাইন বাঘা বাইন” বিখ্যাত শিশুসাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী রচিত একই নামের একটি উপন্যাস থেকে গল্পটি সংগৃহীত। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সাহিত্যকার উপেন্দ্রকিশোর ছিলেন সত্যজিৎ রায়েরই পিতামহ। সত্যজিৎ রায় তাঁর অন্যান্য চলচ্চিত্রের মতন এই ছবিতেও  চিত্রনাট্য রচনা এবং সংগীত পরিচালনার গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন।

এই গল্পের দুই মূল চরিত্রই হলো গুপী এবং বাঘা। যারা ছিলো  সঙ্গীতের অনুরাগী। সারাদিন তারা নানা গান শুনত , গান দিয়ে কথা বলত অথচ তারা গানটাই গাইতে পারতো না। এই কারণেই গ্রামবাসীরা অতিষ্ঠ হয়ে গুপীর গ্রাম আমলকি এবং বাঘার গ্রাম হরতকি থেকে বিতাড়িত করেন তাদের।

গ্রাম থেকে বিতাড়িত হয়ে একটি গভীর জঙ্গলে তারা দুজন দুজনের সাক্ষাৎ পায় এবং সত্যজিৎ রায়ের অত্যাশ্চর্য সৃষ্টি ভূতের রাজার কাছ থেকে তিনটি অনন্য বর লাভ করে বিশ্বভ্রমণে বেরোয়। এরপর কিভাবে গল্পের মোছরে বাঘা এবং জীবন বদলে যেতে থাকে তাইই হল এই চলচ্চিত্রের মূল দ্রষ্টব্য।

প্রিয় চরিত্র:

এই চলচ্চিত্রে গুপী এবং বাঘা, এই দুটি চরিত্রই প্রধানতম। এরমধ্যে থেকে কোন একজনকে বেছে নেওয়া কোন দর্শকের পক্ষেই সম্ভব নয়। তাও যেহেতু আমার প্রিয় চলচ্চিত্র নিয়ে এই প্রবন্ধের উপস্থাপনা, তাই বলবো, অভিনয় এবং দক্ষতার দিক থেকে আমি ভালোবেসেছি বরাবরই গুপীকে। গুপির চরিত্রে অভিনয় করা অভিনেতা তপেন চট্টোপাধ্যায়-এর সাথে আমরা সকলেই সুপরিচিত।

তবে এই চলচ্চিত্রটিতে গুপি ছাড়াও প্রতিটি চরিত্রই আমার অত্যন্ত কাছের এবং প্রতিটি চরিত্রে অভিনীত ব্যক্তিদের অভিনয় দক্ষতা এক কথায় অভূতপূর্ব। এ প্রসঙ্গে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় হাল্লা এবং শুণ্ডির রাজার ভূমিকায় অভিনয় করা সন্তোষ দত্তের কথা। তিনি তার অপূর্ব অভিনয় দক্ষতার মাধ্যমে দ্বৈত চরিত্রে নিজেকে পৃথক পৃথকভাবে দর্শকদের সামনে ফুটিয়ে তুলেছিলেন।

চলচ্চিত্রটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য:

 ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ মূলত ছোটদের চলচ্চিত্র হলেও প্রতিটি বয়সের জন্য এই সিনেমাটি নির্মিত বলে আমার মনে হয়। তাছাড়া পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্র পরিচালনা থেকে শুরু করে সঙ্গীত নির্মাণের দক্ষতা এই সিনেমাটিকে এক অনন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে।

সর্বোপরি ছয় মিনিটের একটি ভূতের নৃত্যের দৃশ্য অতি সুন্দর ভাবে সিনেমাটোগ্রাফির মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছিলেন পরিচালক রায়। সময় যত গড়িয়েছে ‘গুপি গাইন বাঘা বাইন’ চলচ্চিত্রটি জাতীয় তথা আন্তর্জাতিক সিনেমার জগতে একটি মাস্টারপিস হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে।

উপসংহার:

প্রতিটি চলচ্চিত্রের একটি নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও নিজস্ব মাদকতা থাকে। তেমনই এই ছবিটি আমার খুব কাছের এবং সবচেয়ে প্রিয় কারণ এখানকার প্রত্যেকটি মানুষ যারা এই চলচ্চিত্রটিতে কাজ করেছেন তারা তখনো ছোটদের জন্য উন্নত চারুকলা নির্মাণ নিয়ে গভীর চিন্তা ভাবনা করতেন।

আমি আমার দশ বছর বয়সে সিনেমাটি দেখেছিলাম এবং এখনো মাঝেমধ্যেই একইভাবে ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ চলচ্চিত্রটি উপভোগ করে থাকি। আমি মনে করি সিনেমার ছোট-বড় বয়স অনুযায়ী ফারাক হয় না। তাছাড়া এই চলচ্চিত্রটির  সাথে মিশে আছে আমার ছোটবেলার গন্ধ। গুপী আর বাঘা হাততালি দিয়ে নানা দেশে চলে যাওয়ার জাদুর মতন এমন অভিনব ভাবনাকে চলচ্চিত্রে রূপদানের মতন উদাহরণ বর্তমান চলচ্চিত্র জগতে সত্যিই বিরল।

গলা মিলিয়ে গান এবং অবলীলায় হাসতে থাকা দুটো সারল্যে ভরা প্রাণের দৃশ্যনির্মাণ, বর্তমানে খুব কম চলচ্চিত্রতেই  ফুটে ওঠে। অনেকেই বলে ছোটবেলার সব জিনিস সুন্দর হয়। হয়তো সেজন্যেই আরো বেশি করে এই চলচ্চিত্রটিকে নিয়ে নিয়ে আমার এত নস্টালজিয়া, এতোখানি ভালোবাসা।


আমার প্রিয় চলচ্চিত্র রচনাটি পড়ে আপনার কেমন লাগলো কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানান। আমরা সব সময় সচেষ্ট থাকি সবার থেকে সুন্দর ও আপনার মনের মতো করে একটি রচনা তুলে ধরার। এখানে নেই এমন রচনা পাওয়ার জন্য রচনাটির নাম আমাদের কমেন্ট করে জানান। দ্রুততার সঙ্গে আমরা উক্ত রচনাটি যুক্ত করার চেষ্টা করবো। সম্পূর্ণ রচনাটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন