আমার প্রিয় খেলা ফুটবল প্রবন্ধ রচনা [PDF]

পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষেরই কোন কোন না কোন একটি প্রিয় খেলা থাকে। ফুটবল হলো পৃথিবীর অসংখ্য মানুষের কাছে তেমনই একটি প্রিয় খেলা। ফুটবল খেলা বিশ্ব ক্রীড়া জগতের মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় একটি আন্তর্জাতিক খেলা। পৃথিবীজুড়ে কোটি কোটি মানুষ নিয়মিত ফুটবল খেলার সঙ্গে যুক্ত থাকেন। সেই ফুটবল খেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিকের উপর আলোকপাত করার অভিপ্রায় নিয়েই আমাদের আজকের প্রবন্ধ ‘আমার প্রিয় খেলা ফুটবল’ এর উপস্থাপনা।

আমার প্রিয় খেলা ফুটবল বৈশিষ্ট্য চিত্র

ভূমিকা:

সভ্যতার শুরু থেকে মানুষ শরীরচর্চা এবং অবসর বিনোদনের নিমিত্ত প্রতিযোগিতামূলক কিছু শারীরিক কসরত আবিষ্কার করেছিল। এই প্রকার কসরতগুলি খেলা নামে পরিচিত। প্রতিটি মানুষ ছোটবেলা থেকে সাধারণত কোনো না কোনো খেলাধুলার সঙ্গে যুক্ত থাকে। কেউ একটি, কেউ বা একাধিক। এইসকল বিভিন্ন প্রকার খেলাধুলার মধ্যে কোন কোন টি মানুষের কাছে সবচেয়ে প্রিয় হয়ে দাঁড়ায়। অন্যান্য বন্ধু-বান্ধবের মতন আমারও ছেলেবেলা থেকে একটি নির্দিষ্ট খেলার প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয়েছে।

সেটি হল ফুটবল। ফুটবল এমন একটি খেলা যা মানুষকে ৯০ মিনিটের জন্য আনন্দ ও উত্তেজনায় মাতোয়ারা করে রাখে। আমি ছোটবেলা থেকেই স্কুলে নিয়মিত ফুটবল খেলার সঙ্গে যুক্ত থেকেছি। তাই কাদা মাঠের মধ্যে পায়ে যখন চামড়ার বলটি এসে লাগে তখন বাইরের সমস্ত কিছু ভুলে আমি মেতে উঠি ফুটবলটি নিয়ে গোলপোস্টের কাছাকাছি পৌঁছানোর উন্মাদনায়।

কেন ফুটবল:

আমার প্রিয় খেলা ফুটবল সম্পর্কে লেখার পূর্বে ফুটবল খেলা কেন আমার এত প্রিয় সে সম্বন্ধে কিছু কথা বলা প্রয়োজন। আমার কাছে ফুটবল কোন সাধারণ খেলা নয়, বরং ফুটবল হল আবেগ। এই খেলার মধ্যে দিয়ে একাধারে যেমন শরীরের গঠন হয়, তেমনি মনের বিকাশ ঘটে। দীর্ঘ ৯০ মিনিট ধরে শারীরিক কসরতের ফলে শরীরের সকল জড়তা দূর হয়ে মানুষ সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে পারে। এবং আমরা সবাই জানি যে সুস্বাস্থ্য একটি সুন্দর মনের বার্তাবাহক।

অন্যদিকে ফুটবল খেলায় একটি দলের ১১ জন খেলোয়াড়ের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়ার যে সম্পর্ক তৈরি হয়, তা সমাজের বন্ধনকেই আদপে সুদৃঢ় করে। তাছাড়া ফুটবল খেলায় দুটি পরস্পর বিরোধী দলের মধ্যে যে বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতার উদ্ভব ঘটে তা মানুষকে সমাজে পারস্পারিক সহাবস্থানের নীতি শিক্ষা দেয়। এছাড়া ফুটবল খেলা ৯০ মিনিট জুড়ে খেলোয়াড় তথা দর্শককুলকে আনন্দ উন্মাদনায় মাতিয়ে রাখে। 

ফুটবল খেলার ইতিহাস:

ফুটবলের ইতিহাস অনুসন্ধান করতে গেলে আমাদের ফিরে যেতে হবে প্রায় ৩৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে। সেই প্রাচীন যুগে গ্রিক এবং রোমান সৈন্যদের মধ্যে সর্বপ্রথম ফুটবল জাতীয় খেলার উদ্ভব ঘটেছিল। প্রকৃতপক্ষে গ্রিক ও রোমান সৈন্যরা বল দিয়ে পা ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের খেলা খেলত। সেই খেলা গুলির কয়েকটির মধ্যে বর্তমান ফুটবলের বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। তবে আন্তর্জাতিক ফুটবল ফেডারেশন বা ফিফার তথ্য অনুযায়ী আধুনিক ফুটবল খেলার উদ্ভব হয়েছে কুজু খেলা থেকে। কুজু শব্দের অর্থ হলো বলে লাথি মারা। খৃষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে থেকে এই খেলাটি ধীরে ধীরে সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।

চীন জাপান এবং কোরিয়ান মতন দেশগুলিতে কুজু খেলা নতুন নতুন পদ্ধতিতে বিকাশ লাভ করে। তবে আধুনিক ফুটবল খেলার সূচনা হয় মোটামুটি পঞ্চদশ শতাব্দীতে। তারপর এই খেলায় আস্তে আস্তে নিয়মের বিবর্তন ঘটতে থাকে। অবশেষে বিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগ নাগাদ ফুটবল খেলা বর্তমান রুমে পৌঁছয়। 

ফুটবল খেলার উপাদান:

অন্যান্য সমস্ত খেলার মতন আমার প্রিয় এই ফুটবল খেলাটির জন্য নির্দিষ্ট কয়েকটি উপাদান প্রয়োজন হয়। তবে ফুটবল খেলার উপাদানের সংখ্যা পৃথিবীর অন্যান্য আধুনিক খেলার উপাদানগুলোর তুলনায় প্রায় নগন্য বললেই চলে। সে কারণেই পৃথিবীর কোন দেশ যত দরিদ্রই হোক না কেন ফুটবল খেলাতে অংশগ্রহণ করতে তাদের কোনো আর্থিক বাধার সম্মুখীন হতে হয় না। ফুটবল খেলার সাধারণ উপাদান বলতে প্রথমেই উল্লেখ করতে হয় বলটির কথা। এই বলটি ফুটবলের সাধারণ ঐতিহ্য অনুসারে চামড়া দিয়ে তৈরি হয়ে থাকে। তাছাড়া এই বলটিকে ব্যতিক্রমহীন ভাবে  ২২ সেন্টিমিটার ব্যাস বিশিষ্ট হতে হয়।

শুধুমাত্র এই বল ছাড়া ফুটবলের আরেকটি অতি প্রয়োজনীয় উপাদান হলো ফুটবল মাঠ। ফুটবলের মাঠ বিভিন্ন আকারবিশিষ্ট হতে পারে। তবে অতি অবশ্যই মাঠটিকে আয়তাকার হতে হয়। তাছাড়া ফুটবলের আরেকটি অবশ্য প্রয়োজনীয় উপাদান হলো দুটি গোল পোস্ট। আন্তর্জাতিক ফুটবল ছাড়া পৃথিবীর নানা জায়গায় স্থানীয় নিয়মভেদে এই গোলপোস্টের আকারও ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। এছাড়া বস্তুগত উপাদান বাদ দিলে ফুটবল খেলার জন্য প্রয়োজন দুটি দল এবং প্রতিটি দলে ১১ জন করে খেলোয়াড়। একটি ফুটবল ম্যাচে একজন রেফারি এবং দুজন লাইন্সম্যান থাকা আবশ্যক। এগুলি ছাড়া আধুনিক ফুটবলে খেলার জন্য বুট, নির্দিষ্ট প্রকারের পোশাক ইত্যাদি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

ফুটবলের সাধারণ নিয়ম নীতি:

পৃথিবীর অন্যান্য সকল খেলার মত ফুটবল খেলা নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম নীতি অনুসরণ করে অনুষ্ঠিত হয়। আন্তর্জাতিক ফুটবলের পক্ষ থেকে ফুটবলের নিয়ম সংক্রান্ত সকল সিদ্ধান্ত বর্তমানে নিয়ে থাকে ফিফা বা আন্তর্জাতিক ফুটবল ফেডারেশন। যদিও ইতিহাসের বিবর্তনের পর্যায়ে ফুটবল খেলার কিছু সাধারন নিয়ম-নীতি গড়ে উঠেছে। এই নিয়ম অনুযায়ী দুটি দলের মধ্যে আয়োজিত হওয়া একটি ফুটবল ম্যাচে প্রতিটি দলে ১০ জন খেলোয়াড় এবং একজন গোলরক্ষক থাকতে হয়। সমগ্র ম্যাচটি পরিচালনা করে থাকেন ফুটবলের ব্যাপারে অভিজ্ঞ একজন রেফারি। ম্যাচ চলাকালীন সেই রেফারির সকল সিদ্ধান্তকেই চূড়ান্ত বলে গণ্য করতে হয়।

প্রতিটি দলের খেলোয়াড়দের চূড়ান্ত লক্ষ্য হয়ে থাকে পায়ের সাহায্যে বলটিকে বিপক্ষ দলের গোলে প্রবেশ করানো। গোলপোস্টের দিকে ধেয়ে আসা বলটি রক্ষা করার জন্য প্রতিটি দলের পক্ষ থেকে গোলপোস্টে দাঁড়িয়ে থাকেন একজন গোলরক্ষক। ৯০ মিনিট খেলার শেষে যে দলের গোল সংখ্যা বেশি হয় সেই দল বিজয়ী বলে ঘোষিত হয়। একমাত্র গোলরক্ষকই গোলপোস্টের সামনে তৈরি হওয়া পেনাল্টি বক্সের ভিতরে বলটিকে হাত দিয়ে স্পর্শ করতে পারেন। খেলা চলাকালীন মাঠে উপস্থিত অন্য অন্য কোন খেলোয়ার বলকে হাত দিয়ে স্পর্শ করতে পারেন না। তাছাড়া ফুটবলের অন্যান্য সাধারণ নিয়ম নীতি ভঙ্গ করলে রেফারি শাস্তি হিসেবে ফাউল, হলুদ কার্ড কিংবা লাল কার্ড দেখাতে পারেন। 

বর্তমান যুগ ও বিশ্ব ফুটবল:

বর্তমান যুগে আন্তর্জাতিক ফুটবল বিশেষভাবে বিকাশ লাভ করেছে। ফিফার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে সমগ্র পৃথিবীতে ২০০ টি দেশের প্রায় ২৪ কোটিরও বেশি মানুষ নিয়মিত ফুটবল খেলার সঙ্গে আছেন। আন্তর্জাতিকভাবে ফিফা বর্তমানে আন্তর্জাতিক ফুটবলের সকল বিষয়কে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। প্রতি চার বছর অন্তর একবার কোন একটি নির্দিষ্ট দেশে সেরা ৩২ টি দেশকে নিয়ে ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজিত হয়।

এটি ছাড়াও ফুটবলের বিভিন্ন দেশীয়, মহাদেশীয় এবং আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট প্রতিবছর নির্দিষ্ট সময়ে আয়োজন করা হয়ে থাকে। এই সকল টুর্নামেন্ট গুলির মধ্যে স্প্যানিশ লিগ, ইউরো কাপ, বুন্দেসলিগা, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য এবং জনপ্রিয়। বর্তমানে ফিফার নির্ধারিত নিয়ম নীতি অনুযায়ী আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলায় ভুল ত্রুটি ও বিভ্রান্তি দূর করার জন্য ব্যাপকভাবে প্রযুক্তির ব্যবহারের প্রচলন ঘটেছে। 

আমি ও ফুটবল:

ফুটবল আমার প্রাণের প্রিয় খেলা। আমি একদিকে যেমন আমার স্কুলের টিমে নিয়মিত ফুটবল খেলে থাকি, তেমনি আমাদের স্থানীয় একটি ক্লাবের একজন প্রশিক্ষকের অধীনে নিয়মিত ফুটবল খেলা অভ্যাস করে থাকি। আমার যখন চার বছর বয়স তখন থেকে আমি এই ক্লাবের সাথে যুক্ত আছি। আমার দেশ আন্তর্জাতিক ফুটবলের মানচিত্রে উল্লেখযোগ্য স্থান লাভ না করলেও, ফুটবলকে আমি মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসি। আমার ফুটবল খেলার আদর্শ হলেন আর্জেন্টিনার খেলোয়াড় লিওনেল মেসি। যদিও আমি আন্তর্জাতিকভাবে ব্রাজিল টিমের সমর্থক। অন্যদিকে ক্লাব ফুটবলের ক্ষেত্রে বার্সেলোনা হল আমার প্রিয় ক্লাব। 

উপসংহার:

আমার কাছে পড়াশোনার পর ফুটবল খেলা হল জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমি আমার ভবিষ্যতে পেশায় একজন চিকিৎসক হতে চাওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত ফুটবল খেলাও চালিয়ে যেতে চাই। ফুটবল একদিকে যেমন আমার শরীর গঠনে সাহায্য করে অন্যদিকে মনকে সতেজ রাখে। মানবজীবনে ফুটবল খেলার এই গুরুত্ব উপলব্ধি করেই বোধহয় স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন- “গীতা পাঠ অপেক্ষা ফুটবল খেলিলে তোমরা স্বর্গের আরও নিকটবর্তী হইবে।”


উপরিউক্ত ‘আমার প্রিয় খেলা ফুটবল’ শীর্ষক প্রবন্ধটিতে আমরা ফুটবল খেলা সংক্রান্ত প্রায় সবকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে আলোচনার চেষ্টা করেছি। তবে পরীক্ষার প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে প্রবন্ধের শব্দসীমাকেও যথাযথ রাখার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা করা হয়েছে। আশাকরি আমাদের এই প্রয়াস আপনাদের ভাল লেগেছে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী তা যথাযথভাবে আপনাদের সহায়তা করতে পারবে।

উপরিউক্ত প্রতিবেদনটি সম্পর্কে আপনাদের মতামত কমেন্টের মাধ্যমে বিশদে আমাদের জানান। আপনাদের মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চেষ্টা করব আপনাদের মতামত অনুযায়ী আমাদের লেখনীকে আরও উন্নত করে তোলার। তাছাড়া যদি এমনই অন্য কোন রচনা পড়তে চান সে বিষয়েও আমাদের অবগত করুন। আমরা অতি সত্বর সেই রচনাটি আপনার কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করব। ধন্যবাদ।

Print Friendly, PDF & Email

“আমার প্রিয় খেলা ফুটবল প্রবন্ধ রচনা [PDF]”-এ 1-টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন