আমার প্রিয় খেলা ক্রিকেট রচনা [সঙ্গে PDF]

ক্রিকেট হল ফুটবলের পরেই সমগ্র বিশ্বের একটি অন্যতম জনপ্রিয় খেলা। পৃথিবী জুড়ে অসংখ্য দেশের অসংখ্য মানুষ নিয়মিত ক্রিকেট খেলে থাকেন। ভারতীয় ক্রিকেট হল ভারতবর্ষে প্রচলিত সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলাগুলির একটি। আজকে ‘আমার প্রিয় খেলা ক্রিকেট’ শীর্ষক এই প্রবন্ধে সমগ্র বিশ্বের এই অন্যতম জনপ্রিয় খেলার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে আমরা আলোকপাতের চেষ্টা করব।

আমার প্রিয় খেলা ক্রিকেট রচনা বৈশিষ্ট্য চিত্র

ভূমিকা:

প্রত্যেকটি মানুষের জীবনে কোন না কোন একটি প্রিয় খেলা থাকে। ছেলেবেলা থেকেই মানুষের মন সেই খেলাটির সঙ্গে আবেগের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বিকাশ লাভ করে। যেকোনো খেলাই মানব মনের বিকাশ ঘটায়, চিন্তার গণ্ডিকে প্রসারিত করে এবং সর্বোপরি একজন সুষ্ঠু মানুষ হয়ে উঠতে সহায়তা করে।

আমার বন্ধুদেরও সকলের কিছু না কিছু প্রিয় খেলা রয়েছে। কেউ ভালোবাসে ফুটবল, কেউ ব্যাডমিন্টন, কেউ দাবা খেলতে ভালবাসে, আবার কেউ কেউ আমারই মতন ভালোবাসে ক্রিকেট খেলতে। হ্যাঁ, আমার প্রিয় খেলা হল ক্রিকেট, যা আমি নিয়মিত আমার স্কুল এবং পাড়ার বন্ধু বান্ধবদের সাথে খেলে থাকি। খুব ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেট খেলার প্রতি আমার এক অদ্ভুত আসক্তি তৈরি হয়। আমার এই প্রিয় খেলা ক্রিকেটকে আমি কিভাবে আমার মানসচক্ষে দেখেছি, সে সম্পর্কেই আজ এই প্রবন্ধে আলোচনা করতে চলেছি।

কেন ক্রিকেট:

আমার প্রিয় খেলা ক্রিকেট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনার পূর্বে এই খেলাটি কেন আমার এত প্রিয়, এত কাছের সে সম্পর্কে কিছু কথা বলা প্রয়োজন। ক্রিকেট আমার কাছে এটি আবেগের নাম। খুব ছোটবেলা থেকেই যখন টেলিভিশনে শচীন টেন্ডুলকার কিংবা মহেন্দ্র সিং ধোনিকে ব্যাট হাতে ক্রিকেটের ময়দানে দাপিয়ে বেড়াতে দেখতাম, আমি তখন থেকেই স্বপ্ন দেখেছি জাতীয় স্তরে ক্রিকেট খেলার। ক্রিকেট খেলার মধ্যে যে তীব্র অনিশ্চয়তা ও উদ্দীপনা রয়েছে প্রতিমুহূর্তে আমার মনে আলোড়ন সৃষ্টি করে।

মানুষের কাছে খেলা মানে হয়তো শুধুই শারীরিক কিংবা মানসিক বিনোদন মাত্র। তবে ক্রিকেট আমার কাছে জীবন দর্শনের অপর এক রূপ। জীবনে যেমন ওঠাপড়া থাকে, ক্রিকেটের ম্যাচেও তেমন উত্থান পতন থাকে। ক্রিকেটের ম্যাচে কেমন ছক্কা হাঁকিয়ে সাফল্য নিয়ে আসা যায়, জীবনেও তেমনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছয় হাঁকিয়ে সফলতার স্বাদ পাওয়া যেতে পারে। তাছাড়া একটি ক্রিকেট ম্যাচ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল মানুষকে তার স্বকীয় মহিমায় মাতিয়ে রাখে। সর্বোপরি একটি ক্রিকেট ম্যাচে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে শরীর এবং মনের যে বিকাশ ঘটে তা সম্ভবত অন্য কোন খেলা দ্বারা সম্ভব নয়।

ক্রিকেটের ইতিহাস:

ক্রিকেট খেলার উৎপত্তির ইতিহাস নিয়ে নানা স্তরে নানারকম মতামত প্রচলিত রয়েছে। তবে এ বিষয়ে মোটামুটি সকলেই একমত যে ক্রিকেট খেলার উৎপত্তি ষোড়শ শতকের ইংল্যান্ডে। তবে তাঁর পূর্বেও ইংল্যান্ডে কিছু কিছু জায়গায় ক্রিকেট জাতীয় খেলার উল্লেখ পাওয়া যায়। এছাড়া ক্রিকেট শব্দটির ব্যাপারে সাধারণভাবে প্রচলিত মত হল এই যে, ওলন্দাজ শব্দ ক্রিক থেকে ক্রিকেট শব্দের উৎপত্তি।

প্রাথমিকভাবে এই শব্দের অর্থ ছিল সকলে মিলে একসাথে মজা করা। তবে প্রাপ্ত বয়স্কদের খেলা হয়ে ওঠার পুর্বে বহুকাল ক্রিকেট শুধুমাত্র ছোটদের খেলা হিসেবে সুপ্রচলিত ছিল। প্রথমদিকে খড় দ্বারা তৈরি বল এবং খামারবাড়ির কোন পরিত্যক্ত ডান্ডা দিয়ে ক্রিকেট খেলা হত। পরবর্তীকালে সময়ের সাথে সাথে এই খেলা সুসংহত রূপ পায়। এরপরে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের যুগে ইংরেজদের হাত ধরে সমগ্র পৃথিবীতে ধীরে ধীরে ক্রিকেট খেলা ছড়িয়ে পড়ে। যতদূর জানা যায় পৃথিবীর প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার মধ্যে।

ক্রিকেট খেলার উপাদানসমূহ:

ক্রিকেট খেলার জন্য বর্তমান নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী বেশ কয়েকটি সাধারণ উপাদান প্রয়োজন হয়। ক্রিকেট খেলার প্রাথমিক উপাদান হলো দুটি দল এবং প্রতিটি দলে ১১ জন করে খেলোয়াড় সহ দুজন আম্পায়ার। এই ২ জন সমগ্র ম্যাচটি পরিচালনা করে থাকেন। এছাড়া প্রয়োজন হয় ব্যাট, বল এবং পিচের দুপাশে তিনটি করে উইকেটের দুটি সেট  তবে ক্রিকেট খেলার জন্য নির্ধারিত মাঠের কোন নির্দিষ্ট আয়তন নেই। বিভিন্ন মাঠ বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে। তবে ২২ গজের একটি পিচ থাকা আবশ্যক।

বর্তমান আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী ক্রিকেট খেলোয়াড়দের বিশেষ কাপড় দ্বারা তৈরি জামা কাপড় এবং জুতো পরতে হয়। উইকেট কিপার, শর্ট ফিল্ডার এবং ব্যাটসম্যানদের ক্ষেত্রে পায়ের প্যাড, হাতের গ্লাভস এবং মাথায় হেলমেট পড়ার অনুমতি রয়েছে।

ক্রিকেটের সাধারণ নিয়ম নীতি:

ক্রিকেট খেলায় অংশগ্রহণ করা দুটি দল একটি ইনিংসে একবার করে ব্যাট ও বল করার সুযোগ পায়। একটি টসের মধ্যে দিয়ে আম্পায়ারের হাত ধরে ক্রিকেট ম্যাচের সূচনা হয়। সেই টসে বিজয়ী দল নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী ব্যাট কিংবা বল করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। একদল ব্যাট করে আর অন্যদল মাঠের নির্দিষ্ট স্থান ঘিরে দাঁড়ায় যাতে বল আয়ত্তের বাইরে যেতে না পারে। দুজন ব্যাটধারী দুদিকে উইকেটের নিকট পরস্পর মুখোমুখি দাঁড়ায়। অন্যদিকে অপর দলের একজন একদিক হতে বল নিক্ষেপ করে ব্যাটধারীর উইকেট স্পর্শ বা আঘাত করতে চেষ্টা করে। বল নিক্ষেপকারীকে বোলার বলে।

ব্যাটধারীর উইকেটের পেছনে যে দাঁড়িয়ে থাকে তাকে ‘উইকেট রক্ষক’ বলে। তাদের লক্ষ্য থাকে উইকেট বলের দিক, বাকি খেলোয়াড় চতুর্দিকে নির্দিষ্ট স্থানে দাড়িঁয়ে বল আটকাবার চেষ্টা করে। এ জন্য তাদেরকে ফিল্ডার বলে। একদলের দশজন খেলোয়াড় আউট হলে তাদের এক ইনিংস শেষ হয়। তখন অপর দল ব্যাট করার সুযোগ পায়। ক্রিকেট খেলায় আউটের বিভিন্ন নিয়ম আছে। কোনটি বোল্ড আউট, কোন টি স্ট্যাম্প আউট, কোনটি রান আউট, আবার কোন টি ক্যাচ আউট নামে পরিচিত।

ভারতবর্ষ ও ক্রিকেট:

ভারতবর্ষে ক্রিকেট খেলার প্রচলন ঘটে ঔপনিবেশিক যুগে ব্রিটিশদের হাত ধরে। ষোড়শ শতাব্দীতে ব্রিটিশরা ভারতবর্ষের বুকে প্রথম ক্রিকেট খেলে। তবে বহু কাল পর্যন্ত ক্রিকেট খেলা শুধুমাত্র ব্রিটিশদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। ভারতীয় হিসেবে প্রথম ক্রিকেট খেলায় অংশগ্রহণ করে বোম্বাইয়ের পার্সি সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ। এরপর ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড গঠিত হয়। এরপর ধীরে ধীরে ভারতবর্ষের ক্রিকেট ইতিহাসে বিভিন্ন তারকার আবির্ভাব ঘটে।

এদের মধ্যে রঞ্জিত সিং, মনসুর আলী খান পতৌদি, কপিল দেব, সুনীল গাভাস্কার, শচীন তেন্ডুলকর, সৌরভ গাঙ্গুলী প্রমুখরা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ১৯৮৩ সালে সর্বপ্রথম ভারত কপিল দেবের অধিনায়কত্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে বিশ্বকাপ ট্রফি জেতে। এই সময় এরপর থেকে ভারতীয় ক্রিকেটকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে সব ধরনের ক্রিকেটে ভারত সম্ভবত সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য নামগুলির মধ্যে একটি।

বর্তমান আন্তর্জাতিক ক্রিকেট:

উৎপত্তি থেকে শুরু করে এখনো পর্যন্ত ক্রিকেট ব্যাপক ভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। শুরুর দিকে শুধুমাত্র টেস্ট ম্যাচ খেলা হলেও পরবর্তীকালে ক্রিকেটের প্রচলন ঘটেছে একদিনের ম্যাচের। প্রথমদিকে এই একদিনের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হতো ষাট ওভারে। আরো পরে এই ৬০ ওভারের ম্যাচকে ৫০ ওভারে নামিয়ে আনা হয়। আরো পরবর্তীকালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রচলন ঘটে ২০ ওভারের ম্যাচ কিংবা টুয়েন্টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটের। আগে একটি ম্যাচে দুজন আম্পায়ার থাকলেও বর্তমানে সিদ্ধান্তের সুবিধার্থে মাঠের বাইরে থেকে একজন থার্ড আম্পায়ার খেলা পর্যবেক্ষণ করেন। বর্তমানে ক্রিকেটে বিভিন্ন প্রকারের প্রযুক্তির ব্যবহারও হয়ে থাকে। 

আমি ও ক্রিকেট:

আমি খুব ছোটবেলা থেকে আমার পাড়ায় এবং বিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্রিকেট খেলি। আমার মা-বাবা আমারে ক্রিকেট খেলায় বিশেষভাবে উৎসাহ দিয়ে থাকেন। তাছাড়া আমি নিকটবর্তী একটি ক্রিকেট প্রশিক্ষণ ক্লাবের সাথেও যুক্ত আছি। সেখানে আমি একজন কোচের কাছে নিয়মিত ক্রিকেট চর্চা করি। আমার স্বপ্ন হলো একদিন আমি ভারতের হয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ক্রিকেট খেলব। আমি একজন ক্রিকেটার হিসেবে ব্যাট করতে ভালোবাসি। আমার কাছে আদর্শ হলেন রাহুল দ্রাবিড়।

উপসংহার:

আমি তথা সমগ্র ভারতবর্ষের কাছে ক্রিকেট হল একটি সার্বিক আবেগের নাম। যেকোনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচে যেখানে ভারত অংশগ্রহণ করে সেখানে সকল ভারতবাসী জাতি-ধর্ম-বর্ণ, ধনী-দরিদ্র সকল ভেদাভেদ ভুলে মেতে ওঠে ভারতবর্ষের বন্দনায়। বলা হয়ে থাকে প্রতিটি ভারতবাসীর সাধারণ ধর্ম হল ক্রিকেট। আমি একদিন এই ক্রিকেট নিয়ে জীবনে আমার দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে সক্ষম হব, এই আশা রাখি।


উপরিউক্ত আলোচ্য প্রবন্ধে আমরা সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে সবকটি দিকের ওপর যথাসম্ভব যথাযথভাবে আলোকপাত করার চেষ্টা করেছি। তবে পরীক্ষার প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে প্রবন্ধের শব্দসীমাকেও যথাযথ রাখার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা করা হয়েছে। আশাকরি আমাদের এই প্রয়াস আপনাদের ভাল লেগেছে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী তা যথাযথভাবে আপনাদের সহায়তা করতে পারবে।

উপরিউক্ত প্রতিবেদনটি সম্পর্কে আপনাদের মতামত কমেন্টের মাধ্যমে বিশদে আমাদের জানান। আপনাদের মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চেষ্টা করব আপনাদের মতামত অনুযায়ী আমাদের লেখনীকে আরও উন্নত করে তোলার। তাছাড়া যদি এমনই অন্য কোন রচনা পড়তে চান সে বিষয়েও আমাদের অবগত করুন। আমরা অতি সত্বর সেই রচনাটি আপনার কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করব। ধন্যবাদ।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন