আমার জীবনের লক্ষ্য বিজ্ঞানী হওয়া রচনা [সঙ্গে PDF]

আমাদের প্রত্যেকের জীবনেরই নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্য থাকে। শৈশব লক্ষ্য পূরণের জন্য আমরা ছেলেবেলা থেকে প্রস্তুত হয়ে ধীরে ধীরে লক্ষ্য পূরণের পথে এগিয়ে যাই। বিজ্ঞান হল আগামীর বিশ্বে সর্বসাধারণের জন্য গ্রহণীয় আসন্ন ধর্ম। আর বিজ্ঞানী হলেন সেই ধর্মের প্রধান পুরোহিত। বিজ্ঞানের পৌরহিত্যের লক্ষ্যে বর্তমানে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রী অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছে। আমাদের এই প্রবন্ধে আমরা একজন শিক্ষার্থীর দৃষ্টিকোণ থেকে জীবনে বিজ্ঞানী হয়ে ওঠার লক্ষ্য সম্বন্ধে একটি প্রতিবেদনের উপস্থাপনা করতে চলেছি।

আমার জীবনের লক্ষ্য বিজ্ঞানী হওয়া রচনা বৈশিষ্ট্য চিত্র

ভূমিকা:

মানুষের জীবন হলো বহমান নদীর স্রোতের মতো। জন্ম থেকে শুরু করে সময়ের খেয়াল খুশিমতো সে ইতস্তত বিক্ষিপ্ত ভাবে আপন মহিমায় বয়ে চলে। নদী যেমন নিজের ইতস্তত বিক্ষিপ্ত ভাবে বয়ে চলা স্রোতধারাকে চালনা করে পরম লক্ষ্য মহাসমুদ্রের দিকে, তেমনি মানুষও সেই জীবনের স্রোতকে চালনা করে নিজের জীবন দিয়ে স্থির করা পরম লক্ষ্যের দিকে।

নদী যেমন সমুদ্রের ঢেউয়ের সাথে মিশে আপন উৎসের সার্থকতা খুঁজে পায়, তেমনি মানুষের জীবনও নিজের জীবনে স্থির করা লক্ষ্যে পৌঁছে মানবজন্মের সার্থকতা খুঁজে পায়। তাই প্রত্যেকের মতোই আমার জীবনের একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য আছে। আমার বন্ধুরা কেউ জীবনে ইঞ্জিনিয়ার, কেউ ডাক্তার, আবার কেউ ব্যবসায়ী হতে চায়। আমি জীবনে বিজ্ঞানী হতে চাই; একজন মহাকাশ বিজ্ঞানী।

জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণের গুরুত্ব:

জীবনের সুস্থ যাপনের জন্যে তার একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য বা অভিমুখ থাকা একান্ত জরুরি। জীবনের অনেক সময় অনেকভাবে আমরা অপচয় করে ফেলি, যার কোন ক্ষতিপূরণ করা সম্ভব হয় না।মানুষের নিজস্ব একটা লক্ষ্যস্থান থাকলে সেই স্থানেই সে নিজেকে উন্নীত করতে পারে।

প্রত্যেক মানুষের জীবনে কোনো না কোনো স্বপ্ন থাকে। সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য মানুষকে পরিশ্রম ও সাধনা করতে হয়। নির্দিষ্ট লক্ষ্য না থাকলে জীবনে সফলতা লাভ করা যায় না। কান্ডারি বিহীন তরী যেমন অকূল মহাসমুদ্রে তীর খুঁজে পায়না, তেমনি লক্ষ্যবিহীন জীবনও এ কন্টকাকীর্ণ পৃথিবীতে সাফল্যের সোপান খুঁজে পায় না। মানুষের মনের মধ্যে লালিত স্বপ্নই তাকে তার লক্ষ্যের বন্দরে পৌঁছে দেয়।

সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকলে জীবনে বিপথগামী, লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। তাই প্রত্যেক মানুষের জীবনে একটা অর্থবহ লক্ষ্য থাকা প্রয়োজন। এই প্রসঙ্গে ডা. লুৎফর রহমান এর বক্তব্য স্মরণীয়- ‘জীবনের প্রথম থেকে ঠিক করে নাও তুমি কোন কাজের উপযুক্ত। এটা একবার, ওটা একবার করে যদি বেড়াও তাহলে তোমার জীবনের কোনো উন্নতি হবে না। এরূপ করে অনেক লোকের জীবন নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তোমার যেন তা না হয়।’ 

জীবনে পেশার প্রয়োজনীয়তা:

পেশা হল কোন ব্যক্তির কোন নির্দিষ্ট বা বিশেষ বিষয়ে শিক্ষালাভ বা প্রশিক্ষণ গ্রহণ পরবর্তী জীবন-জীবিকা নির্বাহের জন্য চাকুরী বা অন্য কোন বৃত্তিবিশেষ। এর মাধ্যমে তিনি অর্থ উপার্জন করেন বা জীবিকা নির্বাহ করেন। প্রত্যেকটি মানুষেরই বেঁচে থাকার জন্যে অর্থের প্রয়োজন।

নিজের জীবনকে সুন্দর করে তোলার জন্যও অর্থের প্রয়োজন, জীবিকা নির্বাহের জন্য তাই পেশা নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের পেশাই নির্ধারণ করে দেয় তার ভবিষ্যৎ জীবনের সুখ সমৃদ্ধি এবং তার জীবনচর্চার মান। পেশা নির্বাচনের সঙ্গে প্রায়শই জড়িয়ে থাকে অর্থনৈতিক উন্নতি এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠার  মনষ্কামনা।

লক্ষ্য নির্বাচনের সঠিক সময়:

ছাত্রজীবন আদতে তপস্যার সময়। এই সময় কঠোর অধ্যবসায় ও পরিশ্রমের সময়। তাই ছাত্রজীবনে কোনো অর্থবহ লক্ষ্যকে সামনে রেখে সঠিক পথে পরিশ্রম ও মনপ্রাণ দিয়ে সাধনা করলেই লক্ষ্যে পৌঁছে জীবনকে সার্থক করা যায়। তাই ছাত্রাবস্থাতেই একটি লক্ষ্য স্থির করে তাকে বাস্তব রূপদান করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে সামনের দিকে অগ্রসর হতে হয়।

কেন বিজ্ঞানী:

আমি কেন জীবনে বিজ্ঞানী হতে চাই তার পেছনে অসংখ্য কারণ বিদ্যমান। তবে প্রধান কারণটি হল, আমি মনে করি অন্য যে কোন পেশায় সমাজকে প্রত্যক্ষভাবে সেবাদানের সুযোগ থাকলেও বিজ্ঞানীরাই একমাত্র যারা চিরকাল লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে পিছন থেকে সমাজের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করে যান।

বিজ্ঞানীরা শুধুমাত্র নিজেদের পরীক্ষা, পর্যবেক্ষণ এবং সিদ্ধান্ত নিয়েই খুশি থাকেন; তথাকথিত নাম-যশ ও খ্যাতিহীন আকাঙ্ক্ষা তাদের সাধারনত থাকে না। নিজেদের গবেষণার বিষয় নিয়ে পাগল এইসব মানুষ গুলি প্রতিনিয়ত সমাজকে সেবা দানের উদ্দেশ্যে অন্ধকার গবেষণাগারে পরিশ্রম করে চলেন। 

লক্ষ্য পূরণের ভিত্তি স্থাপন:

জীবনের যেকোনো লক্ষ্য পূরণ করার জন্য প্রথমে প্রয়োজন যথাযথ ও সুষ্ঠু পরিকল্পনা। পরিকল্পনাহীন লক্ষ্য কেবলমাত্র স্বপ্নের সোনার পাথরবাটি হয়েই থেকে যায়। তাই আমার জীবনের এই বিজ্ঞানী হওয়ার লক্ষ্য পূরণের জন্য আমি ধাপে ধাপে নির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে অগ্রসর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার লক্ষ্য পূরণের পথে আমায় সবচেয়ে বেশি সাহায্য করছেন আমার বাবা-মা এবং শিক্ষকেরা।

তাদের পরামর্শ মতো আমি এখন থেকেই মহাকাশ গবেষণা সংক্রান্ত বিভিন্ন ছোট ছোট আবিষ্কার নিয়ে গভীরভাবে পড়াশোনা করার চেষ্টা করি। আমি ঠিক করেছি বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করে স্কুল জীবন শেষের পর কলেজে আমি পদার্থবিদ্যাকে সাম্মানিক বিষয় হিসেবে বেছে নেব। তারপর কলেজ থেকে আমি চেষ্টা করব ইসরোর একজন সাধারণ শিক্ষানবিশ হিসেবে ভর্তি হবার।

লক্ষ্যপূরণ ও পরিণতি:

একথা সত্য যে লক্ষ্য পূরণ হওয়ার আগে সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর পরের পরিণতি সম্পর্কে অগ্রিম চিন্তা করা উচিত নয়। কিন্তু তার পাশাপাশি এ কথা ভুলে গেলেও চলবে না যে লক্ষ্য পূরণের পরবর্তী জীবন সম্পর্কে প্রাথমিক চিন্তাভাবনা লক্ষ্যে পৌঁছানোর উদ্যমকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।

আমি তেমন অর্থে লক্ষ্য পূরণের পরবর্তী জীবন সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা না করলেও একথা স্থির করেছে যে যদি আমি একজন বিজ্ঞানী হতে পারি, তবে একজন সার্থক বিজ্ঞানী হিসেবে আমার চরিত্র ঠিক কি হবে। আমার ইচ্ছে আমি সারা জীবন আমার দেশের উন্নতি এবং দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করে যাব।

অনেকের একথা মনে হতে পারে যে মহাকাশ গবেষণার মাধ্যমে কিভাবে সাধারণ মানুষের কল্যাণ সাধন করা সম্ভব। তবে আমার চিন্তায় মহাকাশ সংক্রান্ত গবেষণা ক্ষেত্রটি অপার সম্ভাবনাময়। আগামী যুগে এই গবেষণা মানুষের জীবনকে বহুগুণে প্রভাবিত করতে পারে। আমি সেই প্রভাবশালী ক্ষেত্রের একজন কান্ডারী হতে চাই মাত্র। 

বিজ্ঞানী সমাজে অবক্ষয়:

বিজ্ঞান আধুনিক সভ্যতার অগ্রগতির প্রধান চালিকাশক্তি হলেও একথা ভুললে চলবে না যে বিজ্ঞান হল বিশেষ জ্ঞান যা একান্তই মনুষ্যজাতির মস্তিষ্কপ্রসূত। সেই মনুষ্যজাতির মস্তিষ্ককে যদি কোন অন্ধকার আচ্ছাদিত করে, তাহলে সেই আচ্ছাদনের আড়ালে আঁধার নেমে আসে বৈজ্ঞানিক গবেষণাতেও। বর্তমান যুগে অস্থির মনন আর অবক্ষয়িত সমাজের বুকে স্বয়ং বিজ্ঞানীদের মধ্যেই বহুক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক মনুষ্যত্বের এক সংকট দেখা দিচ্ছে।

রিপুর বসে অনেক সময়ই বিজ্ঞানীরা হারিয়ে ফেলেছেন তাদের কাঙ্ক্ষিত সংযম; ফলে স্বাভাবিকভাবেই বিজ্ঞানের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ব্যাপক ধ্বংসাত্মক শক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে সংকীর্ণ স্বার্থ চরিতার্থ করতে। তাই আমি জীবনে একজন সফল এবং সার্থক বৈজ্ঞানিক হয়ে ওঠার পাশাপাশি নজর দেব নিজের মনুষ্যত্ব এবং আত্মসম্ভ্রমকে বজায় রাখার দিকে। সমসাময়িক বিশ্বের অবক্ষয় যাতে আমাকে গ্রাস না করতে পারে, সেদিকে সচেতন দৃষ্টি রাখব।

উপসংহার:

 বিজ্ঞান যদি সাধনা হয়, তাহলে আমার জীবনে একজন সত্যিকারের উপাসক হতে চাই। আমার জীবনে স্থির করা এই লক্ষ্যমাত্রায় উপনীত হয়ে আমরা শুরু করব বিজ্ঞানী হিসেবে আমার সেই পথ চলা, যে পথের আদর্শ হবে স্যার আব্দুল কালামের মতন ঋষিসম বিজ্ঞানীর জীবন। সেই পথে আমি আমার জীবনের সবটুকু দিয়ে আত্মনিয়োগ করব বিজ্ঞানের সেবায়; বিজ্ঞানের সেবাই হবে আমার মানবসেবা।


একজন শিক্ষার্থীর জীবনে বিজ্ঞানী হয়ে ওঠার লক্ষ্য সম্পর্কে যেকটি দিকে আলোকপাত করা প্রয়োজন, তার প্রত্যেকটিকে আমরা যথাযথভাবে আলোচনার চেষ্টা করেছি। আশা করি ‘আমার জীবনের লক্ষ্য বিজ্ঞানী হওয়া’- শীর্ষক প্রবন্ধটি আপনার ভালো লেগেছে। এই প্রতিবেদন সম্পর্কে আপনাদের মতামত কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানান।

আপনাদের মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চেষ্টা করব আপনাদের মতামত অনুযায়ী আমাদের লেখনীকে আরও উন্নত করে তোলার। তাছাড়া যদি এমনই অন্য কোন রচনা পড়তে চান সে বিষয়েও আমাদের অবগত করুন। আমরা অতি সত্বর সেই রচনাটি আপনার কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করব। ধন্যবাদ।। 

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন